begun-1417751530

দৈনিকবার্তা-ঠাকুরগাঁও, ৮ ফেব্রুয়ারি: সবজি ভান্ডার হিসেবে পরিচিত ঠাকুরগাঁও জেলার সবজি চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েছে। ভালো ফলন হলেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।গত ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধের কারণে স্থানীয় বাজারে সবজির দর একেবারে কমে গেছে। পরিবহণ সংকট আর অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে নামমাত্র মূল্যে সবজি কিনছে পাইকাররা। ফলে কৃষক ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি সবজি বাজার গোবিন্দ নগর আড়ৎ। সরেজমিন ওই হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিকেজি আলু ৫ টাকা, ফুলকপি ২.৫০ টাকা, সিম ৮ টাকা, টমেটো ১০ টাকা, শসা ১২ টাকা, মরিচ ২০ টাকা, বেগুন ১০ টাকা, গাজর ৭ টাকা, পেয়াঁজ ২৮ টাকা, রসুন ৬০ টাকা, আদা ১৬০ টাকা এবং বাধাঁকটি প্রতি পিচ ৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আড়ৎতে আলু বিক্রি করতে আসা রহিমানপুর ইউনিয়নের কৃষক সাদেক আলী বলেন, প্রতিবিঘা আলু চাষে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। আর বিক্রি করতে হচ্ছে ৭ হাজার টাকায়।কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রতিটি ফুলকপির উৎপাদনে খরচ হয় ১৩ টাকা। বিক্রি করতে হচ্ছে ৫-৬ টাকায়।পাইকারি ক্রেতা আব্দুল করিম জানান, আগে সবজি ভর্তি ট্রাকের ঢাকায় ভাড়া ছিল ছিল ২২ হাজার টাকা। এখন ভাড়া দিতে হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

সবজি বহনকারী ট্রাক চালক রফিকুল জানান, মালিকরা ট্রাক রাস্তায় বের করতে আগ্রহী না। এ কারণে অতিরিক্ত ভাড়া তাদের দিতে হয়। এ ছাড়া নিজেরাও পেট্রোল বোমা আতংক নিয়ে রাতে ট্রাক বের করেন। তাই বেতনও একটু বেশি নেন। স্বাভাবিক সময়ে চালকদের বেতন ছিল ২ হাজার টাকা। বর্তমান বেতন ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া পথে পথে চাঁদা দিতে হয় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনকে। রাতে টহল পুলিশকেও টাকা দিতে হয়। তা না হলে তারা নিরাপত্তা দেবে না বলে হুমকি দেয়।

ঠাকুরগাঁওয়ের শ্রমিক নেতা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় চালক-হেলপার বলির শিকার হচ্ছে। সরকারও তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। শুধু পেটের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা রাস্তায় বের হচ্ছে। তাই তাদের বেতন কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, ‘আমারও বেশি ভাড়া নিতে চাই না। তবে টানা এই অবরোধে ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিবছর ১২ হাজার হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৪২৫ কোটি টাকার সবজি উৎপন্ন হয়। জেলায় সারা বছরে উৎপন্ন ৩ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন সবজির মধ্যে ২ লাখ মেট্রিক টন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন সবজি বাইরের জেলায় সরবরাহ করা হয়।এ সব সবজি বিক্রি থেকে জেলার কৃষকরা অনেক টাকা আয় করেন। টানা অবরোধে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। এতে করে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।