16-02-15-PM_Cabinet-4

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ ফেব্রুয়ারি: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ নির্দেশ দেন। বৈঠক সূত্র জানায়, অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আলোচনার একপর্যায়ে তিনি বলেন, নির্বাচন দিলে কেমন হয়। এরপর দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে তিনি নির্দেশ দেন। এ সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জানায়, সীমানা জটিলতার কারণে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন করা যাচ্ছিল না। সম্প্রতি সীমানাসংক্রান্ত জটিলতার নিরসন হয়েছে।এর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য টাকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন (্ইসি) সচিবালয়। গত ২৫ জানুয়ারি ইসি সচিবালয় থেকে এই চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটির সীমানা জটিলতা নিরসন হলে চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচন হতে পারে। এ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আরও ৪৫ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এদিকে, সরকারের চলতি বাজেটে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে।২০০৭ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও ইসি ঢাকা সিটিতে নির্বাচন করতে পারেনি। ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর সরকার ঢাকা সিটিকে দুই ভাগে ভাগ করে। এরপর সীমানা জটিলতার কারণে ইসি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে এত দিন নির্বাচন করা হয়নি।সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দ্রুত ব্যবস্থা করেন। এ নির্বাচন আর কতদিন ঝুলে থাকবে! যত দ্রুত সম্ভব, নির্বাচন দিয়ে দিন। এভাবে সিটি কর্পোরেশন চলতে পারে না। এতে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।সূত্র আরো জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হকের নাম জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থী করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তবে দক্ষিণে এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। এটা পরে করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় চলমান পরিস্থিতি নিয়েও কথা হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা বলছেন, এই পরিস্থিতির জন্য দুই নেত্রী দায়ী। এখানে আমার দোষ কোথায়? সবই তো ঠিক ছিল। যারা বোমা মারছে, মানুষ হত্যা করছে, তাদের সঙ্গে আমাকে কেন মেলানো হচ্ছে?তিনি বলেন, তাদরে কেন দায়ী করা হয় না? আমাকে কেন দায়ী করছে? আমি তো এসব করছি না।সমালোচকদেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা এসব কথা বলছেন, যারা বিশেষজ্ঞ, তারা দেখে না কেন, কারা এটা করছে? তারা দেখুক? জনগণ কী বলে? আমাকে আর যিনি এসব ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তাকে কেন এক পাল্লায় দেখা হচ্ছে? প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে, প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতা পাচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অর্থ বিভাগের এ প্রস্তব নীতিগত অনুমোদন পায়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সংবাদিকদের বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রন্ত আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ এবং ‘অনুন্নয়ন বাজেটের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ ও পুনঃঅর্পণ সংক্রান্ত পরিপত্র সংশোধনের এই প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।এর ফলে মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা আগের মতো রাখা হলেও অধিদপ্তর, সংস্থা, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা; প্রকল্প পরিচালকদের অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতা বাড়ছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রন্ত আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ নিয়ে ২০০৪ সালে একটি পরিপত্র জারি করে সরকার। আর অনুন্নয়ন বাজেটের অর্থ ব্যয় নিয়ে অর্থ বিভাগ ২০০৫ সালে পরিপত্র জারি করে।২০০৮ সালে পরিপত্র দুটি সংশোধন করা হয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারের কাজ ও বাজেট বেড়েছে। এডিপির আকার বাড়ায় ব্যয়ও বেড়েছে। তাই নতুন করে খসড়া করেছে অর্থ বিভাগ।সরকারের পূর্তকাজ বা মালামাল কেনার ক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের ক্ষেত্রে ১০ কোট টাকা পর্যন্ত অনুমোদন দিতে পারে মন্ত্রণালয়। টাকার পরিমাণ এর বেশি হলে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিতে হয়।অর্থ বিভাগ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও মন্ত্রিসভা তাতে সায় দেয়নি বলে জানান সচিব।

মন্ত্রিসভা বলেছে, প্রস্তাবগুলো মন্ত্রিসভা কমিটিতে এলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সিদ্ধান্তের গুণগত মান বাড়ে, ভুলত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা কমে। স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতাও বাড়ে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতা কতটুকু বাড়ছে মন্ত্রিসভা তা নির্ধারণ করেনি জানিয়ে মোশাররাফ বলেন, অর্থমন্ত্রী প্রকল্প বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত দেবেন।মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতা বাড়ানো হলে মাঠ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া তরান্বিত হবে, উন্নয়ন কাজে গতি আসবে বলে মনে করছে মন্ত্রিসভা।অর্থ ব্যয় সংক্রান্ত পরিপত্র সংশোধনের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী নিজেই অনুমোদন করতে পারেন। তবে গুরুত্ব বিবেচনা এবং সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় মন্ত্রিসভা কমিটিতে আসায় তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হয়েছে বলে জানান সচিব।

তিনি জানান, ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ে বোর্ড (রহিতকরণ) আইন ২০১৪’ মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পেয়েছিল। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ের পর আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, এ আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই।এ কারণে মন্ত্রিসভা এর আগে দেওয়া নীতিগত অনুমোদনটি বাতিল করেছে।এছাড়া রোববার অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়া প্রধামন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদারকে মন্ত্রিসভা ধান্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা আবদুস সোবহানের কাজের প্রশংসা করেছে।প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সোহবান ৩৪ বছরের চাকরি জীবনে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন।এদিকে, সোমবারের (নিয়মিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে নিজ মন্ত্রণালয়ের এজেন্ডা থাকলেও সভায় অংশ না নেওয়ায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি আইনও আলোচনায় আসেনি।

হরতাল-অবরোধের তিবাদে শ্রমিক, কর্মচারী, পেশাজীবী, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনটি এজেন্ডা থাকলেও নৌমন্ত্রণালয়ের একটি এজেন্ডা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।তিনি বলেন, ১৯০৮ সালের পোর্টস অ্যাক্ট আছে। এটা সংশোধন করতে হবে। মন্ত্রী ( নৌপরিবহনমন্ত্রী) সোমবার ছিলেন না। তাই, এটা (এজেন্ডা) আলোচনা হয়নি।মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ে বোর্ড (রহিতকরণ) আইন- ২০১৪ মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।পরে তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে আইনটির প্রয়োজনীয়তা নেই বলে মতামত আসে। ফলে, মন্ত্রিসভা এর আগে দেওয়া নীতিগত অনুমোদনটি বাতিল করে। মন্ত্রিসভা কোনো অনুমোদন বাতিল করলেও মন্ত্রিসভায় আনতে হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।