গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালীতে একটি যৌথ মৎস খামার জোরপূর্বক জবরদখল করেছে একটি প্রভাবশালী মহল। এতে খামারটির প্রকৃত মালিক স্থানীয় মৎসচাষীরা মাছ চাষ করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। শেষ সম্বল নিজেদের জমি হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে বেকার বসে আছেন তারা। দখলকৃত মৎস খামারটি উদ্ধারে অসহায় মৎস চাষীরা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

স্থানীয় মৎস চাষীরা জানান, কালিয়াকৈর উপজেলার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন মৎস চাষী তাদের নিজেদের জমিতে বেশ কয়েক বছর আগে গড়ে তুলেন “গোয়ীলা বাইদ মৎস খামার”। কয়েক একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা এ খামারটিতে তারা যৌথভাবে মাছ চাষ করে আসছিল। বিগত সাড়ে ৫ বছর আগে তারা পাশর্^বর্তী চা বাগান এলাকার একেআর ফার্মিং এর মালিক হাজী রহম আলী ব্যাপারীর কাছে খামারটি ৫ বছরের জন্য লিজ বা ভাড়া দেন। কিন্তু লিজের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি খামারের দখল না ছেড়ে জোড়পূর্বক মাছ চাষ অব্যাহত রাখেন। ৫/৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও খামারটি প্রকৃত মালিকদের নিকট হস্তান্তর করেন নি তিনি। উপায়ান্তর না পেয়ে তারা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট এ ব্যাপারে একটি আবেদন জানান। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান গত বছর (২০২৩ ইং) ৫ ফেব্রুয়ারি একটি সভার মাধ্যমে খামারটি ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর প্রকৃত মালিকদের নিকট ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্ত উক্ত রহম আলী স্থানীয় আরো কিছু প্রভাবশালী লোকের ইন্ধনে প্রভাবিত হয়ে খামারটি দখল করে রাখে। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পূনঃরায় সভা ডেকে খামারটি ছেড়ে দিতে নির্দেশ দিলেও তিনি দখল ছাড়েননি। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান তার নির্দেশ অমান্য করায় গত ৫ মে একটি শালিশী প্রতিবেদন পেশ করেন। প্রতিবেদনে তিনি উক্ত হাজী রহম আলীকে একজন আইন অমান্যকারী ও সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী হিসেবে উল্লেখ করেন।

জানা গেছে, বোয়ালী এলাকাটি গাজীপুরের মধ্যে একটি মৎস খামারী এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে কয়েকশত বড় বড় মৎস খামার রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন চাষীরা মিলে তাদের নিজেদের জমি একত্রিত করে এসব খামার গড়ে তুলেন এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেন। এই এলাকার মাছ শুধু গাজীপুর নয়, ঢাকা ও পাশ^বর্তী নরসিংদী, নারায়নগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ অনেক এলাকার মাছের চাহিদা পূরন করে থাকে। বলা চলে, মাছ চাষই এলাকার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস। কিন্ত স্থানীয় এসব চাষীদেরকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে স্বল্প মূল্যে তাদের খামার লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে একটি চিহ্নিত মহল। এ প্রভাবশালী মহলের খপ্পরে পরে অনেক চাষীরাই প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হয় বছরের পর বছর। ওই মহলটি জোর করেই দখলে রাখে মৎস খামার। এমনি একটি ফাঁদে পরেছে এই গোয়ীলা বাইদ মৎস খামারের মালিকরা। এখন তাদের খামারটি হারাবার উপক্রম হয়েছে। এ ব্যাপারে গত ১৬ মে খামারের সাধারন সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন ও কোষাধ্যক্ষ অনন্ত চন্দ্র সরকার গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নিকট একটি আবেদন জানিয়েছেন। আবেদনে তারা বেদখল খামারটি উদ্ধার করে কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার অনুরোধ জানান।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হযরত আলী নামের একজন খামারী জানান, উক্ত হাজী রহম আলী ব্যাপারী শুধু আমাদের খামারই দখল করেননি, এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আরো রয়েছে। তিনি ৫ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলেন, লিজের মেয়াদ শেষে এখন তিনি জোর করে দখল করে রেখেছেন। এমনকি আমাদের চেয়ারম্যানের নির্দেশও তিনি মানছেন না।

খামারটির সাধারন সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন জানান, হাজী রহম ্আলী আমাদের খামারটি জোর করে দখল করে রাখলে আমরা চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করি। কিন্ত হাজী রহম আলী চেয়ারম্যানের নির্দেশ মানেননি। পরবর্তীতে আমরা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানাই। তিনি বলেন, মাছ চাষ করতে না পারায় বিগত ৫/৬ মাস যাবত আমরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি। অন্যদিকে জোর করে খামার দখল করায় এর ভবিষ্যত নিয়ে আমরা চিন্তিত। খামারটি উদ্ধারে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

খামারটির দখলের ব্যাপারে অভিযুক্ত হাজী রহম আলী ব্যাপারীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, খামারটি জোরপূর্বক দখল করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি ৫ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলাম এবং আবারো আমাকে লিজ দেওয়ার কথা বলে তারা লিজ দিচ্ছে না। খামারে আমার মাছ রয়েছে, আমি আবারো লিজ নিতে চাই। তিনি আরো বলেন, চেয়ারম্যানের ডাকা একটি মিটিংয়ে আমি যাইনি। শুনেছি চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছেন।

কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আফজাল হোসেন খান বলেন, খামারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উভয়পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকা হয়। কিন্ত উক্ত হাজী রহম আলী বিচার মানতে অস্বীকার করেন। তিনি খামারটি জোর করে দখল করে রেখেছেন।