kamaruzzaman-son

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৫নভেম্বর: জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রটারি মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে নয়, ইসলামি আদর্শের রাজনীতি করার কারণে তার ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে৷ তিনি আশঙ্কা করছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই সরকার তাকে হত্যা করতে পারে৷ তিনি পরিবারের সদস্যদেরকে চিন্তা না করে আল্লাহর ওপর ভরসা করতে বলেছেন৷

বুধবার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত্‍কালে তিনি এসব কথা বলেন৷এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী, ভাই সন্তানসহ ৯ জন তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান৷ প্রায় ৫০ মিনিট সাক্ষাত্‍ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কামারুজ্জামানের বড় ছেলে ইকবাল হাসান ওয়ামি৷জ্যেষ্ঠ কারাধ্যক্ষ ফরমান আলী বলেন, নিয়মিত সাক্ষাতের অংশ হিসাবে পরিবারের সদস্যরা দেখা করেছেন৷ তারা ১০টা ৩৮ মিনিট থেকে ১১টা ৮ পর্যন্ত ভেতরে ছিলেন৷

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন স্ত্রী নুরুন্নাহার, চার ছেলে হাসান ইকবাল, আহমেদ হাসান, ইকরাম হাসান, হাসান ঈমাম, মেয়ে আফিয়া নূর, ভাই নাজিরুজ্জামান ও আবদুল্লাহ আল মাহাদী, বোন মোহসীনা বেগম ও ভাগ্নে আবদুল আলিম৷সাক্ষাত্‍ শেষে বেরিয়ে এসে কামারুজ্জামানের ছেলে ইকবাল বলেন, “বাবার মৃত্যু হবে একটি আদর্শিক মৃত্যু৷ আমরা দেশবাসীর কাছে তার জন্য দোয়া চাই৷ওয়ামি জানান, বাবা পরিবারের কাউকে চিন্তা না করতে বলেছেন৷ আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে আদর্শের ওপর অবিচল থাকার কথা বলেছেন৷ তিনি বলেছেন, ইনশাআল্লাহ, আমার এই আদর্শ একদিন এদেশের মাটিতে বিজয়ী হবেই, হবে৷

রায় প্রসঙ্গে কামারুজ্জামান বলেছেন, আমি কোনো অপরাধী নই৷ প্রমাণের ভিত্তিতে নয়, রূপকথার ভিত্তিতে রায় দেয়া হয়েছে৷ এটি একটি রূপকথার গল্প৷ এটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়৷ আমার ওপর যারা জুলুম করেছে তাদের বিচার একদিন হবে৷এ সময় হাসান ইকবাল বলেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ করা হবে৷ সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি৷

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাক্ষাতের অনুমতি পেয়ে কামারুজ্জামানের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই, মামা, চাচাসহ ৯ সদস্যের একটি দল কারাগারে প্রবেশ করেন৷ সাক্ষাত্‍ শেষে বের হয়ে বড় ছেলে হাসান ইকবাল সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানিয়েছেন৷কামারুজ্জামানকে মঙ্গলবার কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনার পর কারা সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন স্বজনরা৷ কারা কর্তৃপক্ষ তাদের সকাল বুধবার সকাল ১০টায় সময় নির্ধারণ করেন দেন৷আইনজীবী শিশির মো. মুনির বলেন, এটা তাদের নিয়মিত সাক্ষাত৷ কারাগার থেকে তাদের সাক্ষাতের জন্য ডাকেনি৷ফাঁসির আসামি মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করে তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে হাসান ইকবাল৷

ইকবালসহ পরিবারের দশ সদস্য বুধবার সকাল ১০টার কিছুক্ষণ আগে জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান৷কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর ভেতরে ঢুকে আধা ঘন্টা কামারুজ্জামানের সঙ্গে সময় কাটান তারা৷ হাসান ইকবাল বলেন, তিনি তার বাবাকে সুস্থ্ ও স্বাভাবিক দেখেছেন৷ তিনি দেশবাসীকে শান্ত থাকতে বলেছেন৷

কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না জানতে চাইলে তার ছেলে বলেন, এটা পরের বিষয়৷ রিভিউ এর পরে বাবা ভাববেন৷ এটা একান্তই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের বিষয়৷একাত্তরে আল বদরের ময়মনসিংহ জেলা শাখা প্রধান কামারুজ্জামানকে গত বছর ৯ মে মৃতু্যদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল৷ তার আপিলের রায়ে গত সোমবার ফাঁসির আদেশই বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত৷গত সোমবার কামারুজ্জামানের আপিলের রায়ে মৃতু্যদণ্ড বহাল রাখার পর মঙ্গলবার তাকে কাশিমপুর থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়৷

