bb

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে ব্যবসায়ী জগতের বড় বড় খেলোয়াড়রা জড়িত। তিনি শুধু চাকরির উন্নতির লোভে পরিণাম বিবেচনা না করেই এই অপরাধে জড়িয়ে গেছেন। রিজার্ভ চুরির অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে ফিলিপাইন সিনেট কমিটির চতুর্থ দফা শুনানিতে এমন কথাই বলেছেন রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মাইয়া সান্তোস দেগুইতো।মঙ্গলবার রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট চুরি অর্থ ফিলিপাইনে এনে ভাগাভাগি নিয়ে আরও তথ্য জানতে এ শুনানির আয়োজন করে সিনেট কমিটি। এএমএলসির নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাকে-আবাদ বলেছেন, বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত দিতে তারা সম্পদ বাজেয়াপ্তের মামলা করবেন।এএমএলসির নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাকে-আবাদ বলেছেন, বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত দিতে তারা সম্পদ বাজেয়াপ্তের মামলা করবেন।

ফিলিপিন্সে চুরি করে নেওয়া বাংলাদেশের রিজার্ভের পুরো ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আদায়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ক্যাসিনো ও জাংকেট অপারেটরদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার মামলা করবে মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষ (এএমএলসি)।আগামী সপ্তাহেই এই মামলা করা হবে বলে অর্থ চুরির বিষয়ে সিনেটে মঙ্গলবারের শুনানিতে জানিয়েছেন এএমএলসির নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাকে-আবাদ।

ফিলিপিন্স ও ইন্দোনেশিয়ার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম র্যর‌্যাপলার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।শুনানিতে তিনি বলেন, আমরা এর মধ্যেই আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহেই এই (বেসামরিক সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ) মামলা করতে পারব।ফিলিপিন্সে এই ধরনের মামলায়, অবৈধ সম্পদ ব্যবহার করা হয়েছে এমন প্রমাণ পেলে সরকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে। সেক্ষেত্রে সম্পদের মালিকের আইনি লড়াইয়ের অধিকার থাকবে। কিন্তু তাকে প্রমাণ করতে হবে যে, তার সম্পদ বৈধ অর্থ থেকে এসেছে।ফেব্র“য়ারির শুরুতে ভুয়া নির্দেশনা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সের রিজল কর্মাশিয়াল ব্যাংক পাঠানো হয়।রিজল ব্যাংকের চারটি অ্যাকাউন্ট থেকে ওই অর্থ ক্যাসিনোর জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ফিলিপিন্সের মুদ্রা ব্যবস্থায় মিশে যায় বলে স্থানীয় পত্রিকাগুলি খবর প্রকাশ করে।

রিজার্ভ চুরির ঘটনার পেছনে চীনা বংশোদ্ভূত ক্যাসিনোর জাঙ্কেট অপারেটর কিম অংকেই মূল ব্যক্তি বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল।এর মধ্যে দুই দফায় ৫৪ লাখ ডলারের বেশি অর্থ এএমএলসির কাছে ফেরত দিয়েছেন কিম।তবে এই ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বেইজিংয়ের শুহুয়া গাও এবং ম্যাকাওয়ের ডিং জিজে নামে দুই জাঙ্কেট এজেন্ট ফিলিপিন্সে নিয়ে যায় বলে সিনেট কমিটির শুনানিতে দাবি করেছেন তিনি।

আর শুহুয়ার কাছ থেকে পাওয়া ধার উসুল হিসেবে পাওয়া অর্থই তিনি ফেরত দিচ্ছেন, চুরির সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই।অংয়ের ভাষ্যমতে, গাও প্রায়ই ফিলিপিন্সে যাওয়া-আসা করেন এবং গত আট বছর ধরে জুয়ার মক্কেল (জাঙ্কেট এজেন্ট) এনে দেন। এই মহলে পরিচিতি রয়েছে তার। ম্যাকাওয়ের ব্যবসায়ী ডিংকেও তিনিই তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

গাও একবার সোলায়ার রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনোতে এক সপ্তাহের মধ্যে ৪৫০ মিলিয়ন ফিলিপিনো পেসো (প্রায় এক কোটি ডলার) হেরে ওই অর্থ তার কাছ থেকে ধার করেছিলেন।বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থ থেকে ওই এক কোটি ডলার গাও তাকে পরিশোধ করেন বলে সিনেট শুনানিতে দাবি করেন অং।এই এক কোটি ডলারের বাইরে দুটি ক্যাসিনোর জুয়ার অ্যাকাউন্টে থাকা আরও ৫৫ লাখ ডলার ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।এছাড়া আরও ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার এখনও হাতবদল হয়নি এবং তা মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের কাছে থাকতে পারে বলে অংয়ের দাবি। তবে তা অস্বীকার করেছেন ফিলরেমের কর্মকর্তারা।এদিকে লোপাট ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে প্রায় অর্ধেক অর্থ এখনও ফিলিপিন্সে রয়েছে জানিয়ে তা বাংলাদেশকে ফেরত দেওয়া সম্ভব বলে মঙ্গলবারের শুনানির পর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন দেশটির সিনেটর রালফ রেক্তো।

