আজ ২১ অক্টোবর ২০২২, শুক্রবার, বিকাল ৩.৩০ এ ঢাকার বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভের অংশ হিসেবে মিরপুরে (সনি সিনেমা হলের সামনে) গণতন্ত্র মঞ্চ কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের উদ্যোগে “সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হোন”, “দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ঠেকাও” এবং “রাজনৈতিক সভা সমাবেশে বাধা, হামলা-মামলা, দমন-পীড়ন, গুলি-হত্যা বন্ধের” আহবান জানিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গণসংহতি আন্দোলনের মিরপুর জোনের আহবায়ক মাহবুব রতনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ঢাকা মহানগর পশ্চিমের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাইনুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত মিয়া মশিউজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু, নাগরিক ঐক্য ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আনিসুর রহমান খসরু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরের অন্যতম নেতা মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ঢাকা মহানগরের অন্যতম নেতা তমাল তালুকদার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা শাহাবুদ্দিন কবিরাজ লিটন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা ভোট ডাকাত, চোর, লুটেরা; এরা জনগণের সাথে প্রতারণা করে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমরা (গণতন্ত্র মঞ্চ) এই গণবিরোধী সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিতে চাই। খেতে না পারা মানুষ প্রতিদিন সরকারকে গালি দিচ্ছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রাখবো। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করবো। আমরা ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রের খোলনলচে পাল্টে ফেলবো।

সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ভোটডাকাতির সরকার লুটপাট, ডলার পাচার, রিজার্ভ চুরি করে বাংলাদেশকের দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই মানুষের জীবন নাকাল, সেই নাকাল জীবনকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার। কারণ সরকার নিজেই সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। গণ আন্দোলনের ভয়ে নার্ভাস সরকার গত দুই মাসে ৫ জন নাগরিককে মিছিল সমাবেশে গুলি করে হত্যা করেছে। তবুও মানুষের ঢল রুখতে না পেরে আজ তার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমাবেশ পণ্ড করতে পরিবহন বন্ধ কর অঘোষিত হরতাল করছে এই সরকার। এটা আওয়ামীলীগের পরাজয় ছাড়া আর কিছু নয়। এখ এই আমরা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচনা করতে চাই। সংবিধান সংস্কার, ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা, শাসনতান্ত্রিক সংস্কারসহ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা ইতোমধ্যে ৭ দফা উত্থাপন করেছি। গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে না আসলে ভারত বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থেকে এবং হামলা-মামলা কিংবা গুলি করে শেষ রক্ষা হবে না, গদি রক্ষা হবে না। আমরা সরকার পতনের লড়াইয়ের সূচনা করেছি। রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগই পরিত্যাক্ত হচ্ছে।’

নুরুল হক নূর বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম দিগুণ হয়েছে, সরকার কোনো ভ্রুক্ষেপ করছে না। কৃষি-উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, সার, জ্বালানির দাম বাড়ায় কৃষক ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, খাদ্যঘাটতি প্রকট হবে। এই সরকার গুলি করে, পারলে কামান-ট্যাংক দিয়ে জনবিক্ষোভকে বা বিরোধী মতকে দমন করার চেষ্টা করছে। কামান-ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়েও যদি দেশকে রক্ষা করা না যায় তাহলে দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব বিলীন হয়ে যাবে।’

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দেশের মানুষ আজ বাঁচবে কি বাঁচবে না এমন একটি লড়াই আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে। এই দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে এই কুখ্যাত স্বৈরাচারী, কর্তৃত্ববাদী সরকারকে অবিলম্বে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে।

শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলন একটি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। সরকার জনগণকে জিম্মি করে গ্যাস তেলের দাম বাড়িয়ে এখন গ্যাস-পানির দাম বাড়ানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। দ্রব্যমূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। জনগণকে চুষে খেয়ে এই সরকার টিকে আছে। গণতন্ত্র মঞ্চ এই সাত দল; এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। আমাদের সবাইকে এদের বিরুদ্ধে একসাথে লড়তে হবে।’

আকবর খান বলেন, ‘এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে মানুষ তার জানমাল নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে না। এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে মানুষ ভোট দিতে পারবে না, ভোটকেন্দ্রেও যেতে পারবে না। এই সরকারের অধীনে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতও নাই।’

ইমরান ইমন বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার জনগণের সাথে মিথ্যাচার করে এর জন্য তারা বিভিন্ন বিষয়কে সামনে আনে। আজকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য তারা সামনে আনছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কথা; অথচ কিছুদিন আগে একটি দৈনিক পত্রিকা সুষ্ঠুভাবে হিসেব দেখিয়েছে এ-সংকট তৈরি হয়েছে তাদের ডলার পাচারের জন্য, রিজার্ভ চুরির জন্য।’

সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের নেতা মাহবুব রতনা বলেন, আমাদের লক্ষ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই; দেশে যাতে আইনের শাসন থাকে সে-রকম একটি সমাজ নির্মাণ করতে চাই। তখনকার রাষ্ট্র তখনকার সমাজ এই লুটেরা সরকারের বিচার করবে। এই সরকারকে উচ্ছেদ করা ছাড়া সেই বিনির্মাণ সম্ভব নয়।