গাজীপুরে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার নেতৃত্বে কারাগারের ভেতরে অপরাধী চক্র গড়ে এবং শিক্ষানবীশ আইনজীবী রুনা লায়লাকে (৩৮) মারধর ও নির্যাতনের ঘটনার জেরে ৬ কারারক্ষীকে তাৎক্ষণিক বদলী (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছে। সোমবার ওই কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ওবায়দুর রহমান বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কারাগার সূত্রে জানাগেছে, দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে গাজীপুরে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী ৬জনকে একযোগে বদলী করা হয়েছে। রবিবার কারা মহাপরিদর্শক এর পক্ষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্ণেল সুজাউর রহমান স্বাক্ষরিত তাদের বদলীর এক আদেশে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ এর নির্দেশ দেওয়া হয়।

কারাগার সূত্রে আরো জানা যায়, বিভিন্ন কারণে আলোচিত যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর গাজীপুরস্থিত কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। তিনি কারাগারের ভেতরেও অপরাধ কার্যক্রম শুরু করেন এবং গড়ে তোলেন অনুগত বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে বন্দী ও অন্য নারীদের কাছ থেকে তিনি টাকাপয়সা ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিতেন। তাদের ওপর চালাতেন অমানুষিক নির্যাতন। কয়েকজন কারারক্ষী ও নারী বন্দী তার এসব কাজে সহযোগিতা করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ওবায়দুর রহমান কারারক্ষীদের বদলীর ব্যাপারে বলেন, রবিবার রাত সাড়ে ৭ টার দিকে কারারক্ষীদের তাৎক্ষণিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) সংক্রান্ত আদেশের কপি হাতে পেয়েছি। তবে কি কারণে তাদেরকে বদলি করা হয়েছে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদেরকে জানানো হয়নি। আদেশে দ্রুত কার্যকর করার নির্দেশ থাকায় সোমবার সকালেই তারা রিলিজ নিয়ে নতুন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার ত্যাগ করেছেন। বদলীকৃতদের মধ্যে কারারক্ষী আলেয়া চৌধুরীকে লক্ষ্মীপুর, শাম্মী আক্তারকে সুনামগঞ্জ, মোছা. সোহেলা আক্তারকে ঝালকাঠি, সেলিনা আক্তারকে শেরপুর, ঝর্ণা আক্তারকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও লাকী আক্তারকে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ঢাকায় আদালতে নথি চুরির অভিযোগে কতোয়ালী থানায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার হন শিক্ষানবীশ নারী আইনজীবী রুনা লায়লা (৩৮)। গত ১৬ জুন তাকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯জুন তিনি যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার সহযোগীদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। এতে কয়েক কারারক্ষী অংশ নেন। এঘটনায় গত ২৫ জুন নির্যাতনের শিকার ওই নারী আইনজীবীর ভাই গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন এবং তাঁর বোনকে নির্যাতনের ঘটনার বিচার দাবি করেন। এই অভিযোগের মাধ্যমে শামীমা নূরের নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। ওই ঘটনার পর পাপিয়াকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়াও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মহিলা কারাগারের মেট্রন (মহিলা কারারক্ষীদের প্রধান) ফাতেমা আক্তারকে প্রত্যাহার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করে গঠিত তদন্ত কমিটি। পরবর্তীতে কারাগারের ছয়জন কারারক্ষীকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হলো।