107847_1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ এপ্রিল: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থী গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। এদিকে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে সিপিবি বাসদ সমর্থিত উত্তরের প্রার্থী আব্দুল্লা কাফী ও দক্ষিণে বজলুর রশীদও দুপুরের পর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনকে তামাশা’ ও প্রহসন বলে নির্বাচন ও এর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলেন মেয়র প্রার্থী জোনায়েদ সাকি (জোনায়েদ আবদুর রহিম সাকি)।মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর হাতিরপুলে তার দল গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

সাকি বলেন, যেভাবে ভোটকেন্দ্র দখল, গণসিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে দেওয়া হয়েছে, তাতে এটাকে নির্বাচন বলে না। এ প্রক্রিয়ার ওপরে আমাদের আস্থা রাখার কোনো সুযোগ নেই। তাই ফলাফলের ওপরেও আমাদের কোনো আস্থা নেই। সুতরাং যে নির্বাচনের ওপরে আমাদের আস্থা থাকবে না, আস্থা না থাকলে সেই নির্বাচন তো প্রত্যাখ্যানই করতে হয়।নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য প্রশাসনিক কারসাজি ব্যাপকভাবে বিরাজ করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। নির্বাচন প্রহসনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। জনগণ তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। তাই আজকের নির্বাচনের ওপরে আমাদের পূর্ণ অনাস্থা জ্ঞাপন করছি। কাজেই এ নির্বাচনের যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে, তার ওপরও আমাদের কোনো আস্থা নেই।
পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, কর্মীদের হুমকি দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগের কথা তুলে ধরে সাকি বলেন, আমি নিজে ভোট দিতে গিয়ে দেখেছি যে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। তখন থেকেই মনে সন্দেহ হচ্ছিল যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না।বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রায় সবখানেই ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র দখল ও প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ আসে তাঁর কাছে। অনেকেই তাঁর কাছে এসে জানতে চান যে, কেন এই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে তালাবদ্ধ করে গণসিল মারা হয়েছে।এর আগে তিন সিটিতেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।

নির্বাচনে জাল ভোট, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব, পেশী শক্তির প্রভাব, পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে জোনায়েদ সাকি বলেন, সকাল থেকেই এ ধরনের কার্যকলাপ চলে আসছিল। কিন্তু আমরা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। এ পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। স্বভাবতই প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ ও পেশী শক্তির প্রভাবে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত হবে। তাই আমি নির্বাচন ও এর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি।তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, সকালে ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই আমাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছিল। ভোটকেন্দ্র তালাবদ্ধ করে পুরোদমে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। ৪০টি কেন্দ্র থেকে আমাদের পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদেরও তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি।সাকি বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার পর যখন থেকে আমরা চারণায় নেমেছিলাম, তখন থেকেই ভাবছিলাম এ ধরনের ঘটনা ঘটবে, কারণ নির্বাচন কমিশন (ইসি) কখনো নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেনি। কোনো অবিচারের প্রতিকার করতে পারেনি তারা। আজও এসব কার্যকলাপে ইসি নীরব ছিল। জাল ভোট দেওয়ার সময়, পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়ার সময় তাদের কোনো ভূমিকাই ছিল না।তিনি বলেন, সকালে আমি যখন মগবাজারের ইস্পাহানি গার্লস স্কুলকেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছিলাম, তখন থেকেই এ অনিয়ম-জালিয়াতি লক্ষ্য করি। আমি এই নির্বাচনে সম্পূর্ণ অনাস্থা প্রকাশ করছি। এই নির্বাচন তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সাকির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আহমেদ কামাল, সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, সদস্য অরূপ রাহী, তসলিমা আখতার প্রমুখ।