অকাল বর্ষণে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০১৫: অসময়ের বর্ষণে রাজধানীর দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে।গত দুদিনের টানা বর্ষণে নগরবাসীর কাজে ছন্দপতন ঘটেছে। বিশেষ করে শরতের অকাল বর্ষণ অনেকটা অভিশাপ হিসেবেদেখা দিয়েছে।আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে,আরো দুদিন বৃষ্টিপাত হতে পারে।বৃষ্টমানেই জলজট। সেই সাথে যানজট যেন নিত্যসঙ্গী।সোমবার সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবারও দিনভর বর্ষণ হয়েছে রাজধানী ঢাকায়।এই বৃষ্টিতে বরাবরের মতো শান্তি নগর, মালিবাগ, রাজারবাগ, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মওসুমের পরিবর্তন এবং উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমের বাতাসের কারণে এ বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি আরো দুই দিন থাকতে পারে । আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন জানান, বৃষ্টি আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থাকতে পারে।এদিকে বৃষ্টিপাতের কারনে রাজধানীতে হালকা শীত পড়তে শুরু করেছে।আগামী দুর্গাপূজার সময় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এসময়ে রোদ থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, সোমবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি দেশের মধ্যাঞ্চল থেকে দক্ষিণে এবং সিলেট বিভাগে হচ্ছে। তবে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বৃষ্টি হচ্ছে না।মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ১২ মিলিমিটার (মিমি), পতেঙ্গায় ১৫ মিমি, সন্দ্বীপে ১৭ মিমি, রাঙ্গামাটিতে ১৬ মিমি, সিতাকুন্ডে ১৩ মিমি এবং হাতিয়ায় ৪৩ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ‘অধিক সেবার কথা বলে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) দুই ভাগ করা হলেও সেবা বাড়েনি। উল্টো বেড়েছে জনদুর্ভোগ, সমস্যা ও হয়রানি। মঙ্গলবার সকালের ভারী বর্ষণে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। নিউমার্কেট, আজিমপুর, লালবাগ, মিরপুর, সেনপাড়া পর্বতা, মালিবাগ, রাজারবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, শাহজাহানপুর, গ্রিন রোডসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। কোনো কোনো এলাকায় দোকানপাট ও বাড়িঘরেও পানি ঢুকে পড়ে।একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে যাওয়ার কারণে অলিগলির রাস্তাগুলো বেহাল হয়ে পড়ছে। মিরপুরের রূপনগর, দুয়ারীপাড়া, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মণিপুর এবং মগবাজার, পুরান ঢাকা ও গুলশানের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাগুলো এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে। মগবাজার এলাকায় ফ্লাইওভারের কাজ চলায় রাস্তায় বড় বড় গর্ত হয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে।নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, আমাদের সরকার বা কর্তৃপক্ষ মনে হয় নগরবাসীকে কষ্ট দিতে আনন্দ পায়। না হলে মেগাসিটি বলা হয় যে শহরকে, সেই শহরে এত অব্যবস্থাপনা থাকে কী করে? সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো, দিন দিন এটা আরও খারাপ হচ্ছে। কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা নেই। রাজউক কিছু পরিকল্পনা করলেও বাস্তবায়ন করতে পারে না। ওয়াসার কাজ ছিল সুচারুভাবে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তারা সেটাও পারছে না। আর ফ্লাইওভারগুলো যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এর মাধ্যমে কিছু লোকের টাকা হচ্ছে। কিন্তু জনগণের কোনো উপকার হচ্ছে না।জলাবদ্ধতা নিয়ে সমন্বয়হীনতা: সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে জলাবদ্ধতা এখন নিয়মিত দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর রাস্তাগুলো দেখভাল করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু রাস্তার পানি সরানোর কাজটি করে ঢাকা ওয়াসা। অথচ এই দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নেই। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত চার বছরে ৩০২ কোটি খরচ করা হলেও সমস্যা কমেনি।

ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা জলাবদ্ধতাকে জলজট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, রাজধানীর পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথগুলো বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। এখন কৃত্রিম উপায়ে পানি সরানো হচ্ছে। ফলে বৃষ্টি হলে ‘জলজট’ কমতে কিছু সময় লাগবেই।তিনি বলেন, ওয়াসার কাজ পানি সরবরাহ ও শোধন করা। কিন্তু সেটাকে জোর না দিয়ে তাঁরা ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ করছে। কিন্তু তাদের সেই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই। ফলে লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আইনানুযায়ী এ কাজ করার কথা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (এক হাজার হেক্টরের বেশি হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড করার কথা)। কোথায় খাল কাটাসহ কোথায় কী দরকার, সেটা নকশা করে করতে পারত পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু সেটা না হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।মঙ্গলবার কখনো মুষলধারে আবার কখনো বা থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টিতেই ডুবে গেছে নগরের অধিকাংশ নিচু এলাকা। টানা বর্ষণে ঢাকার বেশ কিছু এলাকা হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টিতে রাজধানীর চানখাঁরপুল, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, পান্থপথ, বসুন্ধরা মার্কেটের পেছনের রাস্তা, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, আরামবাগ, মালিবাগ, মৌচাক, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কল্যাণপুর, পল্লবী, ভাসানটেক, বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা, পূর্ব রামপুরা, ফার্মগেট, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর অনেক এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও গলিতে পানি জমেছে। রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর, ফার্মগেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অফিসগামী অনেক মানুষ ছাতা মাথায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা গাড়িতে ওঠার সুযোগ না পেলেও রাস্তায় গাড়ির অভাব নেই। কারওয়ান বাজার-ফার্মগেট এই এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।সকালে নিউমার্কেট থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন মনিরুল ইসলাম। কিন্তু বৃষ্টিপাত ও যানজটের কারণে ৩ ঘন্টা পর গন্তব্য স্থলে পৌঁছান। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় ভয়বহ যানজটের কবলে পড়েন। টানা বর্ষণের কারণে প্রায় সব ভর্তি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক দুর্ভোগে পড়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানির কারণে যান চলাচল ব্যাহত হতে দেখা গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন অফিসগামী মানুষ। গাড়ি না পেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অনেক যাত্রীকে। রাজধানীর অফিসগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা কম। ফুটপাতের অনেক দোকান খোলা হয়নি। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়েও অনেকে পড়েন বিপাকে। কাদাজলের মধ্যেই চলে কষ্টের কেনাকাটা।