Rajshahi City Corporation Lose News 10-7-15দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ১০ জুলাই ২০১৫: গত ২৯ জুনের কথা৷ রাজশাহী নগরীর পোস্টাল একাডেমীর সামনে ২৫-৩০ শ্রমিক ড্রেন নির্মাণের কাজ করছেন৷ একদিকে নির্মাণকাজ শেষে হওয়ার পরে অপপ্রানত্মে গিয়ে তারা কাজ করছেন৷ এসময় হঠাত্‍ ধ্বসে পড়লো আগের দিন নির্মাণ করা ড্রেনের প্রায় ৩০ ফিট অংশ৷ এরপর দ্রুত ঠিকাদারের নির্দেশে ওই ভাঙা অংশ তড়িঘড়ি করে ফের কোনো মতে পুনঃনির্মাণ করলেন শ্রমিকরা৷ কিন্তু তত্‍ক্ষণে বিষয়টি গোচরে যায় সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম-উল-আযিমের৷ এরপর তিনি সন্ধ্যার আগে আগে আগে ওই ভাঙা অংশ দেখতে যান৷ তবে তার আগেও ভাঙা অংশে রড বাধাসহ নানাকাজ এরই মধ্যে সেরে ফেলেন ঠিকাদারের লোকজন৷ এ ঘটনায় মেয়র নিযাম-উল-আযিম ওইদিনই সংবাদ মাধ্যমে কাজের মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দেন৷ কিন্তু ওই পর্যনত্মই শেষ৷ কাজ পাওয়া ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরজুড়ে চলতি ১৪টি প্রকল্পে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণকাজ করছে সিটি করপোরেশন৷ বর্ষার মধ্যে এই ড্রেন নির্মাণকাজ নিয়ে চলছে তুঘোলকি কান্ড৷ কখনো বৃষ্টির মধ্যে আবার কখনো স্বাভাবিক পরিবেশে ড্রেন নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে বিদ্যুত্‍ গতিতে৷ কিন্তু এ কাজ নিয়ে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ৷ সিটি করপোরেশনের সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তাদের হাত করে ঠিকাদাররা ইচ্ছেমতো এই ড্রেন নির্মাণকাজ করে চলেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন নগর সংস্থার একাধিক সূত্র৷ ফলে ড্রেনের কাজও হচ্ছে খুবই নিম্নমাণের৷ এ কারণেই কাজ শেষে হতে না হতেই কোথাও কোথাও ধ্বসে পড়ছে নবনির্মতি ড্রেন৷
আবার ধ্বসে পড়া রোধে নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে ড্রেন৷ এতে করে নির্মাণাধীন এসব ড্রেনের স্থায়ীত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন খোদ নগর সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা৷
নগর সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে, নগরীতে ৬৬ কিলোমটিার ড্রেন নির্মাণ কাজ পেয়েছেন ১২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান৷ এর মধ্যে মো: আবুল হোসেন এন্টার প্রাইজ একাই পেয়েছেন প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি কাজ৷ বাকি ১১টি কাজ পেয়েছেন ১১ জন ঠিকাদারা৷ এর মধ্যে নগরীর গৌরহাঙ্গা এলাকার ‘মা বিল্ডার্স’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পেয়েছেন ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি, নিউ মার্কেট এলাকার ‘কে অ্যান্ড জে’ এন্টারপ্রাইজ পেয়েছেন ৩ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি, মহিষবাথান এলাকার ‘সেবারা এন্টার প্রাইজ’ পেয়েছেন ২ কোটি ১২ লাখ ৪৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি, নগরীর হড়গ্রাম এলাকার ‘এমএস মাসুদ ট্রেডার্স’ পেয়েছেন ২ কোটি ১৩ লাখ ৯ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি, দরগাপাড়া এলাকার ‘এমএস লিজা কনস্ট্রাকশন’ পেয়েছেন ২ কোটি ১২লাখ ৪৬ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি, শিরোইল কলোনী এলাকার ‘মো: কবির হোসেন’ পেয়েছেন ২ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার কাজ, গনকপাড়া এলাকার ‘খন্দকার কন্সট্রাকশন’ পেয়েছেন ২ কোটি ৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকার কাজ, নগরীর লক্ষীপুর এলাকার ‘ফরিদা ইসলাম’ পেয়েছেন ২ কোটি ৩ লাখ ২৫ টাকার কাজ, হড়গ্রাম এলাকার ‘আজিজুল ট্রেডার্স’ পেয়েছেন ২ কোটি ৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার কাজ, নগরীর আমবাগান এলাকার ‘বিসমিলস্নাহ ট্রেডিং’ পেয়েছেন ২ কোটি ১৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকার কাজ এবং দরিখরবনা এলাকার ‘রিথিন এন্টার প্রাইজ’ পেয়েছেন ১ কোটি ৫৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকার কাজ৷

রাসিকের দেওয়া তথ্য মতে, এই নিমার্ণকাজগুলোর অধিকাংশই ৫০ ভাগের ওপরে কাজ শেষ হয়েছে৷ কোনো কোনোটি প্রায় শেষের দিকে৷ আসছে ঈদের আগে বিল নিতে তড়িঘড়ি করে এসব কাজ শেষ করা হচ্ছে৷ নগর সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে, বহিস্কৃত সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সময়কালে এই কাজগুলো ভাগ-বাটোয়ার করে দেওয়া হয় আ’লীগ ও বিএনপি পন্থি ঠিকাদারদের মাঝে৷ আর কাজ পাওয়ার পরে প্রভাবশালী এই ঠিকাদাররা নগর সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ইচ্ছেমতো ড্রেন নির্মাণ করে চলেছেন৷ স্থানীয় পোস্টাল একাডিমী এলাকার বাসীন্দা নাইমুল কবির বলেন, ‘যেভাবে ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে, তাতে স্থানীয় এলাকাবাসীর কোনোই কাজে আসবে না৷ আবার এ স্থায়ীত্ব নিয়েও রয়েছে শঙ্কা৷ খুবই নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে৷ ফলে নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই ড্রেন ধ্বসে পড়ছে৷’

নগরীর হেতেম খাঁ এলাকার বাসীন্দ আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘বৃষ্টির মধ্যেও কাজ চলছে৷ এতে করে যেটুকু মশলা দেওয়া হচ্ছে, তাও ধুয়ে নেমে যাচ্ছে৷ জনরোষ থেকে রক্ষা পেতেই দ্রুত গতিতে ইচ্ছেমতো কাজ করছেন ঠিকাদারের লোকজন৷’ এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ড্রেন নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্ব প্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী নুর হোসেন বলেন, ‘কাজের মান ঠিকই আছে৷ তবে বৃষ্টির মধ্যে দুই-এক জায়গায় কাজ করার কারণে কিছু সমস্যা হয়েছে৷ পরে ঠিকাদার সেগুলো আবার ঠিক করে দিয়েছেন৷’ জানতে চাইলে নগর সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ড্রেন নির্মাণকাজগুলো একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে দেখ-ভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ তিনিই এসব নিয়ে ভালো বলতে পারবেন৷’