court1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০২ মার্চ: অবরোধকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে হরতাল ও অবরোধে আইনগত বাধা নিষেধ আরোপে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা-ও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।সোমবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। চারটি ব্যবসায়ী সংগঠনের করা একটি রিটের শুনানি নিয়ে আদালত এ আদেশ দেন।স্বরাষ্ট্রসচিব, তথ্যসচিব,বাণিজ্যসচিব ও আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, বিকল্প ধারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।রুলে অবরোধ ও হরতালে পেট্রলবোমা ও ককটেল হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে কেন বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অসাংবিধানিক প্রাণঘাতী অবরোধ ও ভীতিকর হরতাল রোধে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।

সোমবার রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।পরে ইমতিয়াজ বলেন, অবরোধকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এবং অবরোধে আইনগত বাধা নিষেধ আরোপে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, এটিসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে আদালত রুল দিয়েছেন।হরতাল-অবরোধে সামগ্রিক অচলাবস্থা দূর এবং সুষ্ঠু, স্বাভাবিক ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ফেরত আনার লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার রিট আবেদন করে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ। এর ওপর রোববার ও সোমবার শুনানি হয়। পরে আদালত এ রুল জারি করেন।এর আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের চলমান অবরোধ-হরতালে যেসব নাশকতার ঘটনা ঘটছে, তার চিত্র তুলে ধরে জনস্বার্থে হরতাল-অবরোধে সন্ত্রাস, নাশকতা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে ফেব্র“য়ারি মাসে একটি রিট করা হয়। কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. শাহীনুর ইসলাম শাহীন রিট আবেদনটি করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৫ ফেব্র“য়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ কয়েকটি বিষয়ে রুল ও অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেন।

সরকার ও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোসহ ৪৮ জন বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।ইমতিয়াজ মইনুল সাংবাদিকদের জানান, আদালত নয়টি রুল জারি করেছেন। রুলগুলো হলো- অবরোধকে কেন অসাংবিধানকি ঘোষণা করা হবে না, হরতালের ওপর আইনগত বিধি-নিষেধ আরোপ করার ক্ষেত্রে সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, যৌক্তিক সময় না (আগাম সময়) দিয়ে হরতাল আহবান করাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, হরতাল-অবরোধে (৬জানুয়ারি থেকে যতোদিন হরতাল-অবরোধ চলে) ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের ঋণখেলাপি হওয়া সংক্রান্ত ক্রেডিট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’র (সিআইবি) তালিকা স্থগিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, হরতাল-অবরোধের সময়ে ব্যাংক ঋণের সুদ স্থগিত রাখার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, ছোট ব্যবসায়ীদের ঋণের ক্ষেত্রে বড় ব্যবসায়ীদের মতো(১২ বছরের জন্য সকল ঋণকে পুনঃতফসিল করা) কেন সুযোগ দেয়া হবে না, হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণে কেন সরকার একটি ফান্ড গঠন করবে না, হরতাল-অবরোধে ক্ষতির জন্য কেন সকল রাজনৈতিক দল দায়ী হবে না, আর এর জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতে কেন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।এছাড়া গণমাধ্যমে হরতালের (সহিংস) ঘোষণা প্রচার অপরাধের উস্কানি হিসেবে কাজ করে কি-না, এটা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কি-না সেটা খতিয়ে দেখে, যদি এ কাজ করে তাহলে এটাকে (হরতালের প্রচার) বন্ধ করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ,বিকেএমইএ, বিটিএমইএর পক্ষে দায়ের করা এই রিট আবেদনে বাদী হিসাবে রয়েছেন চার সংগঠনের সভাপতিরা।নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট গত ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ চালিয়ে আসছে। আর ফেব্র“য়ারির শুরু থেকে সাপ্তাহিক ছুটি বাদে প্রতিদিনই চলছে হরতাল।অবরোধ ও হরতালের মধ্যে নাশকতা ও সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে গেছে, যাদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে।যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানালেও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন ২০ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া।রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে ব্যবসায়ীরা আইন করে হরতাল-অবরোধ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, জনগণ চাইলে হরতাল বন্ধে আইন হবে।