দুই বছরে দেশে বেড়েছে শিশু অপুষ্টির হার

দৈনিক বার্তা : ঢাকা,৮আগষ্ট : খাদ্য মন্ত্রণালয়দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে৷ দুই বছরে শিশু অপুষ্টির হার আরও বেড়েছে৷ ২০১১ সালে তীব্র অপুষ্টির শিকার শিশু ছিল ১৬ শতাংশ৷ ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ শতাংশে৷জাতীয় খাদ্যনীতি কার্যপরিকল্পনা ও দেশি বিনিয়োগ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে৷খাদ্য মন্ত্রণালয় গত জুনে এই প্রতবেদন প্রকাশ করেছে৷ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ২০১৪ তে বলা হয়েছে, অপুষ্ট মা, বেকার বা কম উপার্জনের বাবা-মা, কম পারিবারিক আয়, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো,অপর্যাপ্ত পয়ঃব্যবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এসব কারণে অপুষ্টির ঝুঁকি বেড়েছে৷


প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও অপুষ্টির প্রকোপ অনেক বেশি৷ প্রাপ্তবয়স্ক একজন বাংলাদেশি চাহিদার চেয়ে দৈনিক গড়ে ২৪০ কিলোক্যালরি শক্তি কম গ্রহণ করেন৷ধনী-গরিব উভয় শ্রেিণর মানুষের মধ্যেই এ সমস্যা প্রকট৷ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশ্চর্যজনকভাবে সমাজের সবচেয়ে ধনিক শ্রেণির ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে৷ আর সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণির ২১ দশমিক ১ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার৷ 

ইউনিসেফের পুষ্টিবিদ মহসিন আলী বলেন, ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের কারণে ধনিক শ্রেণিতে অপুষ্টি দেখা দেয়৷ পুষ্টি ঠিক রাখতে ঠিক সময় অন্তর বৈচিত্র্যপূর্ণ মানসম্পন্ন পর্যাপ্ত খাবার শিশুতে খাওয়াতে হয়৷ সচেতনতার অভাবে ধনিক পরিবারের অনেকে তা খাওয়ান না৷ আর দরিদ্ররা অর্থের অভাবে তা খাওয়াতে পারেন না৷ 

পুষ্টিবিদ অধ্যাপক এম কিউ কে তালুকদার এ ব্যাপারে বলেন, পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নতিতে মাঠপর্যায়ে কাজ নেই বললেই চলে৷ ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি প্রকল্পও (বিআইএনপি) তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সাল থেকে জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রম (এনএনপি) চালু ছিল ২০০৯ সাল পর্যন্ত৷ ১৬৭ উপজেলায় প্রায় ৪২ হাজার মাঠকর্মী পুষ্টি সেবা দিতেন৷ 

স্বাধীন মূল্যায়নে দেখা গেছে, এসব উপজেলায় পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল৷ কিন্তু সরকার মাঠপর্যায়ে পুষ্টি সেবা হঠাত্‍ বন্ধ করে দেয়৷ তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ ছাড়া মাঠপর্যায়ে সরকারের কার্যত কোনো পুষ্টি সেবা নেই৷ এটাই পুষ্টি পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ৷ 


শিশু অপুষ্টি: পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ২০১৪-তে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে তীব্র অপুষ্টির শিকার (সিভিয়ার এক্যুইট ম্যালনিউট্রিশন) শিশু ছিল ৪ শতাংশ৷ ২০১৩ সালে তা বেড়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷ অর্থাত্‍ দুই বছরে তীব্র অপুষ্টির শিকার শিশু প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে৷ 

বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী পাঁচজন শিশুর মধ্যে দুজনের উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম৷ ১১ শতাংশ শিশু কৃশকায়৷ প্রায় পাঁচ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার৷ পুষ্টিবিদেরা প্রায় দশক ধরে বলে আসছেন কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পুষ্টি পরিস্থিতি ক্ষুধাপীড়িত আফ্রিকার কিছু দেশের চেয়েও খারাপ৷ 

সরকারের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, পরিসংখ্যান নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে৷ কিন্তু পুষ্টি পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, এ তথ্য অস্বীকার করার উপায় নেই৷ ২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া জাতীয় পুষ্টি সেবার (এনএনএস) আওতায় সরকারি মেডিকেল কলেজ, জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা হাসপাতালের চিকিত্‍সক নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের পুষ্টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা ২৮৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে পুষ্টি সেবা দিচ্ছেন৷ এই সেবা সারা দেশে দেওয়া সম্ভব হলে পরিস্থিতি পাল্টাবে বলে আশা করা যায়৷ 

কিলোক্যালরির পার্থক্য: প্রতিবেদন বলছে, একজন বাংলাদেশির দৈনিক গড়ে দুই হাজার ৪৩০ কিলোক্যালরি শক্তি গ্রহণ করা উচিত৷ কিন্তু গ্রহণ করে দুই হাজার ১৯০ কিলোক্যালরি৷ দৈনিক শক্তি চাহিদা ও শক্তি প্রাপ্তির মধ্যে পার্থক্য (এনার্জি গ্যাপ) ২৪০ কিলোক্যালরি৷ তাতে আরও বলা হয়েছে, যে শক্তি মানুষ গ্রহণ করছে, তার ৭০ শতাংশ আসে ভাতজাতীয় খাদ্য থেকে৷ মাছ-মাংস ও ফল মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম খায়৷ 

পুষ্টিবিদ ও বাংলাদেশ নিউট্রিশন ফাউন্ডেশনের সভাপতি এস কে রায় বলেন, ক্যালরির অভাব থাকলে মানুষ অল্পেই ক্লান্ত হয়৷ মানুষ তার পূর্ণ সামথর্্য দিয়ে কাজ করতে পারে না৷ বহুসংখ্যক মানুষের নিয়মিত ক্যালরির ঘাটতি থাকার অর্থ ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতি৷ তিনি আরও বলেন, খাদ্য তালিকায় ভাতের প্রাধান্য থাকায় মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিসের মতো রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ 

দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি:বৈচিত্র্যপূর্ণ ও মানসম্পন্ন পর্যাপ্ত খাবার শিশুদের খাওয়ানো হচ্ছে না৷ ধনী পরিবারে সচেতনতার অভাব, দরিদ্র পরিবারে অর্থের অভাব:২০১১ সালে তীব্র অপুষ্টির শিকার শিশু ছিল ১৬%,২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮%,পাঁচ বছরের কম বয়সী পাঁচজন শিশুর মধ্যে দুজনের উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম 

প্রাপ্তবয়স্ক একজনের পুষ্টির চাহিদা দৈনিক কিলোক্যালরি ২৪৩০ কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক একজন গ্রহণ করছেন গড়ে ২১৯০ কিলোক্যালরি৷