তোফায়েল

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি: বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, নাগরিক সমাজের সংলাপের প্রস্তাব অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য।পেট্রলবোমা দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যাকারীদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না।মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে সোমবার সন্ধ্যায় নাগরিক সমাজের পক্ষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা স্বাক্ষরিত তিনটি পৃথক চিঠি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের বরাবর পাঠানো হয়।

নাগরিক সমাজের এ প্রস্তাব নিয়ে সরকার কী ভাবছে এমন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তাঁদের ওই প্রস্তাব অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। সন্ত্রাস, নাশকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতাকে আড়াল করার জন্য এবং একটি গণতান্ত্রিক দলকে তাদের সঙ্গে একই কাতারে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে তারা (নাগরিক সমাজ)।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যারা মাকে সন্তানহারা করছে, সন্তানকে মা-হারা করছে, পেট্রলবোমা দিয়ে নিরীহ মানুষকে পোড়াচ্ছে, তাদের সঙ্গে সংলাপের প্রশ্নই আসে না। শামসুল হুদা কেন? যে কেউই বলুক না কেন? তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যদি সংলাপ হতো, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে সংলাপ করত।

তাহলে এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির সমাধান কীভাবে হবে—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কোনো দেশ সন্ত্রাসের সঙ্গে আপস করলে, সে দেশ টেকে না। তিনি বলেন,ড.কামাল হোসেনসহ যাঁরা শোক জানাতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা কি তাঁকে বলেছিলেন যে, ১৫ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারছে না, এসব (হরতাল-অবরোধ) বন্ধ করুন? তার দাবি, এর মধ্য দিয়ে নাশকতাকারীদের আড়াল করে তাদের সঙ্গে সরকারকে এক কাতারে দাঁড় করানো হচ্ছে। সোমবার নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা স্বাক্ষরিত তিনটি চিঠি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেযারপারসনের বরাবর পাঠানো হয় বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ।

দুই প্রধান দলের বিপরীত অবস্থানের কারণে চলমান সঙ্কট অবসানের লক্ষ্যে ওই চিঠিতে সংলাপের উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনকে অনুরোধ জানানো হয়।এর কারণ ব্যাখ্যা করে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, এইসব ব্যক্তিবর্গ সন্ত্রাস, নাশকতা, জঙ্গি তৎপরতাকে আড়াল করার জন্য এবং যে দলটি নাশকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে, তাদেরকে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের সাথে এক কাতারে দাঁড় করানোর ে ষ্টো চালাচ্ছে। সুতরাং এটি গ্রহণযোগ্য নয়।শামসুল হুদা কেন, আর যে কেউ এ উদ্যোগ গ্রহণ করুক তা বাস্তব সম্মত নয়। আপনারা লক্ষ্য করেন, যিনি খালেদা জিয়াকে যে কথা বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে একই কথা বলেছেন, তার মানে সন্ত্রাসীদের সাথে কি আমরা এককাতারে দাঁড়ানো?

যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে, নাশকতা চালায়, মায়ের কোল খালি করে, যারা নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করে, তাদের সাথে সংলাপের প্রশ্নেই আসে না,” ওই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করেন এই মন্ত্রী।নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি অসাংবিধানিক বলে তা মানতে শুরু থেকেই নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।অন্যদিকে এই দাবি আদায়ে গত ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল, যাতে নাশকতায় ইতোমধ্যে অর্ধ শতাধিক মানুষ মারা গেছেন।নাশকতার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী বলে মন্তব্য করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সেই সঙ্গে তা কঠোরভাবে দমনের হুঁশিয়ারিও দিয়ে আসছেন।

এ সংলাপ করা হলে ভবিষ্যতে সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতাকে উৎসাহিত করা হবে।সংলাপ না হলে চলমান সঙ্কটের সমাধান কিভাবে হবে- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তোফায়েল বলেন, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আইনের আওতায় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। কোনো দেশ যদি সন্ত্রাসের কাছে আপস করে, তাহলে তো সে দেশ টেকে না। প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পর চলমান সঙ্কট নিরসনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছেন নাগরিক প্রতিনিধিরা। সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দুটি পৌঁছে দেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা। এর আগে তার স্বাক্ষরিত চিঠি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে পৌঁছে দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রিন্স চঞ্চল মাহমুদ।

চিঠির বিষয়ে নাগরিক ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম সংগঠক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, এ টি এম শামসুল হুদা শনিবার নাগরিক ঐক্য প্রক্রিয়ার গোলটেবিল বৈঠকে দেশের বর্তমান সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ টপওকাশ করেছিলেন।তিনি বর্তমান সঙ্কট নিরসনে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এর অংশ হিসেবে আজকে তিনি চলমান সঙ্কট নিরসনে সবাইকে চিঠি দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন,বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোস্তফা আবিদ খান উপস্থিত ছিলেন। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ৫ ও ৬ ফেব্র“য়ারি ডব্লিউটিও কার্যালয়ে সেবা খাতে বাণিজ্যবিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।