গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। সোমবার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শণকালে ক্ষতিগ্রস্থদের নগদ টাকা ও ঢেউটিন অনুদান হিসেবে দেওয়ার ঘোষণা দেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম। ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৮শ’ পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার রাতে দুই দফা ব্যাপক শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো হওয়ায় গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বহু বাড়িঘর, ফসলী জমি ও মৌসুমী ফলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন অনেকে। জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। স্মরণকালের মধ্যে বড় বড় আকৃতির শিলা বৃষ্টির মতো পড়ে কয়েকশত ঘরের টিনের চালা ফুটো হয়ে গেছে। এসময় চাল ফুটো হয়ে বড় আকৃতির শিলা ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়তে থাকলে লোকজন উপায়ন্তর না পেয়ে ঘরে থাকা চৌকি, টেবিল সহ বিভিন্ন আসবাবপত্রের নীচে আশ্রয় নিয়ে আত্মরক্ষা করেন। শিলাবৃষ্টিতে আম ও লিচুর মুকুল, কাঁঠাল, মৎস্য খামার, মাঠের বোরো ধান, কলাবাগান ও বিভিন্ন ফলের বাগানসহ মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

খবর পেয়ে সোমবার সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম কালিয়াকৈর উপজেলায় বোয়ালী ইউনিয়নসহ শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন ঘরবাড়ি ও ফসলের মাঠ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শণকালে বাড়ির মালিক এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ক্ষতিগ্রস্থদর সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় আড়াইশ’ বান্ডিল ঢেউটিন এবং নগদ সাড়ে ৭ লাখ টাকা বরাদ্ধ মঞ্জুর করেন। এসময় তাঁর সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ’মি), স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, স্মরণকালের মধ্যে বড় বড় আকৃতির শিলা বৃষ্টিতে জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে বহু ঘরবাড়ি ও ফসলের মাঠ। এরমধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিসাধন হয়েছে কালিয়াকৈর উপজেলা এলাকায়। ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় তাৎক্ষনিকভাবে আড়াইশ’ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। আরো ৫শ’ বান্ডিল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। প্রতিবান্ডিল টিনের বিপরীতে ৩হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। শিলাবৃষ্টিতে প্রায় সাড়ে ৮ শ’ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে স্থানীয়ভাবে জানাগেছে। তবে ক্ষতিগ্রস্থদের প্রকৃত তালিকা প্রণয়নে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। তিনি আরো জানান, শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদেরকেও বীজ ও সারসহ বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এব্যাপারে গাজীপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন বলেন, আমিও সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। প্রাথমিকভাবে কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নে ৩৫০টি পরিবার ও বোয়ালী ইউনিয়নে ৫ শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের তালিকা প্রণয়ণের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণ তালিকা করছেন। জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে আমরা যাদের ঘরের চাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আকাশ দেখা যায়, এমন প্রতিটি পরিবারকে ঘরের চাল ঠিক করার জন্য দুই বান্ডেল ঢেউটিন ও নগদ ৩ হাজার টাকা করে প্রদান করব।