khaleda-zia-2

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ নভেম্বর: জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলার বিষয়ে খালেদা জিয়ার দুটি আবেদন খারিজের পর দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় তার আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য মঙ্গলবার দিন রেখেছে আপিল রেখেছে৷ সোমবার শুনানির পর প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই দিন ঠিক করে দেয়৷এই আদালতেই সোমবার এতিমখানা দুর্নীতি মামলা নিয়ে খালেদার দুটি আবেদন খারিজ হয়ে যায়৷

আদালতে খালেদার পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন, দুদকের পক্ষে মো.খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন৷এর আগে রোববার (২৩ নভেম্বর) তিনি শুনানি করেন এবং গত ২০ নভেম্বর শুনানি শুরু করেছিলেন অপর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী৷এর আগে সকালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠন ও অভিযোগপত্রের (চার্জশিট) বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার করা অপর দুই লিভ টু আপিল আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ৷গত ২০ ও ২৩ নভেম্বর দুই কার্যদিবসে জিয়া অরফানেজ মামলায় অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শুনানি করেন খালেদার আইনজীবী খোন্দকার মাহবুব হোসেন ও এ জে মোহাম্মদ আলী৷ অন্যদিকে গত ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিন কার্যদিবসে একই মামলার অভিযোগপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে লিভ টু আপিল আবেদনের শুনানি করেন খালেদার অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন৷দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান৷

রাজধানীর বকশীবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত ঢাকার অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত-৩ এ খালেদার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা দুই দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে৷ বিচারিক আদালতে বেশ কয়েকবার পেছানোর পর সোমবারই (২৪ নভেম্বর) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার প্রথম সাক্ষী ও বাদীর অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে৷এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়৷ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় দুর্নীতি মামলা করে দুদক৷২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক৷ এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালের ৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করেন৷ পরে ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে হাইকোর্ট রুল নামঞ্জুর করেন৷২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন খালেদা৷

অন্যদিকে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ৷বিচারিক আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় গত ১৯ মার্চ দুর্নীতির দুই মামলায্#২৪৯২; খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ মোট ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন৷ অভিযোগ গঠনের ৈবৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পরে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে দু’টি মামলায় দু’টি রিট আবেদন করেন৷ হাইকোর্ট এ রিট আবেদন খারিজ করে দিলে আপিল বিভাগে আপিল করেন তিনি৷গত ১৭ নভেম্বর থেকে এ তিন আপিলের শুনানি একসঙ্গে শুরু হয়৷

গত ১৪ অক্টোবর চেম্বার বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিয়া আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আপিল তিনটির শুনানির জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন৷ ২৩ অক্টোবর এ তারিখ এগিয়ে (পরিবর্তন) আনার জন্য আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)৷ গত ২৬ অক্টোবর এ আবেদন মঞ্জুর করে শুনানি এগিয়ে ৬ নভেম্বর পুনন্রি্ধারণ করেছিলেন আপিল বিভাগ৷পরে ৯ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য থাকলেও তা পেছাতে সময়ের আবেদন জানান খালেদার আইনজীবীরা৷ এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি পিছিয়ে ১৬ নভেম্বর পুননির্ধারণ করেন আদালত৷ ১৭ নভেম্বর কার্যতালিকায় এলে শুনানি শুরু হয়৷দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া,ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন৷মামলার অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান৷

তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন৷ সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে৷ বাকি দুজন পলাতক৷২০১১ সালের ৮ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ৷তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত্‍ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে৷২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা৷

এ মামলার অপর আসামিরা হলেন-খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডবি্লউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক৷ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে৷ খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন৷গত ১৯ মার্চ এ দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিচার শুরু করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত৷