Mumbai+Metro+Rail

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১০নভেম্বর: মন্ত্রিসভায় মেট্রোরেল আইন ২০১৪-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে৷ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প রাজধানীর যানজট নিরসন ও যাত্রী পরিবহন সমস্যার সমাধানে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে৷ মেট্রোরেলে থাকবে ১৬টি স্টেশন৷ উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে শুরু হয়ে মেট্রোরেল বাংলাদেশ ব্যাংকে এসে শেষ হবে৷

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মেট্রোরেল আইন, ২০১৪এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়৷বৈঠকের পরে মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এ কথা জানান৷ মেট্রোরেল প্রকল্পে সরকার দেবে পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি টাকা৷ জাইকা দেবে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা৷ মেট্রোরেল ২০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে৷ মেট্রোরেলের নকশা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে৷ এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জরিপ শুরু হয়েছে৷ মেট্রোরেলে প্রতি ঘন্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবেন৷ এই রেলের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বিশেষ বিধান করা হয়েছে৷

মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সবাইকে লাইসেন্স নিতে হবে৷ তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স ফি দিতে হবে না৷ একটি কমিটির মাধ্যমে লাইসেন্স দেওয়া হবে৷ ভাড়াও নির্ধারণ হবে কমিটির মাধ্যমে৷বিনা টিকেটে মেট্রোরেলে চড়লে ভাড়ার ১০ গুণ জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের বিধান রেখে মেট্রোরেল আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে সরকার৷

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের জানান, এ আইনে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে৷সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প মেট্রোরেল (এমআরটি-৬)পরিচালিত হবে সরকারি ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে৷ এর নিয়ন্ত্রণ থাকবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) হাতে৷ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো প্রকল্প হাতে নেওয়া হলে তা এ আইনের আওতায় আসবে বলেও জানান তিনি৷

ভবিষ্যতে অন্য কোনো কোম্পানি (সরকারি/বেসরকারি) মেট্রোরেল পরিচালনা করতে চাইলে লাইসেন্স নিতে হবে৷ ডিটিসিএ-এর নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে একটি কমিটি এ লাইসেন্স দেবে৷ তবে সম্পূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান হলে লাইসেন্স ফি দিতে হবে না৷ মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা লাগবে, যার ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাইকা৷ বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার যোগান দেবে সরকার৷আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷ সরকার আশা করছে, রাজধানীর যানজট নিরসন ও পরিবহন সমস্যার সমাধানে এ প্রকল্প বড় ভূমিকা রাখবে৷

এ প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য খসড়ায় বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেন, ভাড়া নির্ধারণ, পরিদর্শক নিয়োগ, দুর্ঘটনা ও আইন লঙ্ঘনের শাস্তির বিষয়গুলোও প্রস্তাবিত আইনে রাখা হয়েছে৷খসড়ায় বলা হয়েছে, ডিটিসিএ একটি কমিটির মাধ্যমে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করবে৷ রেলের পরিদর্শকও তারা নিয়োগ দেবে৷প্রস্তাবিত আইনে মেট্রোরেল ও যাত্রীর বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলেও জানান সচিব৷তিনি বলেন, এ আইন ভাঙলে সর্বোচ্চ ১০ বছর জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷অনুমতি ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর করলে ১০ বছর কারাদণ্ড ও এক কোটি টাকা জরিমানা, পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করলে দুই বছর জেল ও ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷

এছাড়া মেট্রোরেল নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা, সংরক্ষিত স্থানে কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা, মেট্রোরেলের নিরাপত্তা বিঘি্নত করলে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷বিনা টিকেটে বা পাস ছাড়া কেউ ভ্রমণ করলে ভাড়ার ১০ গুণ জরিমানা এবং অনাদায়ে ৬ মাস জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷

সচিব জানান,মেট্রোরেলের টিকেট জাল করলে ১০ বছর কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়৷২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদন হয়৷বাস্তবায়নাধীন মেট্রোরেল লাইন-৬ এর আওতায় উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেইট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এই মেট্রো রেল৷ সময় লাগবে ৪০ মিনিটেরও কম৷এ প্রকল্পের ১৬টি স্টেশন থাকবে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী,মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও,বিজয় সরণি. ফার্মগেট,সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে৷

সরকার বলছে, প্রতি চার মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে ছুটে চলবে মেট্রোরেল, ঘন্টায় চলাচল করবে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী৷ মন্ত্রিসভায় সরকারি- বেসরকারি অংশীদারত্ব আইন ২০১৪-এর খসড়া অনুমোদন হয়েছে৷ এ ছাড়া অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) ২০১৪-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন হয়েছে৷ তবে ভূমি ও আইন মন্ত্রণালয়কে খসড়াটি পর্যালোচনা করে মন্ত্রিসভায় প্রতিবেদন উপস্থাপন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷

বৈঠকে সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ফর এনার্জি কো-অপারেশন (ইলেকট্রিসিটি) অনুমোদিত হয়েছে৷ এ ছাড়া সার্ক রিজিওনাল রেলওয়ে এগ্রিমেন্ট ফর সার্ক মেম্বারস স্টেটসের অনুমোদন হয়েছে৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনান, আসন্ন সার্ক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দেবেন৷