প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ২৯ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।তিনি সোমবার সংসদে ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য বেগম হাজেরা খাতুনের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, সরকারের গৃহীত রেমিটেন্সবান্ধব এ সব পদক্ষেপের ফলে দেশে রেমিটেন্স প্রাপ্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১ হাজার ১৮৯.৯৩ বিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, বৈদেশিক শ্রম বাজারে অধিক হারে বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী প্রেরণের জন্য শ্রম কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ। সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ অদক্ষ শ্রমিকের পরিবর্তে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেয়ার ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহী। এ লক্ষ্যে সৌদি আরবের সাথে ২০১৫ সালে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় বিনা খরচে প্রশিক্ষিত নারী কর্মী প্রেরণ।

তিনি বলেন, প্রশিক্ষিত নারী কর্মীর পাশাপাশি সৌদি আরবে তার নিকটাত্মীয় পুরুষ সদস্যদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে প্রেরণ। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার মালয়েশিয়াতে সরকারি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ব্যাপকহারে কর্মী প্রেরণের বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর।

মন্ত্রী বলেন, রেমিটেন্স প্রেরণ ব্যয় হ্রাস। দক্ষ কর্মীদের বিদেশে চাকরি প্রাপ্তি সহজ ও অভিবাসন ব্যয় কম এবং বেতন বেশি হয়ে থাকে। তাই সরকার অদক্ষ কর্মীর পরিবর্তে অধিকহারে দক্ষ কর্মী তৈরি ও তাদের বিদেশে প্রেরণের উপর গুরুত্বারোপ করছে। এ লক্ষ্যে বর্তমানে ৪৭টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) ও ৬টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা হচ্চে।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, এছাড়াও নতুন করে ১৭টি টিটিসি নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকার দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টিটিসি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম জেলায় ১টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প সরকার অনুমোদিত হয়েছে এবং এ প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহে কর্মসংস্থান উপযোগী ৪৮টি বিভিন্ন ট্রেডে বিদেশগামীদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান। ২০১৫ সালে দক্ষ ও স্বল্প দক্ষ কর্মী প্রেরণের সংখ্যা শতকরা ৫৫ ভাগে উন্নীতকরণ। রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রেরণকারী ব্যক্তিদেরকে সরকার সিআইপি মর্যাদা প্রদান।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, সৌদি আরব অদক্ষ শ্রমিকের পরিবর্তে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেয়ার ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহী।

তিনি সংসদে বিএনএফ’র সদস্য এস এম আবুল কালাম আজাদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের ফেব্র“য়ারিতে সৌদি আরবের সাথে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় প্রশিক্ষিত নারী কর্মী পাঠানো হচ্ছে। নারী কর্মীদের পাশাপাশি তার নিকট আত্মীয় পুরুষ সদস্যদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে সৌদি আরবে পাঠানো শুরু হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের মে পর্যন্ত সৌদি আরবে পাঠানো কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৩ জন। সৌদি আরবে প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠানোর জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ঢাকাস্থ মিরপুরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা টিটিসিতে বেসরকারি উদ্যোগে বিদেশী প্রশিক্ষকদের সহায়তায় সৌদি আরবগামী কর্মীদের জন্য বিশেষ আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ আরো সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরে নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। আশা করা যায়, শিগগিরই সৌদি আরবে অধিকহারে দক্ষ বাংলাদেশী কর্মী পাঠানো শুরু হবে।সরকারি দলের সদস্য মনোয়ারা বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশী কর্মী গমনকারী মোট দেশের সংখ্যা ১৬১টিতে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, বিদেশে শ্রম বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টি, গবেষণার মাধ্যমে নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।তিনি বলেন, বিগত জোট সরকারের আমলে বিশ্বের মাত্র ৯৭টি দেশে কর্মী পাঠানো হত। বর্তমান সরকারের আমলে নতুন আরো ৬৪টি দেশে কর্মী পাঠানোয় বর্তমানে এ সংখ্যা ১৬১টিতে উন্নীত করা হয়েছে।নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বিদ্যমান শ্রম উইংয়ের সংখ্যা ১৬ থেকে ২৮ এ উন্নীত করা হয়েছে।মন্ত্রী বলেন, ক্ষেত্রসমূহে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশী কর্মীদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। সরকারের গৃহীত এসব পদক্ষেপের ফলে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রম বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করা যায়।