04-08-16-Gulshan Case_CMM Court-9

গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খানের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন এ আদেশ দেন।হাসনাত করিম নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও তাহমিদ হাসিব খান কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, গতকাল বুধবার রাতে এই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাত পৌনে নয়টার দিকে হাসনাতকে গুলশান থেকে ও তাহমিদকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের হাতে বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হওয়ার পর থেকে হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খান পুলিশের নলেজে আছেন বলে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক।

04-08-16-Gulshan Case_CMM Court-1

বৃহস্পতিবার দুপুরের পর কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর এই দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন।ওই রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ঘটনার দিন এই আসামিরা উপস্থিত থেকে জঙ্গিদের সহযোগিতা করেছেন বলে তদন্ত সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া আসামিদের মোবাইল থেকে জঙ্গিরা যোগাযোগ করেছিল। এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য এ আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

তবে এ দুই আসামির আইনজীবীরা শুনানিতে আদালতকে বলেন, তাঁরা এ ঘটনার কিংবা জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার সঙ্গে মোটেও জড়িত নন। তাঁরা ৩২ দিন ধরে পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। তাই রিমান্ড আবেদন বাতিল করে তাঁদের জামিনের আরজি জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের প্রত্যেকের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাহমিদকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুময়ুন কবির।

অন্যদিকে হাসনাত ও তাহমিদের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন।শুনানি শেষে মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন দুইজনকে আট দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।গত ২ জুলাই সকালে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর থেকে হাসনাত ও তাহমিদ আর বাড়ি ফেরেননি বলে পরিবার এতোদিন দাবি করে আসছিল।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. মাসুদুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাহমিদকে এবং গুলশান আড়ংয়ের সামনে থেকে হাসনাতকে তারা গ্রেপ্তার করেন।পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, হাসনাত ও তাহমিদকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে গুলশান হামলার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

অন্যদিকে হাসনাতের আইনজীবী সানোয়ার হোসেন সমাদ্দার এর বিরোধিতা করে বলেন, তার মক্কেল ৩২ দিন ধরে পুলিশ কাস্টডিতে। তাকে নতুন করে রিমান্ডে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের ওই ক্যাফেতে একদল অস্ত্রধারী তরুণ হামলা চালালে জিম্মি সঙ্কট তৈরি হয়। পরদিন ভোরে কমান্ডো অভিযানে সেই সঙ্কটের অবসান ঘটে।ওই অভিযানের আগেই ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সন্দেহভাজন পাঁচজঙ্গিসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়।

আইএস ওই হামলার দায় স্বীকার করে পাঁচ হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করলেও পুলিশ দেশীয় জঙ্গি দল জেএমবিকে গুলশানের ঘটনার জন্য দায়ী করে আসছে। অভিযান শেষে উদ্ধার ১৩ জনসহ ৩২ জনকে নেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে। জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই করে তাদের অনেককে ছেড়ে দেওয়া হলেও হাসনাত ও তাহমিদকে ফিরে না পাওয়ার কথা জানানো হয় পরিবারের পক্ষ থেকে।

হাসনাতের বাবা এম আর করিম এবং তাহমিদের বাবা শাহরিয়ার খান দুজনেই একাধিকবার সাংবাদিকদের বলেন, তাদের সন্তানরা বাড়িতে ফেরেনি। তারা পুলিশের কাছেই রয়েছে বলে তাদের ধারণা।হাসনাত ও তাহমিদ কোথায় সেই প্রশ্নে পুলিশ কর্মকর্তারা এতোদিন ধোঁয়াশা তৈরি করে রাখলেও তাদের সন্দেহের তালিকায় রাখার কথা বলে আসছিলেন তারা।ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ৫ জুলাই সাংবাদিকদের বলেন, সন্দেহের তালিকায় থাকা হাসানাত ও তাহমিদ তাদের হেফাজতেই আছেন।এরপর ৯ জুলাই উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, যাদের উদ্ধার করা হয়েছিল তাদের প্রত্যেককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ এখন পুলিশের কাছে নেই।

এরপর গত মঙ্গলবার পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক পুলিশ সদর দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, গুলশানের ঘটনায় উদ্ধার পাওয়া হাসনাত করিম সন্দেহমুক্ত নন।ওই ঘটনার পূর্বে তার যে রেকর্ড এবং ওই ঘটনার দিন তার যে আচরণ- সবগুলো সন্দেহের মধ্যে আছে, সে সন্দেহমুক্ত নয়। তার বিরুদ্ধে কংক্রিট এভিডেন্স আমরা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। সে আমাদের নলেজে আছে। যখনই আমাদের মনে হবে তাকে কাস্টডিতে নেওয়া দরকার তখন আমরা নিতে পারব।হলি আর্টিজানে কমান্ডো অভিযান শুরুর আগের এক ছবিতে ক্যাফের ছাদে দুই ব্যক্তির সঙ্গে হাসনাত রেজাউল করিমকে দেখা যায়।হলি আর্টিজানে কমান্ডো অভিযান শুরুর আগের এক ছবিতে ক্যাফের ছাদে দুই ব্যক্তির সঙ্গে হাসনাত রেজাউল করিমকে দেখা যায়।স্বজনদের দাবি, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম মেয়ের জন্মদিন উদযাপনের জন্য সেদিন সপরিবারে হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন।

কিন্তু গুলশানের ওই ক্যাফেতে জিম্মি দশার একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশের পর হাসনাতের বিরুদ্ধে হামলায় সম্পৃক্ততার সন্দেহের কথা উঠে আসে ফেইসবুকে।

নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২০১২ সালে হাসনাত করিমকে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল বলে গণমাধ্যমের খবর। ওই হামলায় অংশ নিয়ে কমান্ডো অভিযানে নিহত নিবরাজ ইসলামও নর্থ-সাউথে পড়াশোনা করেছেন।অন্যদিকে ব্যবসায়ী শাহরিয়ার খানের ছেলে তাহমিদ কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। গুলশানের ঘটনার একদিন আগে দেশে ফিরে ইফতারের পর বন্ধুদের সঙ্গে তিনি ওই ক্যাফেতে গিয়েছিলেন বলে পরিবারের ভাষ্য।