loimon

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২অক্টোবর: সন্ত্রাসী সন্দেহে ঝালকাঠির কলেজ ছাত্র লিমন হোসেনকে গুলি করে পঙ্গু করার ঘটনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) র্যাব সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল৷ বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন৷র্যাবের গুলিতে লিমনের পা হারানোর ঘটনা দুঃখজনক উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যদি এ ঘটনা কোনো র্যাব সদস্য ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালিয়ে থাকে তাহলে ওই সদস্যের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে৷এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ লিমনের বিষয়টি তথ্য প্রমাণ যাচাই-বাছাই করে নির্দোশ প্রমাণিত হওয়া মামলা থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে৷

বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপির সঙ্গে জনগণ নেই তাই তাদের আন্দোলন সফল হবে না৷ তবে আন্দোলনের নামে দেশে বিশৃংখলা তৈরি করে স্কুল-কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অচল করে দেয়ার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে৷মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডবি্লউ) ঝালকাঠির তরুণ লিমন হোসেনের পঙ্গুত্বের জন্য ‘দায়ী র্যাব সদস্যদের বিচারের দাবি জানানোর মধ্যেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বললেন, সাড়ে তিন বছর আগে লিমনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি ছিল নিছক দুর্ঘটনা৷

প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসীকে রেইড করতে গিয়ে এই অ্যাঙ্েিডন্টটা হয়েছে৷ দুর্ভাগ্যক্রমে গুলিটা লিমনের লেগে যায়৷ এটা একটা নিছক দুর্ঘটনা৷

২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আহত হন লিমন হোসেন৷ সে সময় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী লিমনকে বাঁচাতে একটি পা কেটে বাদ দিতে বাধ্য হন চিকিত্‍সকরা৷ওই ঘটনায় লিমনকে সন্ত্রাসী হিসাবে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে র্যাব দুটো মামলাও দায়ের করে, যা সাড়ে তিন বছর ঝুলিয়ে রাখার পর সমপ্রতি প্রত্যাহার করা হয়৷ অন্যদিকে লিমনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ছয় র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম, যার নিষ্পত্তি আজো হয়নি৷

লিমনের নামে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মঙ্গলবার এইচআরডবি্লউর এক বিবৃতিতে বলা হয়, যে সব র্যাব সদস্য লিমনকে গুলি করেছিলেন, যাতে সে স্থায়ী পঙ্গু হয়ে যায়, তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার৷ পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ এনে যারা বিচার প্রক্রিয়াকে ভুল পথে চালিত করেছিল তাদেরও বিচার করা দরকার৷ এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কামাল সাংবাদিকদের বলেন, প্রমাণ-টমান যখন হয়েছে যে এটা নিছক দুর্ঘটনা, সে (লিমন) জড়িত ছিল না, তখন তার মামলা-টামলা সব প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে৷

লিমনের মামলা প্রত্যাহার হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে কি না- এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, র্যাব বলেছে, কুখ্যাত সন্ত্রাসীর সনি্নকটে লিমন থাকায় এই দুর্ঘটনা হয়েছে৷ লিমনকে উদ্দেশ্য করে তারা গুলি করেনি৷

কামালের ভাষায়, অভিযান চালাতে গেলে দুর্ভাগ্যক্রমে দুই একজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়; লিমন সে রকমই একজন৷লিমনের ঘটনায় তদন্ত হয়েছে, সেই তদন্ত দেখে যদি কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকে, যদি কেউ ইচ্ছাকৃত কোনো ভুল করে থাকেন- তার ব্যবস্থা হবে৷ আর যদি ইচ্ছাকৃত না হয়ে দুর্ভাগ্যক্রমে হয়ে থাকে তাহলে তা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখব৷সংশ্লিষ্ট র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- সাংবাদিকরা বার বার এ প্রশ্ন করলেও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্পষ্ট কিছু বলেননি৷ নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে কামাল বলেন- পুলিশ, র্যাব যেই হোক, কেউ আইনের ঊধের্্ব নয়৷ আইন অনুযায়ী সবার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অনেক কথাই বলেছে৷ বাংলাদেশের পরিস্থিতিটাও আপনারা জানেন৷ র্যাবের অনেক সফলতা রয়েছে- তাও আপনারা জানেন৷স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাধারণ পুলিশ বাহিনী যেখানে অপারগ, সেখানে র্যাবকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে৷কারণ তাদের সব ধরনের ইকুইপমেন্ট (অস্ত্রসন্ত্র) দিয়ে বিশেষ বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে৷

র্যাব দেখার মতো ও উদাহরণ দেওয়ার মতো অনেক ভালো কাজ করছে দাবি করে কামাল বলেন, একটা-দুইটা দুস্কর্ম যদি তারা করে থাকে তার জন্য পুরো বাহিনী বন্ধ হয়ে যাবে, এটা হতে পারে না৷ সরকারকে হুমকি দিয়ে আসা বিএনপির কোনো আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত স্বার্থক হবে না বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কামাল৷

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলন, রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি কর্মসূচি নিয়ে নানা কথা’ বললেও জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো আন্দোলনই হবে না৷আমরা মনে করছি জনগণ বিএনপির সঙ্গে নেই৷ তারা যতই আস্ফালন করুক, কোনো আন্দোলনই স্বার্থক হবে না৷বিএনপি আন্দোলনের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালালে সরকার তার কাজ করবে বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন চলতেই পারে৷ তবে আন্দোলনের মাধ্যমে ধ্বংস, জ্বালাও- পোড়াও, ভাংচুর, স্কুল-কলেজ বন্ধের চেষ্টা করবে- সেটা হতে পারে না৷