করোনাভাইরাসের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এক আইনি লড়াইয়ে সম্প্রতি এমনটাই স্বীকার করে নিয়েছে ব্রিটিশ-সুইস ওষুধ নির্মাতা কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এক বছর ধরে ভ্যাকসিনের ক্ষতিকারক প্রভাব মামলায় জর্জরিত রয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এত দিন কোম্পানি বলে এসেছিল যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় তৈরি করা এই কোভিড ভ্যাকসিন ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু দাবি উঠেছিল যে এই ভ্যাকসিনের জন্যই কয়েকজনের মৃত্যু এবং কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থতার মুখে পড়েছেন। অ্যাটর্নিদের মতে, কিছু পরিবার টিকা দেয়ার একটি বিধ্বংসী প্রভাবের মুখোমুখি হয়েছিল। সবটা দেখে শুনে অবশেষে ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকা প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে যে তার কোভিড ভ্যাকসিন খুব বিরল ক্ষেত্রে হলেও, টিটিএস-এর কারণ হতে পারে।

টিটিএস কী
টিটিএস-এর সম্পূর্ণ রূপ হলো থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম (টিটিএস)। এটি একটি খুব বিরল সিন্ড্রোম, যা রক্ত ​​জমাট বাঁধা (থ্রম্বোসিস) এবং কম প্লেটলেট সংখ্যা (থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া) দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এটিকে ভিআইটিটি নামেও অভিহিত করা হয়, যার পূর্ণ রূপ ‘ভ্যাকসিন-ইনডিউসড ইমিউন থ্রম্বোটিক থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া’। রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে থ্রম্বোসিস হতে পারে, যা প্রভাবিত রক্তনালীতে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয়। থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া শরীরে রক্তের প্লেটলেট সংখ্যা কম হওয়ার সময় ঘটে। সাধারণত, প্লেটলেটগুলো অতিরিক্ত রক্তপাত রোধ করতে রক্তের জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। আর সেই প্লেট সংখ্যা কমে গেলে ক্ষতি হওয়া স্বাভাবিক।

গত বছর, জেমি স্কট, দুই সন্তানের পিতা, ব্রিটিশ-সুইডিশ বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল এবং বায়োটেকনোলজি কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার অভিযোগে, স্কট উল্লেখ করেছিলেন যে তিনি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে করোনা রুখতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নেয়ার পর থেকেই চরম বিপদের মুখে পড়েছিলেন। এর ফলে তার রক্ত জমাট বেঁধেছে এবং মস্তিষ্কে রক্তপাত হচ্ছে। এমনকি হাসপাতাল নাকি তার স্ত্রীকে জানিয়েছিল যে স্কট বেঁচে থাকতে পারবেন না। আর অ্যাস্ট্রাজেনেকা আদালতে এই দাবিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে এত দিন ধরে। এর আগে, ২০২৩ সালের মে মাসে স্কটের আইনজীবীর কাছে এক মেইল পাঠিয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছিল, জেনেরিক লেভেলে এই টিকার কারণে টিটিএস-এর ঘটনা ঘটেছে, এটা স্বীকার করি না আমরা।

যাইহোক, এত দিন পর কোম্পানির স্বীকারোক্তি তাকে বিরাট ক্ষতিপূরণের মুখে ফেলে দিতে পারে। কারণ এরই মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে মোট ৫০টিরও বেশি মামলা করা হয়েছে। করোনার টিকা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সকলেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস