খালেদা জিয়া-Khaleda zia1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর: খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে ঢাকার বকশীবাজার ও আশেপাশের এলাকায় ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারকে দায়ী করে বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে দলটি৷ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করাই ছিল ক্ষমতাসীনদের ওই আক্রমণের উদ্দেশ্য৷এর প্রতিবাদে শুক্রবার সারা দেশে মহানগর ও জেলাসদরে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন৷ দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুপুরে বিএনপি, ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষের রেপ্রক্ষিতে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়৷ফখরুল বলেন, দুপুর বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে হামলা, এতে ৬০০ জন আহত ও ৫০ জনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশে জেলায় জেলায় এবং ঢাকা মহানগরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বিএনপি৷
ফখরুল বলেন, এ অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ফেরার পর এ ঘটনা ঘটেছে৷তারা চেয়েছিল খালেদা জিয়ার গাড়িতে হামলা করতে৷ কিন্তু জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থানে তারা সফল হয়নি৷ কিন্তু এটা সবার কাছে স্পষ্ট, এ হামলা পূর্বপরিকল্পিত৷তিনি বলেন, সরকারের আসলে কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই বিধায় তারা ভিন্নমতের লোকজনকে দমন-নিপীড়ন করছে৷ গণআন্দোলন দমাতে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে৷ এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারকে এ ধরনের আচরণ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, সরকারের এমন কার্যকলাপে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায়ভার তাদের ওপরই বর্তাবে৷ বুধবার দুপুরে ওই সংঘর্ষের চার ঘন্টা পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপির মুখপাত্র৷ তিনি বলেন, মূল পরিকল্পনা ছিল দেশনেত্রীর গাড়িবহরে হামলা৷ আপনারা দেখেছেন তার গাড়িবহর সেখানে পৌঁছানোর পাঁচ মিনিট আগে থেকেই আক্রমণ শুরু হয়৷পরে জনগণের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ছয় শতাধিক মানুষকে তারা আহত করেছে৷এ ঘটনার নিন্দা ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, অন্যথায় যে কোনো অবস্থার জন্য সরকারকেই দায় নিতে হবে৷
মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরে খালেদা জিয়ার জনসভার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন৷
দুই দুর্নীতির মামলার শুনানির দিন থাকায় বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারস খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে আদালতের পথে রওনা হন৷ তার আসার খবরে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই বকশীবাজার থেকে ফজলে রাবি্ব হল পর্যন্ত রাস্তা আটকে মিছিল শুরু করে৷ এই মিছিলের মধ্যেই বকশী বাজার মোড়ে হঠাত্‍শুরু হয় সংঘর্ষ৷এ সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে বৃষ্টির মতো ঢিল ছোড়াছুড়ি চলে৷ সড়ক দ্বীপের গাছ ও বেড়া ভেঙে লাঠি বানিয়ে দুই পক্ষ মারামারিতে লিপ্ত হয়৷ পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়৷ এরই ফাঁকে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর ওই এলাকা পার হয়ে আদালতে যায়৷ এ সময় বিএনপির একদল কর্মীকে লাঠি হাতে গাড়ির সামনে সামনে এগোতে দেখা যায়৷ তাকে নিরাপত্তা দিতে সামনে পেছনে পুলিশের গাড়িও ছিল৷শুনানি শেষে ঘন্টাখানেক পর ওই পথ দিয়েই নির্বিঘ্নে গুলশানে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন৷ ফখরুল বলেন, কয়েকদিন ধরেই অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা নানাভাবে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে অশালীন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে৷ সাথে বিভিন্ন হুমকি ধামকিও ছিল৷ যারই ফল আজকের এই হামলা৷তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ র্যাবের ছত্রছায়ায় এ হামলা চালানো হয়েছে৷ এতে ছাত্রলীগের কর্মীরাসহ সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা অংশ নেয়৷ আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই৷ এ থেকে তাদের বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি৷ এর দায় সরকারকেই নিতে হবে৷
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, এ হামলায় ৬শর বেশি মানুষ আহত হয়েছে৷ যেখানে ১০০ জনের মতো নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে৷ এছাড়া ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ হামলার নির্দেশ দিয়ে থাকতে পারেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷ যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ২৭ ডিসেম্বর আমরা গাজীপুরে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছি৷ আর কারা দিবস উপলক্ষে কাশিমপুরে যান প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি আসার পর থেকেই আওয়ামী লীগ এমন আচরণ করছে৷