পৌর নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবে মন্ত্রী-এমপিরাদৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ নভেম্বর ২০১৫: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো দলীয়ভাবে পৌরসভা নির্বাচনেও প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় মন্ত্রী-সাংসদদের অংশ নেয়ার সুযোগ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এমন কথাই জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। তিনি বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনের মতোই সরকারের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তিরা সরকারি সুবিধা ছেড়ে প্রচারণা করতে পারবেন।বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার পৌরসভা নির্বাচন আচরণ বিধিমালার সংশোধন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি।শাহনেওয়াজ বলেন, ‘সরকারি সুবিধা ছেড়ে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন-খসড়া বিধিতে এ সুপারিশ করেছি আমরা।তিনি জানান, দলভিত্তিক পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানে অধ্যাদেশ জারির পর নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা সংশোধনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব হিসেবে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে সংশোধিত বিধিমালা জারি করবে ইসি।

বিদ্যমান আইনে স্থানীয় সরকারে মন্ত্রী-সাংসদ,মেয়রদের প্রচারণায় অংশ নেয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।তবে দলীয়ভাবে এ নির্বাচন হওয়ায় সংসদ নির্বাচনের মতোই আচরণবিধি করা হচ্ছে বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার।ইসি কর্মকর্তারা জানান, দশম সংসদ নির্বাচনে ‘নির্বাচনকালীন সময়ে’ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সুবিধা নিয়ে প্রচারণা করায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। এবার দলভিত্তিক হওয়ায় স্থানীয় নির্বাচনেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে।নির্বাচনী ব্যয়সীমা লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট দলকে ৫ লাখ টাকা জারিমানার বিধান রেখে স্থানীয় সরকার নির্বাচন (পৌরসভা) বিধিমালা চূড়ান্ত করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।বিধিমালায় প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় আসনপ্রতি দলের ব্যয়সীমা রাখা হচ্ছে ১ লাখ টাকা। তবে কোন দল একটি মাত্র পৌরসভায় প্রার্থী দিলে সর্বোচ্চ ব্যয় দেখাতে পারবে ১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে বিধি লঙ্ঘন করলে দলকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে। নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব কমাতেই এমন বিধান করা হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান।সংশোধিত এই বিধিমালাটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বিধিমালা চূড়ান্ত করার আগে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন তার প্রধান স্টেকহোল্ডার রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতও নেয়া কথা ভাবছে। এ ক্ষেত্রে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে অথবা তাদের লিখিত মতামত নেয়া হতে পারে বলে বাসসকে জানিয়েছে কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরের এক কর্মকর্তা।সংশোধিত বিধিমালায় রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আর কোন সুযোগ থাকছে না।প্রস্তাবিত বিধিমালায়, প্রাথমিকভাবে দল একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন দেবে। মনোনয়পত্র বাছাইয়ের পর নির্দিষ্ট সময়ে প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চূড়ান্তভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে দলের একজন প্রার্থীই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আগে থেকেই দলের বাইরে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিতে হবে।বিধিমালার বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের পক্ষে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহকের স্বাক্ষরিত এই মর্মে প্রত্যয়ন থাকতে হবে যে, প্রার্থীকে ওই দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক দল মেয়র,সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে প্রাথমিকভাবে একাধিক মনোনয়নপত্র প্রদান করতে পারবেন। রাজনৈতিক দল ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহকের নাম, পদবি ও নমুনা স্বাক্ষরসহ একটি চিঠি তফসিল ঘোষণার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন এবং তার অনুলিপি নির্বাচন কমিশনেও দাখিল করতে হবে। যদি একই পদে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন প্রদান করা হয়ে থাকে তবে বিধি অনুযায়ী প্রত্যাহার করা যাবে।সংশোধিত বিধিমালার উপবিধি ২-এ বলা হয়েছে বৈধভাবে মনোনীত কোনো প্রার্থী তদকর্তৃক স্বাক্ষর একটি লিখিত নোটিশ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিন বা তার পূর্বে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্বয়ং বা লিখিত অনুমোদিত কোন প্রতিনিধি মারফত দাখিল করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কোন নোটিশ কোন অবস্থাতেই প্রত্যাহার বা বাতিল করা যাবে না।

এদিকে পূর্বে নির্বাচিত হওয়া প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে কিছু সুবিধা পাবেন।এক্ষেত্রে বিধিমালার সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মেয়র বা সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর বা সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ইতোপূর্বে নির্বাচিত হয়ে থাকলে তার জন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ভোটারের স্বাক্ষর তালিকা সংযুক্ত করার প্রয়োজন হবে না।স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী কোনা প্রার্থীকে তার নির্বাচিত এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জুড়ে দিতে হয়। তবে সংশোধনীতে মেয়রের জন্য ২শ’ এবং কাউন্সিলরদের জন্য ৫০ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জুড়ে দেয়ার বিধান করা হচ্ছে।নভেম্বরে মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষের দিকে ২৪৫ পৌরসভায় দলীয়ভাবে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে সংশোধিত আইন অনুযায়ী নির্বাচনী বিধিমালা ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা সংশোধনের কাজও করছে ইসি।গত সোমবার রাষ্ট্রপতি পৌরসভা আইনের সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি করে, মঙ্গলবার এর গেজেট প্রকাশিত হয়।