রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রসাটম নতুন ধরণের ইউরেনিয়াম-প্লুটোনিয়াম মক্স ফুয়েল উদ্ভাবন করেছে। রাশিয়ায় রসাটমের অধীনস্থ একটি কারখানায় নতুন এই জ্বালানীর তিনটি এসেম্বলী তৈরি হয়েছে যার পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এবং খুব শীঘ্রই এগুলো বেলাইয়ার্স্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইঘ-৮০০ ফাস্ট নিউট্রন রিয়্যাক্টরে লোড করা হবে। নতুন ধরণের এই জ্বালানীটিতে এমেরিসিয়াম-২৪১ এবং নেপচুনিয়াম-২৩৭ এর মতো মাইনর একটিনিড যুক্ত করা হয়েছে। জ্বালানীটি প্রায় দেড় বছর পরীক্ষামূলকভাবে রিয়্যাক্টরে ব্যবহৃত হবে।

মক্স ফুয়েল মূলত একটি পারমাণবিক জ্বালানী যাতে একাধীক ফিসাইল ম্যাটেরিয়ালের অক্সাইড থাকে। এই জ্বালানীতে প্লুটোনিয়ামের সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত ইউরেনিয়াম, পুনঃপ্রক্রিয়াজাত ইউরেনিয়াম অথবা ডিপ্লিটেড ইউরেনিয়াম এর ব্লেন্ড করা হয়। বৃহস্পতিবার রোসাটম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

অন্যদিকে এক্টিনিড হলো প্লুটোনিয়াম ব্যাতীরেকে অন্যান্য ট্রান্সইউরেনিক এলিমেন্ট যেগুলো রিয়্যাক্টরে সংঘঠিত পারমাণবিক বিক্রিয়ার ফলে পারমাণবিক জ্বালানীতে বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে তৈরি হয়। প্লুটোনিয়ামের মতো প্রকৃতিতে এগুলোর কোনও অস্তিত্ব নেই। এক্টিনয়েড গুলোর মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো নেপচুনিয়াম, এমরিসিয়াম এবং কুরিয়াম আইসোটোপগুলো। অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় ও বিষাক্ত এই এক্টিনয়েড থেকে প্রচুর পরিমানে তাপ নিঃসরিত হয় এবং হাফ-লাইফও অনেক বেশি। পারমাণবিক বর্জ্যে অত্যন্ত বিপদজনক হিসেবে এই এক্টিনয়েড গুলো বিশেষভাবে পরিচিত।

মাইনর এক্টিনয়েড সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে রুশ উদ্ভাবিত নতুন জ্বালানীটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, বিশেষ করে ফাস্ট নিউট্রনের রিয়্যাক্টরে ক্ষেত্রে। গবেষণায় দেখা গেছে নতুন মক্স ফুয়েলের এক্টিনয়েডগুলো বিভাজিত হবার ফলে যেসকল তেজস্ক্রিয় এবং স্থিতিশীল আইসোটোপ তৈরি হয় সেগুলোর ঝুঁকি স্বাভাবিকভাবে প্রাপ্ত এক্টিনয়েডগুলোর তুলনায় অনেকাংশেই কম। মাইনর এক্টিনয়েডের এই রূপান্তর প্রক্রিয়াকে ‘আফটার বার্নিং’ হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

রসাটমের টেভেল ফুয়েল কোম্পানির সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার উগ্রীউমভ বলেন, “ক্লোজড নিউক্লিয়ার ফুয়েল সাইকেলের ক্ষেত্রে মাইনর এক্টিনিডের আফটার বার্ণিং একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর ফলে, চুড়ান্তভাবে সংরক্ষণের জন্য পারমাণবিক বর্জ্যের পরিমান অনেকাংশেই হ্রাস করা সম্ভব হবে এবং একই সঙ্গে এই বর্জ্যের তেজস্ক্রিয়াতাও অনেকাংশে কমে যাবে। এর ফলে, পারমাণবিক বর্জ্যের চুড়ান্ত সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার ব্যয় কমে আসবে”।
মাইনর এক্টিনিডের আফটার বার্নিং এর উদ্দেশ্যে রসাটম নতুন ধরণের জ্বালানী নিয়ে ২০২১ সালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এই কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে মাইনর এক্টিনিডের পৃথকীকরণ, অন্তর্র্বতীকালীন সংরক্ষণ, ফাস্ট রিয়্যাক্টরের জ্বালানীতে ব্যবহার এবং ব্যবহৃত জ্বালানী সংক্রান্ত গবেষণা ইত্যাদি। এর অন্যতম আরেকটি লক্ষ্য হলো রিয়্যাক্টরগুলোকে এমনভাবে প্রস্তুত করা যাতে সর্বোচ্চ পরিমান মাইনর এক্টিনয়েডের বিভাজন সম্ভব হয়।