জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বিনা সংগ্রামে কখনো মুক্তি আসে না। সকল বাধা ও শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে হলে এ জাতিকে আরেকটিবার শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে।

শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়ার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় এ মাহফিলে আগত মেহমানদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা সকলের মঙ্গল কামনা করি। সকল রকম হঠকারিতা ও বিশৃঙ্খলা পরিহার করতে হবে। পায়ে পারা দিয়ে কেউ ঝগড়া করতে আসলে অবশ্যই তার জবাব দিতে হবে।

তিনি বলেন, সরকারি দলের লোকদের যদি রাজনীতি করার অধিকার থাকে, তাহলে দেশের প্রতিটি নাগরিকেরও রাজনীতি করার অধিকার আছে। শুধু আল্লাহকে ভয় করতে হবে এবং দোয়া করতে হবে আল্লাহ যেন আমাদের সকল বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেন। ইফতারের পূর্ব মূহূর্তে তিনি মাহফিলে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, তিনি যেন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সকল বাধা-বন্ধন থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। আমাদের দেশের আলেম সমাজ যেন আমাদের দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন সেজন্য আল্লাহ যেন তাদের যোগ্যতা বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে স্বাধীনতার সুফল ভোগ করার তাওফিক দান করুন। আজকে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর যে জুলুন-নিপীড়ন চলছে, আল্লাহ যেন তা থেকে তাদেরকে মুক্তি দেন এবং তাদের বিজয় দান করেন। তিনি দেশ, জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত শেষ করেন।

তিনি আরো বলেন, আজকে বিগত আটটি বছর আমরা সকলে মিলে ইফতার মাহফিলের সুযোগ পাইনি। আজকের ইফতার আয়োজন নিয়েও প্রতিকূলতা ছিল। হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জামায়াতের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল আয়োজন করতে পেরে আমরা আল্লাহর শুকরিয়া জানাচ্ছি। আমাদের দাওয়াতে এ ইফতার মাহফিলে যারা শামিল হয়েছেন, আমি তাদের সবাইকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ পাক এ পবিত্র রমজান মাসে কুরআন নাজিল করেছেন। এ মাস অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসে রয়েছে বরকতময় লাইলাতুল কদর। মহান রব পবিত্র কুরআনে প্রথমেই নাজিল করলেন ‘পড় তোমার সৃষ্টিকর্তা প্রভুর নামে।’ মানুষের জ্ঞান অর্জনের জন্যই আল্লাহ এ আয়াত নাজিল করেছেন। আল্লাহ মানুষের জন্য তার হেদায়াত ও নেয়ামত পূর্ণ করে দিলেন। এ মাসেই বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। রাসূল সা: ছিলেন মানবজাতির জন্য রহমাতুল্লিল আলামীন। রাসূল সা: মক্কার লোকদের অত্যাচারে মদিনায় হিজরত করলেন এবং হিজরতের ৭ বছর পরে তিনি বিজয়ী হয়ে মক্কায় প্রবেশ করলেন। তিনি হলেন শেষ নবি, তার পরে আর কোনো নবী আসবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের যেসব মানুষ, মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করে শহীদ হয়েছেন, আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছেন, জেলে গিয়েছেন, তাদের সকলের ত্যাগ আল্লাহ পাক কবুল করুন এবং সবাইকে উপযুক্ত জাযা দান করুন। মুক্তি অর্জন করতে হলে অবশ্যই সংগ্রাম করতে হবে। বিনা সংগ্রামে কখনো মুক্তি আসে না। সকল বাধা ও শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে হলে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সাত বছরের শিশুও রেহাই পায়নি। আমরা মনে করি সবকিছুর একটা সীমা আছে। কেউনি চূড়ান্ত ক্ষমতা দখল রাখতে পারে না।

এ ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুজিবুর রহমান সরোয়ার, আবদুস সালাম, জহিরুদ্দিন মুহাম্মাদ স্বপন, আতাউর রহমান ঢালী, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, অ্যাডভোকেট মাসুদ উদ্দিন তালুকদার, এলডিপি’র সভাপতি ড. কর্নেল অব. অলি আহমাদ, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এবি পার্টির নেতা ব্যারিস্টার যুবাইর, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি জনাব নূরুল হক নূর, এসএম শাহজাহান কবির, দৈনিক নয়া দিগন্তের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাহ উদ্দিন বাবর, উপ-সম্পাদক (বার্তা) মাসুমুর রহমান খলিলী।

সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমাদ, ইলিয়াস খান, নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, সাবেক সাধারণ বাকের হোসাইন, সরদার ফরিদ আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী প্রমুখ।

দেশের অন্যতম আলেম শীর্ষ বর্ষিয়ান আলেমে দ্বীন জামিয়া ইমদাদিয়ার মহাপরিচালক এবং ইসলামিক কানুন বাস্তবায়ন পরিষদের আমির মাওলানা আবু তাহের জিহাদী আল কাসেমী, বাংলাদেশ নিজামে ইসলাম পার্টির আমির মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, গণসেবা আন্দোলনের আমির মুফতি ফখরুল ইসলাম, মুফতি বিন ইয়ামিন (মহাসচিব গণসেবা আন্দোলন), খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফি, মহাসচিব ইসলামিক কানুন বাস্তবায়ন পরিষদ, বাংলাদেশ ইসলামিক দাওয়া সেন্টারের পরিচালক মুফতি নুরুজ্জামান নোমানী, জমিয়তে হিজবুল্লার কেন্দ্রীয় মুরুব্বী অধ্যক্ষ ডক্টর মাওলানা মুহিউদ্দিন, জাতীয় খতিব পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতি মাসুদুর রহমান জাহেদী, ছরছিনা দরবার শরীফের পীর মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, মিরেশ্বরাই দরবার শরীফের পীর মাওলানা আব্দুল মমিন নাসেরী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মাওলানা রফিকুল রহমান মাদানী।

জামায়াত নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো: তাহের, নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল, মাওলানা মুহাম্মাদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, সাইফুল আলম খান মিলন, অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ শাহাবুদ্দিন, অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ ইজ্জত উল্লাহ, মুবারক হোসাইন, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মাদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, মাওলানা আবদুল মান্নান, অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ড. মুহাম্মদ কেরামত আলী, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, কাজী দ্বীন মুহাম্মাদ, ঢাকা দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। অফিস সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুস সাত্তার। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম।

সাবেক বিচারপতি ফরিদ, অ্যাডভোকেট আবদুল করিম, অ্যাডভোকেট মাইনুদ্দিন, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ফজলুল করিম, অধ্যাপক আবদুর রব, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, দৈনিক সংগ্রামের এমডি নূরুল আমিন, মেজর জেনারেল অব. আলমাস আমিন, কর্নেল অব. আনোয়ার হোসেন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা হারুনুর রশিদ খান।

মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে ইফতার মাহফিল শুরু হয়। কালামে হাকিম থেকে তেলাওয়াত করবেন ক্বারী বেলাল হোসাইন।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ জুন হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনদের নিয়ে ইফতার করেছিল জামায়াতে ইসলামী। তখন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইফতারে অংশ নিয়েছিলেন।