যেখানেই মানবিক বিপর্যয় ঘটে, সেখানেই আশার আলো হয়ে হাজির চট্টগ্রামের মানবিক তরুণ ফারাজ করিম চৌধুরী। সম্প্রতি, রাজধানী ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে দোকান পুড়ে যাওয়া ব্যবসায়িদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

১ কোটি ৫০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করেছেন। এরমধ্যে অর্ধেক পুড়ে যাওয়া পরিত্যক্ত কাপড় কিনেছেন প্রায় এক কোটি টাকার। বাকি ৫০ লাখ টাকা নগদে নিঃস্ব ব্যবসায়িদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এতে জনপ্রতি কমপক্ষে ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকাও অনেক ব্যবসায়ির হাতে তুলে দিয়েছেন।

তথ্য বলছে, করোনার কঠিন সময়ে, বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ও সিলেট-কুড়িগ্রামের ভয়াবহ বন্যাসহ দেশের মানুষের ক্রান্তিলগ্নে জীবন বাজি রেখে ছুটে চলা এক স্বপ্নবাজ যুবকের নাম ফারাজ করিম চৌধুরী।

ইতোপূর্বে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি ফিলিস্তিনের নিরীহ মুসলমানদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ার অসহায় মানুষের পাশেও ছিলেন। শুধু কী তাই। দেশের ভেতরে বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে স্ব উদ্যোগেই হাজির ছিলেন সব সময়।

এ কারণে স্যোশাল মিডিয়া জুড়ে দেশের এই আলোচিত তরুণ রাজনীতিবিদ ফারাজ করিম চৌধুরীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ দেশের নেটিজনেরা ও সাধারণ মানুষজন। সকলের মুখে মুখে তাঁর নাম শোভা পাচ্ছে।

জানা যায়, ফারাজ করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান।
নিজের গ্রাম কিম্বা আমাদের চারপাশের নানা অনিয়মের বিপরীতে অবিরাম ছুটে চলাই এই তরুণের কাজ। একের পর এক ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরে গোটা দেশজুড়ে অর্জন করেছেন তুমুল জনপ্রিয়তা।

২০১৩ সালে কিংস কলেজ লন্ডন থেকে আন্ডার গ্রাজুয়েট শেষ করে ২০১৫ সালে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার থেকে উচ্চশিক্ষা (মাস্টার্স) অর্জন করে দেশে আসেন এ তরুণ। তখন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে বেশ পরিচিতি পান। এরপর নেমে পড়েন বাস্তবায়নে। তার এসব কর্মকাণ্ডে অংশ নেয় ‘সেন্ট্রাল বয়েজ অব রাউজান’ নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন।

বাইরের দেশ থেকে উচ্চডিগ্রি সম্পন্ন করার পর দেশের বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চপর্যায়ে চাকরির সুযোগ থাকলেও সে পথে পা বাড়াননি ফারাজ। বর্তমানে ক্লিন ইমেজের তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা পেলেও নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি।

জন্ম ঢাকায় হওয়ায় ফারাজের পড়াশোনার শুরুটাও ছিল সেখান থেকে। তবে শুরুর পরপরই চলে আসেন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নিজ বাড়িতে। প্রসিদ্ধ পরিবারের ছেলে হিসেবে সব সময় পেতেন বিশেষ সুযোগ-সুবিধা। যার কারণে তিনি তার বাবার পরিচয় আড়ালেই রাখতেন। পড়াশোনার ফাঁকে মাঝেমধ্যেই বাবার সাথে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতেন। দেখতেন দেশের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে নানা রকম প্রচলিত প্রথা। এসব দেখে খানিক বিরক্তও হতেন।

ফারাজ করিম বললেন, ‘আমাদের দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যখন কোনো বিশিষ্টজনকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়; তখন সেই আয়োজনে তাদের বড় বড় ছবি দিয়ে ব্যানার সাঁটিয়ে স্বাগত জানানো, ফুল দিয়ে বরণ করার ব্যাপারগুলো আমার বাবার সাথেও ঘটতো।’

এসব দেখে ফারাজ করিম বিরক্তও হতেন এবং এসবের পরিবর্তন কিভাবে আনা যায় তা নিয়ে চিন্তা করতেন। তিনি বলেন, ‘ছবি দিয়ে পোস্টার নয় বরং কাজের মাধ্যমে মানুষের মনের পোস্টার হয়ে থাকাটাই হলো আসল।’

ফারাজ করিম ছোটবেলা থেকেই মানবিক ছিলেন। একদিন নিজের অসংখ্য নতুন কাপড় বাসার ওয়ারড্রবে পড়ে থাকতে দেখে সেসব কাপড় নিয়ে ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে বিতরণ করে আসেন। এভাবেই ছোট থেকে দারিদ্র্যের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্ম হয়। ছেলের এসব মানবিক কার্যক্রম দেখে বাবাও মুগ্ধ হয়ে ফারাজ করিমকে এসব কাজে আর্থিক জোগান দিতেন।

এসব কার্যক্রমের প্রসঙ্গে ফারাজ করিম বলেন, ‘গত ৪ বছরে আমি অসংখ্য উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। দেশের মানুষ আমাকে দোয়া করলেও আমি চাই, আল্লাহর অনুগ্রহে আমার নিজের মতো করে কাজ করতে। আমার বাবাও আমাকে সব ভালো কাজগুলোর অংশীদারিত্বে থাকতেন, যার জন্য এসব সম্ভব হয়েছে।

ফারাজ করিমের স্বপ্ন, তিনি সবসময় মানুষের সেবায় কাজ করে যাবেন। নিজের এলাকা রাউজানকে নিয়ে তিনি অনেক স্বপ্ন দেখেন, আর সেখানে দেখতে চান নানা পরিবর্তন। এ যাত্রায় নেতৃত্ব দিতে হবে তরুণদের, আর তাতে রাউজান থেকে শুরু করে সমগ্র বাংলাদেশজুড়েই ছড়িয়ে যাবে পরিবর্তনের ছোঁয়া— এমনটাই প্রত্যাশা তাঁর

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি