বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, ‘আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে পণ্যের দাম বেশি। আমাদের আমলে ডিমের হালি ছিল ১১টাকা। অথচ এখন একটি ডিম ১১টাকার বেশি। মুরগিতে লাভ হচ্ছে না। কারণ গবেষণা নেই। বাজেট স্বল্পতা। অনেক সময় বাজেটে এই মন্ত্রণালয়ের নামও বলা হয় না। বলে যে কৃষি উপকরণ। আমরা ইলিশ সংরক্ষণ তথা মৎস্য খাতের উন্নয়নের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ দিয়েছিলাম। আমাদেরকে আরও বেশি গবেষণা করতে হবে। উৎপাদন ও সরবরাহ সমন্বয় করতে হবে।’

আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে আবদুল্লাহ আল নোমান এ কথা বলেন। ‘প্রাণিখাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি: বিপর্যস্ত পোল্ট্রি ও ডেইরি খামার’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব), ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা। ঢাকা মহানগর উত্তর এ্যাব’র সভাপতি কৃষিবিদ শফিউল আলম দিদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহসানুল হক। এ্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সানোয়ার আলমের পরিচালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, এ্যাব’র কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন, সদস্য সচিব ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, কৃষিবিদ বিএম আলমগীর কবির, কৃষিবিদ ইয়ার মাহমুদ, কৃষিবিদ ডা. শাহাদাত হোসেন পারভেজ, কৃষিবিদ ডা. আবদুর রহমান নূরী, ডা. মোজাম্মেল হক সোহেল, আবু হেনা মোস্তফা কামাল পান্না, কৃষিবিদ ড. আকিকুল ইসলাম আকিক, কৃষিবিদ একেএম আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আসাবুল হক আশা, কৃষিবিদ শেখ মো. শফি শাওন, কৃষিবিদ নূরুন্নবী ভুইয়া শ্যামল, কৃষিবিদ ড. শফিকুল ইসলাম শফিক, কৃষিবিদ খন্দকার আসাদুজ্জামান কিটোন প্রমুখ।

আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আজকে ক্ষমতাসীন সরকারের ব্যর্থতার কারণেই মানুষ জেগে উঠেছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। দেশে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। সে কারণেই মানুষ জেগে উঠেছে। আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেব না। তারা দিনের ভোট রাতে করেছে। নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। ইনশাআল্লাহ আমরা আন্দোলনে জয়ী হব। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হবে। সেখানে সরকারের পরিবর্তন ঘটবে সেটা আমরা বলতে পারি না। কিন্তু দেশের মানুষ সরকারের পরিবর্তন ঘটাবে। তাদের প্রত্যাশা বিএনপির প্রতি বেশি। ইনশাআল্লাহ সরকারের পতন হবে। তাদের পতন বেশি দূরে নয়।’

আব্দুল্লাহ আল নোমান আরও বলেন, ‘সরকার যাবে আসবে। কিন্তু দেশের উন্নয়নের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। রপ্তানিমুখী উৎপাদন বাড়াতে হবে। তা না হলে সংকটের সমাধান হবে না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে সংস্কার ও আধুনিক করা হয়েছে। ধান চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে সিরাজগঞ্জে বিদ্যুৎ প্রকল্প করেছেন। যে কারণে উত্তরবঙ্গের ৯০ শতাংশ এলাকায় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি ট্যাক্স মওকুফ করেছিলেন। কৃষির সেচের জন্য খাল খনন করেছিলেন। ফলে খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছিল।’

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সময় খাদ্য উদ্বৃত্ত ছিল। সেগুলো জনসংখ্যার অনুপাতে বেশি ছিল। আওয়ামী লীগ যা বলে তা সঠিক নয়। তাদের আমলে ১২০ লাখ টন খাদ্য রপ্তানি করেছিল। আমরা খালেদা জিয়ার শাসনামলে এসে তো আবার খাদ্য উদ্বৃত্ত রেখেছিলাম। ফিশারিজ ও পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল।’

বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘শহীদ জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। আজকের খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেছে রাজনৈতিক উদ্দেশে। কারণ তিনি বাইরে থাকলে আমাদের আন্দোলন আরও জোরদার হতো। কিন্তু আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছি। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। আজ মানুষ জেগেছে। তাদেরকে ঘুমাতে দেওয়া যায় না। তাদেরকে আরও উজ্জীবিত করতে হবে। আমরা বিজয়ের মুখোমুখি। ইনশাআল্লাহ আমাদের জয় হবে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘লাইভস্টক সেক্টরের দিকে সরকারই ভালোভাবে নজর দেয় না। কিন্তু বিএনপির আমলে অনেক কাজ করা হয়েছে এই খাতে। সিলেটে ও চট্টগ্রামে ভেটেরিনারি কলেজ করা হয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। কৃষিবিদদেরকে আরও ভালোভাবে এগিয়ে যেতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।’

ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি পোল্ট্রি ও ফিশারিজ শিল্পের বিকাশে ভুমিকা রেখেছিলেন। খাল কেটে কৃষিতে সেচের ব্যবস্থা করেছিলেন। তার আমলে বাংলাদেশ চাল রফতানি করেছিল। যা বর্তমানে অব্যাহত রেখেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অথচ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অপরিকল্পিত মেগা প্রজেক্টের কারণে দেশের অর্থনীতি আজ ঝুঁকিপূর্ণ। অসংখ্য টাকা দেশ থেকে পাচার হওয়ার কারণে দেশের ব্যাংকিং খাত আরও ঝুঁকিতে। এলসি খুলতে পারছে না। আজকে পেশাজীবীদের আরও বেশি সংগঠিত হয়ে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কোনো লেজুড়বৃত্তি না করে নিজেদের মর্যাদা রক্ষায় আসুন যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলি।’