পরিবেশের মুল দূষণকারী হচ্ছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাদের যে নিদারুন অবহেলা সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। গাজীপুরের যে পানি সেটা বিষাক্ত হয়ে গেছে। এই জনপদ একটা বিষাক্ত জনপদে পরিণত হয়ে গেছে। শিল্পায়নের যে প্রাইস বা মূল্য এটা স্থানীয় লোকেরা এখন দিচ্ছে। একসময় সারা বাংলাদেশই দিবে। বাংলাদেশের আয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এইখান থেকে আসে।

সোমবার বিকেলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় মেঘনা নীট কম্পোজিট লিমিটেডের ইটিপি (পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া) পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী ব্রিজের লবলং খালে গৃহস্থালী ও বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণের চিত্র ঘুরে দেখেন।

তিনি বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে কখনোই বলবনা ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে দেওয়া হোক। আমরা শুধু এটাই বলবো যে ম্যানেজমেন্ট চেঞ্জ করে দেন। অথবা আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে তাদের গ্রেফতার করতে বলব। দোষ হচ্ছে যারা এটা পরিচালনা করে ম্যানেজাররা। তাদের প্রতি আহবান জানাতে চাই আগামী প্রজন্মের কথা মনে রেখে আপনারা দুষণমুক্ত শিল্প গড়ে তুলুন।

শ্রীপুরের পৌরসভার মেয়র মহোদয়ের প্রতি আমাদের সতর্ককতা। যদি দেখি তারা পরিবেশ আইন ভঙ্গ করছে তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেব। বিশাল কারখানার সামান্য জরিমানা দিয়ে ক্ষতিপূরণ হবে না। আইন খতিয়ে দেখে যারা পরিবেশের ক্ষতি করছে তাদের জেলে নিতে হবে। লবনদহ সাগরকে নদী বানানো হয়েছে, সাগরকে বলবেন নদী, এরপর নদীকে বলবেন খাল, খালকে বলবেন ড্রেন, ড্রেনকে বলবেন কাভার্ড ড্রেন।

তিনি বলেন, টিটু নামে একজন খালে ময়লার ফেলার মাধ্যমে ব্যবসা করছে। আরও একজন আছে। প্রশাসনকে বলব তাদের গ্রেফতার করার জন্য। আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনকে দুই মাস সময় দিলাম পরিবেশ দুষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাব্যস্থা নেওয়ার জন্য।

মেঘনা নীট কম্পোজিট লিমিটেড আকষ্মিক পরিদর্শনে গিয়ে ইটিপির অংশ বিশেষ বন্ধ পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, এটা বায়োলজিক্যাল ইটিপি। আমরা এখানে এসে তাদের পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যানটা (পিএইচ) বন্ধ পেয়েছি। তারা (কারখানা কর্তৃপক্ষ) বলেছে পানির লেবেলটা বাড়লে তারা প্ল্যানটা চালু করে। এটা অনেক বেশি টেকনিক্যাল বিষয়। এখন আলোচনা করা যাবে না।

পরিদর্শণকালে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়াসহ কমিশনের এবং স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা, নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।