সিনেটরের ওই বিবৃতির বরাত দিয়ে ম্যানিলা বুলেটিন জানায়, প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার দুটি ক্যাসিনো ও মুদ্রা বিনিময় ব্রোকারেজ হাউজের কাছে রয়েছে।গত ফেব্র“য়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন সুইফট কোড ব্যবহার করে ১০১ মিলিয়ন মার্কির ডলার তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। এনিয়ে ম্যানিলাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দ্য ইনকোয়ারার গত ৫ ফেব্র“য়ারি রিপোর্ট প্রকাশের পর গত একমাসে এ নিয়ে এটি চতুর্থ দফা শুনানি।বক্তব্যে দেগুইতো বলেন, ফিলিপাইনে এনে চুরির প্রায় ৪ বিলিয়ন পেসো বিলি-বণ্টনের অপরাধের সব দায় যেভাবে আমার ওপর চাপানো হয়েছে তা দেখে মনে হচ্ছে মধ্যম সারির একজন ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে আমি অনেক ক্ষমতাধর!

শুনানিতে লিখিত বক্তব্যে চাকরিচ্যুত এ ব্যাংক কর্মকর্তা আরো বলেন, সত্যিকার বিবেচনায় এ ধরনের উঁচু মার্গের অপরাধ সংগঠন তখনই সম্ভব যখন এ কাজে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের কেউ জড়িত থাকেন। একই সঙ্গে একাধিক দেশে ওই ব্যবসায়ীর যথেষ্ট প্রভাব ও প্রতিপত্তি থাকতে হবে। দেগুইতো বলেন, পরিনাম না বুঝেই আমি নিজেকে ঘটনায় জড়িয়েছি। এটাও ঠিক যে, কাজটা সম্পন্ন করে ব্যাংক ম্যানেজার হিসেবে আমি আমার কর্মদক্ষতা প্রমাণ করতে এবং পেশায় এগিয়ে যেতে চেয়েছি। স্বামীর পাশাপাশি পরিবারকে সহায়তার জন্য চেয়েছি চাকরিতে আরও উপরের পদে যেতে। কর্মজীবী প্রত্যেক মায়ের এ আকাঙ্ক্ষা যৌক্তিক বলেই মনে করেন তিনি।রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার সাবেক এ ব্যবস্থাপক তার নিজের শাখায় ভুল তথ্য দিয়ে পাঁচ ব্যবসায়ীকে অ্যাকাউন্ট খুলতে সহায়তা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রিজার্ভ চুরির যে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফিলিপাইনে গেছে তা ওই পাঁচ অ্যাকাউন্টে রেখে ভাগ-বাটোরোয়ায়ও দেইগুতোর সহায়তা ছিল বলে অভিযোগ আছে।

তবে শুনানিতে দেগুইতো দাবি করেন, ষড়যন্ত্র যদি ওই প্রক্রিয়ায় কিছু হয়ে থাকে সে সম্পর্কে তার ধারণা নেই। শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে তার ভুল হয়ে থাকলে সেটা নিশ্চয়ই রিজাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট লরেনজো তান অবগত আছেন।তিনি আরও জানান, তার বিশ্বাস ক্যাসিনো মালিক কিম অংয়ের অ্যাকাউন্টে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা বিপুল অংকের এ অর্থের লেনদেন রিজাল ব্যাংক প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহীর অগোচরে হওয়ার কথা নয়। এই কিম অংয়ে মালিকানাধীন ক্যাসিনোতেই চুরির টাকাগুলো জুয়াখেলার উপযুক্ত করা হয়। পরে তা হংকংয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করা হয়।আরসিবিসির সাবেক এ শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, রিজার্ভ চুরি এবং চুরির ওই টাকা বিলি-বণ্টনে আমি হচ্ছি দাবার একটি ঘুঁটি, যারা খেলেছেন তারা আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং এবং অর্থ জগতের বড় বড় খেলোয়াড়।

সিনেট কমিটিকে উদ্দেশ করে দেগুইতো বলেন, দাবার গ্রান্ডমাস্টারকে খুঁজে বের করা যদি এ শুনানির উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে আমি সে ব্যক্তি নই। জড়িতরা অনেক উপরের মানুষ এবং তাদের ক্ষমতাও বেশি। এতবড়ো ঘটনায় কর্তৃপক্ষ ডেকেছে মধ্যম সারির সাধারণ একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপক সে যোগ্যতার মাপকাঠিতেই তেমন কিছুই নয়!উল্লেখ্য, চুরির ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের মাকিাতির সিটির জুপিটার শাখায় যায়।বাকি ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যায় শ্রীলংকার সেচ্ছাসেবী সংগঠন শালিকা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। তবেচ প্রাপক সংস্থার নামের বানানে ভুল থাকায় ওই টাকার পেমেন্ট আটকে যায়, পরে তা ফেরত আনে বাংলাদেশ ব্যাংক।এদিকে এ পর্যন্ত দুই ধাপে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার এবং ৮ লাখ ২৯ হাজার ডলার ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।