গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) চার বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গ্যাসের বেলুন বিষ্ফোরণে দগ্ধ কলকাতার কমেডি শো মিরাক্কেলের কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনি শঙ্কামুক্ত নন, তার শ্বাসনালী ও এক কান পুড়ে গেছে। তাকে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শনিবার সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন। বিষ্ফোরণের এ ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে শনিবার জিএমপি কমিশনার হাসপাতালে গিয়ে দগ্ধদের খোঁজ খবর নেন এবং তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

জাতীয় বার্ণ অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন জানান, আগুনে আবু হেনা রনির (৩০) শ্বাসনালী ও এক কানসহ শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার সম্পর্কে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত নন। চিকিৎসকরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি আরও জানান, একই ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানার কনস্টেবল জিল্লুর রহমানের (৩২) শরীরের ১৯ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তারও শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তাকেও আইসিইউ’তে রাখা হয়েছে।

জিএমপি’র সহকারি কমিশনার (মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন জানান, বেলুন বিস্ফোরণে ঘটনা তদন্তে শুক্রবার রাতেই চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জিএমপি কমিশনার। এতে জিএমপি’র উপ-কমিশনার (উত্তর) আবু তোরাব শামসুর রহমানকে প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন এডিসি (উত্তর) রেদোয়ান আহমেদ, এসি (প্রসিকিউশন) ফাহিম আসজাদ ও সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনি ছাড়াও একই ঘটনায় পুলিশের আরও চারজন কনস্টেবল দগ্ধ হয়েছেন। এ চারজনের মধ্যে মোশারফ হোসেন গাজীপুর জেলা পুলিশের সদস্য। অপর দগ্ধ রুবেল মিয়া, জিল্লুর রহমান ও ইমরান হোসেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্য। তাদেরকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবু হেনা রনি ও জিল্লুর রহমানকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।

এদিকে মিরাক্কেল অভিনেতা আবু হেনা রনিসহ আহত অন্যান্যদের খোঁজ খবর নিতে শনিবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ছুটে যান জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। তিনি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ও চিকিৎসক ডাঃ সামন্ত লাল সেনসহ ইনস্টিটিউটের অন্যান্য চিকিৎসকবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজখবর নেন এবং সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন। এসময় তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন কৌতুক আবু হেনা রনি ও পুলিশ কনস্টেবল জিল্লুর রহমানের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তিনি অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার জন্য আহতদের স্বজনদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং সুস্থ্যতার জন্য যা যা করণীয় সবকিছুই করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।

জিএমপি’র সহকারি কমিশনার (মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন জানান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার গাজীপুর পুলিশ লাইনস মাঠে নাগরিক সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনুষ্ঠান শুরুর আগে সন্ধ্যা পৌণে ৬টার দিকে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দকে উদ্বোধনী মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রধান অতিথির হাতে বেশ কয়েকটির সমন্বয়ে এক গুচ্ছ বেলুন দেওয়া হয়। কিন্তু বার বার চেষ্টা করলেও বেলুনগুলো উড়ছিলনা। পরে বেলুনগুলো মঞ্চের পিছনে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর পায়রা উড়িয়ে স্বরাষ্ট্রামন্ত্রীসহ অন্য অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানের মুল মঞ্চে চলে যান। তারা মূল মঞ্চে চলে যাওয়ার কিছু সময় পর বেলুন বিক্রেতা নিজেই আগুন দিয়ে ফেস্টুনের সুতা বিছিন্ন করে বেলুনগুলো উড়ানোর চেষ্টার করার সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরন ঘটে। এতে পাশে বসে থাকা কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনিসহ ৫ জন আগুনে দগ্ধ হয়ে মাটিতে লুটে পড়েন। এসময় আশপাশের পুলিশ সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে গায়ে পানি ঢেলে আগুন নেভান। পরে আহতদেরকে গাড়িতে করে দ্রুত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।