নিয়ম অনুযায়ী, এখন আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে৷ সেটি হাতে পেলে নিয়ম অনুযায়ী মৃতু্য পরোয়ানা জারি করবে ট্রাইবু্যনাল৷ এরপর তা কার্যকর করবে সরকার৷ এক্ষেত্রে সরকার চাইলে কারাবিধিও (জেল কোড) অনুসরণ করতে পারে৷

কারাবিধি অনুযায়ী প্রত্যেক মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ পাবেন৷ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর জেল সুপার তা বন্দিকে জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে তার মত চাইবেন৷ সাত দিনের মধ্যে তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে৷ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম রায়ের দিন জানান, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর তা জেলা প্রশাসকের কাছে যাবে৷ কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে রায় কার্যকর করবে৷মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলে জানিয়েছেন তার বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী৷

হাসান ইকবাল বলেন, সরকার আমাদের প্রতি যদি ভদ্র আচরণ করতো, তবে হয়তো প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে আবেদন করার একটা রাস্তা থাকত৷ তা ছাড়া, বড় কথা হলো বাবা রাষ্ট্রপতির কাছে কোনোভাবেই প্রাণভিক্ষা চাইবেন না৷

ওয়ামী বলেন, সরকার যেখানে রায়ের রিভিউ আবেদনের সুযোগ দিচ্ছে না, পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করার অপেক্ষা রাখছে না৷ সেখানে কীভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন তিনি৷গত ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃতু্যুদণ্ড রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২৷ তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইবু্যনাল৷ এছাড়া বাকি দুটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে তাকে খালাস দেয়া হয়৷

এরপর ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন কামারুজ্জামান৷ গত সোমবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন৷ এরপর বিকেলে রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করতে রায়ের সার্টিফাইড কপি চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষ৷একই সঙ্গে রিভিউ করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে৷ এই মামলার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন এ আবেদন করেন৷তবে সরকার পক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রিভিউ অর্থাত্‍ রায় পর্যালোচনার সুযোগ নেই বলে মত দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, এটি্ একটি বিশেষ আইন, এখানে রিভিউ করার কোনো সুযোগ নেই৷

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলছেন রিভিউ করা যাবে৷ তিনি বলেন, সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমাদের রিভিউ করার সুযোগ রয়েছে৷ পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পেলে আমরা রিভিউ আবেদন করব৷

সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেছেন,কামারুজ্জামানের রিভিউ (পুনঃবিবেচনা) আবেদন করার সুযোগ থাকা উচিত৷গত বছর কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশের পরও সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে রিভিউ’র সুযোগ নেই৷ তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন এবং তা করেছিলেনও৷ শেষ পর্যন্ত আবেদনটি খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ৷

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় আজকালের মধ্যেই কার্যকর হতে পারে৷বুধবার সকালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কারাগারে কামারুজ্জামানের ওেয সাক্ষাত হয়েছে ওই সাক্ষাতই হতে পারে শেষ সাক্ষাত৷আর এ লক্ষ্যেই মঙ্গলবার রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ফাঁসির মহড়া৷ কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে৷ সূত্র জানায়, কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ৷ ফাঁসি কার্যকর করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে মঙ্গলবারের ওই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ফাঁসি কার্যকরের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কারারক্ষীরা কে কোথায় দায়িত্ব পালন করবে,কারাগারের বাতি, সেল ও খাতাগুলো কি অবস্থায় থাকবে সে মহড়াও সম্পন্ন হয়েছে৷

এমনকি জল্লাদ ও বিকল্প জল্লাদও অংশ নিয়েছিলো ওই মহড়ায়৷যারা কেন্দ্রীয় কারাগারেরই কয়েদি৷সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করতে ইতিমধ্যে ফাঁসির দড়িও চেক করা হয়েছে৷ প্রস্তুত রাখা হয়েছে মঞ্চ৷সূত্র জানায়, মঙ্গলবার কাশিমপুর কারাগার থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে আনার পর থেকেই কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করতে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ৷ এখন শুধু অপেক্ষা৷তবে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ের অনুলিপি ট্রাইব্যনাল,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,কারা কর্তৃপক্ষ কিংবা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পৌঁছেছে কিনা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গণমাধ্যমকে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি৷