নয়াদিল্লি-মালে টানাপড়েনের মধ্যেই চীন সফরে গিয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু এবার বেইজিংকে তাদের ‘পুরনো বন্ধু এবং ঘনিষ্ঠতম সহযোগী’ বললেন। বুধবার চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে আলোচনায় মুইজ্জু আরো বলেন, ‘মালদ্বীপের উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।’

পাঁচ দিনের চীন সফরের তৃতীয় দিনে বুধবার জিনপিংয়ের সাথে রাজধানী বেইজিংয়ে বৈঠক করেন মুইজ্জু। জানান করোনাভাইরাস মহামারীর আগে চীন ছিল তাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী।

তার এই বক্তব্য ভারতকে বেশ ক্ষুব্ধ করতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঘিরে নতুন করে ভারত-মালদ্বীপ টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘চীনপন্থী’ নেতা তথা ‘পিপল্‌স ন্যাশনাল কংগ্রেস’-এর প্রধান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে একের পর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যা নিয়ে নয়াদিল্লি-মালে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। এই আবহে সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সফরের বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অভিযোগ, মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী, মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজুম মাজিদ কিছু ছবিতে মোদকে ‘পুতুল’ এবং ‘জোকার’ বলে মন্তব্য করেন। ভারত-ইসাইলল সম্পর্ক নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। পরে অবশ্য বিতর্কের মুখে পোস্টগুলো মুছে দেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মালদ্বীপের বিরোধী নেতাদের চাপের মুখে তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু।

ভারতীয় পত্রিকাটি দাবি করে যে সমাজমাধ্যমে ‘বয়কট মালদ্বীপ’-এর ঠেলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র। আগে থেকেই মালদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার বিমান-হোটেলে টিকিট বুক করে রাখার পরেও তা বাতিল করে চলেছেন একের পর এক ভারতীয়। ক্রমে সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে চীন সফরে গিয়ে মঙ্গলবার মুইজ্জু চীনা সরকারের এবং সে দেশের বণিকসভার প্রতিনিধিদের কাছে পর্যটক চেয়ে ‘দরবার’ করেছিলেন।

আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, এই আবহে মুইজ্জু বুধবার চীনকে ‘পুরনো এবং সবচেয়ে কাছের বন্ধু’ বলায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে স্নায়ুযুদ্ধের পারদ আরো চড়তে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। উল্লেখ্য, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের একাধিপত্যের মোকাবিলা করতে সক্রিয় মোদি সরকার। আমেরিকার নেতৃত্বে গড়া কোয়াড-এ তারা প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তার আগে সমুদ্রপথ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগে পড়ছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তার অন্যতম কারণ ‘চীন ঘনিষ্ঠ’ মুইজ্জু।

ক্ষমতায় এসেই মুইজ্জু মালদ্বীপে মোতায়েন ভারতীয় সেনাসদস্যদের ফেরত পাঠিয়েছিলেন। সম্প্রতি, তিনি নয়াদিল্লির সাথে চার বছরের পুরনো নৌচুক্তি বাতিলের কথা ঘোষণা করেন। ওই চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনীর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সাহায্য করার জন্য মালদ্বীপের পানিসীমায় ‘হাইড্রোগ্রাফিক’ সমীক্ষা চালানোর অনুমতি মিলত। চুক্তি বাতিলের ফলে তা বন্ধ হয়েছে। যা নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এসেছে ভাটার টান।