‘সুন্দরবন চুরির জন্য বাকবিতন্ডা ও বাহাস’

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি জাতীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণ, প্রসার ও বিকাশ এবং সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেবার লক্ষ নিয়ে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করে চলেছে নিরন্তর। বর্তমানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মপরিধি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬৪ জেলা থেকে ৪৯০ উপজেলায় সম্প্রসারিত হয়েছে একাডেমির কাজ। নাটক, চলচ্চিত্র, যাত্রা, পুতুলনাট্য, আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য, মুকাভিনয়, অ্যাক্রোবেটিক, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলাসহ শিল্পের সকল শাখার চর্চা ও সৃজনশীলতায় এখন মুখর হয়ে থাকে এই একাডেমি এবং ৬৪ জেলা ও ৪৯০ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি। শিল্পকলা একাডেমির ৫টি মিলনায়তন, একটি নন্দন মঞ্চ এবং একটি উন্মুক্ত মঞ্চে সপ্তাহের ৭দিন নাটক ও অন্য শিল্পের প্রদর্শনী নিরবিচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে। বিশিষ্ট নাট্যজন ও নাট্য সংগঠকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটির মাধ্যমে অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে নাটকের দলগুলিকে হল বরাদ্দ দেয়া হয়। ছোট-বড় সকল নাট্যদলকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আন্তরিকতার সাথে নাট্যচর্চা ও প্রদর্শনী করতে সহযোগিতা করা হয়।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ করা যাচ্ছে, তীরন্দাজ নাট্যদল নামের একটি সংগঠন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বরেণ্য নাট্যব্যাক্তিত্ব ও নাট্যচর্চার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য ক্রমাগতভাবে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। তারা সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। তাদের বক্তব্য শিল্পকলা একাডেমি তাদের নাটক করতে দেয়নি। কিন্তু এই বক্তব্যটি একটি জঘন্য মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তীরন্দাজ নাট্যদলকে নাটক করার জন্য হল বরাদ্দ দিয়েছে। নাটকের আগে আয়োজিত তাদের অনির্ধারিত, তথাকথিত সুন্দরবন চুরি বিষয়ক ‘বাক বিতন্ডা ও বাহাস’ অনুষ্ঠানটি না করতে অনুরোধ করা হয়। তাদেরকে ‘বাকবিতন্ডা ও বাহাস’ ব্যাতিত শুধুমাত্র নাটকটি প্রদর্শনী করতে বলা হয়। কারণ, তারা শুধুমাত্র নাটক প্রদর্শনের জন্যই অনুমতি বা হল বরাদ্দ নিয়েছিল। উল্লেখ্য কোন নাট্যদল মিলনায়তন বরাদ্দ নিতে চাইলে তাদেরকে একটি নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। সেই ফরমে নাটকের আগে বা পরে কোন আলোচনা বা আয়োজন আছে কিনা তার জন্য একটি ছক বা পয়েন্ট থাকে কিন্তু তীরন্দাজ নাট্যদল তাদের আবেদনে ‘বাকবিতন্ডা ও বাহাস’ অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে নাই।

শিল্পকলা একাডেমির নীতিমালা অনুযায়ী শুধুমাত্র বিশেষ প্রয়োজনে নাটকের ডকুমেন্টেশন এর জন্য অনুমতি সাপেক্ষে ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। অথচ তীরন্দাজ নাট্যদল ৪ থেকে ৫টি ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে তাদের নাটকের পূর্বের তথাকথিত ‘সুন্দরবন চুরির জন্য বাকবিতন্ডা ও বাহাস’ অনুষ্ঠান ধারণের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করে। প্রথমত এই ধরণের অনির্ধারিত বাড়তি অনুষ্ঠানের অনুমতি না নেয়া এবং দ্বিতীয়ত নীতিমালা ভঙ্গ করে ভিডিও ধারণ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অপচেষ্টা করার কারণে তীরন্দাজ নাট্যদল কে শুধুমাত্র নাটক প্রদর্শন করতে বলা হয়। কিন্তু তারা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে জোর করে এই অনুষ্ঠান করার হুমকী এবং বিশৃংখলা তৈরীর হুমকী প্রদান করে।

সে প্রেক্ষিতে ২০ জুলাই ২০১৬ তে রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীও করে একাডেমি। ওইদিন সন্ধ্যায় তীরন্দাজ নাট্যদলের কিছু উৎশৃঙ্খল কর্মী জাতীয় নাট্যশালা’র কলাপসিকল গেট ভেঙ্গে হইচই করে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। উল্লেখ্য তীরন্দাজ নাট্যদল তাদের নাটক ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ কে সুন্দরবন চুরির প্রতিবাদ হিসেবে প্রচার করলেও এই নাটকটির সাথে সুন্দরবন বা পরিবেশ কেন্দ্রিক কোন ইস্যুর কোন সম্পৃক্ততা নেই। ২০১৩ সালে তীরন্দাজ নাট্যদল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চেই এই নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন করে। বিগত ৩ বছর তীরন্দাজ নাট্যদল এই একাডেমিতেই ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নামের নাটকটির ১০ থেকে ১২টি প্রদর্শনী করেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যদি নাটক করতে বাঁধা দিত, তাহলে এই নাটকের এতগুলি প্রদর্শনী এখানে করলো কিভাবে? তাই বিষয়টি প্রমাণিত যে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নাটক করতে কোন বাঁধা প্রদান করেনি। ‘বাকবিতন্ডা ও বাহাস’ অনুষ্ঠান না করতে অনুরোধ করায় তীরন্দাজ নাট্যদল নাটক করেনি। অথচ একের পর এক মিথ্যাচার করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করা যে ঘৃন্য প্রয়াস তীরন্দাজ নাট্যদল চালিয়ে আসছে আমরা তার নিন্দা জানাই। সেই সাথে সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিকগণ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে সার্বিক সহযোগিতা করায় তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

উল্লেখ্য যে, তারা ভিডিও করার যে আবেদন শেষ মুহুর্তে জমা দিয়েছে তাতে উল্লেখ আছে তারা জাতীয় ইস্যুতে একটি আলোচনা অনুষ্ঠান ধারণ করবেন। কিন্তু অনুষ্ঠান বন্ধের পর তারা জাতীয় নাট্যশালায় মিডিয়ার সামনে বলেছেন তাদের ইচ্ছা ছিল ‘বাহাস’ নিয়ে বাহিরে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দর্শকদের সম্পৃক্ত করবেন। এখানে তাদের দ্বিমুখীতার পরিচয় পাওয়া যায় এবং আসল উদ্দেশ্য কি ছিল তা বুঝা যায়। আমরা বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে আমাদের বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব, শিল্পকলা একাডেমি ও গ্রুপ থিয়েটার চর্চার মহান ধারাকে কলুষিত করার ঘৃণ্য কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জন্য তাদেরকে অনুরোধ করছি। তা না হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবো।