ভোলায় মিঠা পানি ও খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হরিণ
প্রতি বছরের মতো এবারও ভোলার মনপুরা, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার কুকরী ঢালচর এলাকায় বনবিভাগের সৃজিত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল থেকে লোকালয়ে হরিণ আসতে শুরু করেছে। শুক্রবার সকালে তজুমদ্দিন উপজেলার বাসনভাঙা চর থেকে একটি হরিণ নদী সাঁতরিয়ে লোকালয়ে চলে আসে। খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন হরিণটিকে উদ্ধার করে চর উড়িলের গহীন অরণ্যে অবমুক্ত করে। তজুমদ্দিন বাজারের বাসিন্দা সেলিম রেজা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) ফারুক আহাম্মেদ জানান, শুক্রবার সকালে তজুমদ্দিনের মেঘনা নদীর বাসনভাঙা চর থেকে একটি হরিণ নদীতে সাঁতার কেটে উপজেলার ৬নং ওয়ার্ডে গুলিন্দা বাজার এলাকায় চলে আসে। এ সময় স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে গুলিশ হরিণটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করে। পরে বন বিভাগ ও পুলিশের সহায়তায় বিকেলে চর উড়িলের গহীন অরন্যে হরিণটিকে অবমুক্ত করা হয়।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, সমুদ্র ও মেঘনা নদীর মোহনার পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেলে হরিণের জন্য মিঠা পানির সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। বনে খাবার ও পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ভোলা ও তার পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী ও পটুয়াখালীর আটটি বনের হরিণ লোকালয়ে চলে আসে। মাঝে-মধ্যে জেলেরাও নদী থেকে হরিণ ভাসতে দেখে উদ্ধার করেছে। তবে এবছর অসময়ে কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ার কারণে বনে মিঠা পানির সংকট দেখা দেবে না বলেও বনবিভাগ সূত্র জানায়। তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক সামিউল মোহসেনিন জানান, প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে মিঠা পানি ও খাবারের সন্ধানে হরিণ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। তাই হরিণের মিঠা পানি নিশ্চিত করতে বনে ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরতার পুকুর খনন করতে হবে। এছাড়া অনেক সময় শিকারির ধাওয়া খেয়েও হরিণ লোকালয়ে আসে। এসব বন্ধ করতে মানুষকে সচেতন করতে হবে। প্রাণীদের জীবন ধারণের পরিবেশ না থাকলে জীববৈচিত্র বিলুপ্ত হবে বলেও তিনি জানান।

ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রুহুল আমিন শনিবার দুপুরে জানান, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন, কুকরী মুকরী, ঢালচর, পাতিলা, মনপুরার ঢালচর, বদনার চর ও কলাতলির চরের অংশে প্রায় ১০ হাজার হরিণ রয়েছে। হরিণের মিঠা পানি নিশ্চিত করতে প্রতি বছর ১০ ফুটের বেশি গভীরতা সম্পন্ন পুকুর খনন করা হয়। এবছরও চরফ্যাশনের চর কুকুর মুকরিতে একটি পুকুর খনন চলছে। এছাড়া এবছর অসময়ে বেশ কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে। তাই আমরা আশাকরি ভোলার বনগুলোতে এবছর মিঠা পানির সংকট হবে না।