olympic2016

গেমস শুরুও আগে শেষ মূহুর্তে এসেও প্রতিবাদ মুখর রিও । মশাল নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে আয়োজকদের। শুক্রবার মারাকানায় মশাল প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটবে সব জল্পনা-কল্পনার। তবে পাস না ফেল ব্রাজিলÑসেটা নির্ধারিত হবে ২১ আগস্ট শেষদিনের পরই। আপাতত যে বাস্তবতা, তাতে ব্রাজিলকে ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়া আয়োজকই মনে হচ্ছে!

এদিকে, সেরেনা থেকে জকোভিচ বা পুলের রাজার মাইকেল ফেলপস সবার কাছে অলিম্পিক আলাদা কিছু।শুরু হয়েছে আইওসির বার্ষিক সভা। যেখানে ২০২০ টোকিও গেমসের নতুন পাচঁ খেলা অনুমোদন পেয়েছে। রিওর বিভিন্ন অলি গলি ঘুরছে মশাল । মারকানায় ৫ আগস্ট প্রজ্জ্বলনের আগে বারবার হাত বদলে স্বাগতিক শহরের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে মশালটি। তবে শহর পরিভ্রমনের প্রথমদিনই প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয়েছে । পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

এভেনিদা আতলান্তিকা, মানে আটলান্টিক এভিনিউই ব্রাজিল পর্যটকদের প্রধানতম আকর্ষণ, এর পাশেই যে কোপাকাবানা সমুদ্রসৈকত। প্রত্যাশিতভাবে এখানেই অলিম্পিক বিচ ভলিবল ভেন্যু, সুবাদে কোপাকাবানার গায়ে বিশ্বসেরা ক্রীড়া আসরের এক পশলা রংও লেগেছে। দূরে ফ্র্যাঞ্চাইজি স্টোরেও অলিম্পিকের মিহি হাওয়া। এরপর এখান থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের মূল গেমস ভিলেজ বারা টিজুকা বাদ দিলে রিও ডি জেনেইরোতে অলিম্পিকে ঘিরে চিরায়ত ব্রাজিলিয়ান মাতাল হাওয়া নেই। উল্টো এবারের আসরটিই চূড়ান্ত ফ্লপ করে কি না, এ নিয়ে বিপুল সংশয় চারদিকে।

ব্রাজিলে অবশ্য এখন জ্বর মানেই জিকা আতঙ্ক। তবে যতটা সফরপূর্ব মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে, ততটা গ্রাউন্ড লেভেলে দেখা যাচ্ছে না। ২০ কোটি জনতার দেশটিতে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট যে অলিম্পিকের ওপর কালো ছায়া হয়ে পড়েছে, সেসবও সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা। সরেজমিনে ২৪ ঘণ্টা দেখে মনে হয়েছে, অলিম্পিককে ঘিরে বিশেষ ব্রাজিলিয়ানদের আদিখ্যেতার পেছনে ওটা একটা কারণ হতেই পারে। দিউমা হুসেফকে বিদায় করা গেছে ঠিকই, তাই বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থাতেও যেন পূর্ণ আস্থা নেই ব্রাজিলিয়ানদের। তারই ছায়া যেন কোপাকাবানা আর বারা টিজুকা ছাড়া এ মেগাসিটির অন্যত্র। বিলবোর্ডের বালাই নেই আর কোথাও। মাত্র ৪৮ ঘণ্টা পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ শুরুর কোনো বাতাবরণ নেই। আজ যে মহাসমারোহে অলিম্পিক মশাল কোপাকাবানার সৈকত হয়ে উদ্বোধনী মঞ্চ মারাকানায় পৌঁছাবে, সে খবরটি অলিম্পিক নিউজের পাদটীকায় জায়গা পেয়েছে। তাতে বৈশ্বিক মিডিয়ার আগাম পূর্বাভাস; ব্রাজিল অন্তত আয়োজক হিসেবে যে ‘স্বর্ণ’ জিতছে না! আর এ পূর্বাভাস মিলে গেলে ডোপিং কেলেঙ্কারিতে এবারের অলিম্পিকে প্রায় ‘নির্মূল’ রাশিয়ার খুব একটা অখুশি হওয়ার কথা নয়। বড় এবং প্রভাবশালী দেশের মিডিয়ার জন্য মূল মিডিয়া সেন্টারের আরেকটি ভবনে আলাদা আলাদা রুম বরাদ্দ আছে। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের জন্য বরাদ্দ রুমটি মঙ্গলবার বিকেলেও ফাঁকা দেখা গেছে। ওদিকে সেদিনই ভিক্তোরিয়া আজারেঙ্কা জিকার ভয়ে নাম তুলে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। অলিম্পিক শুরু হতে আরো ক’টা উইকেট পড়ে, কে জানে। তবে প্রায় ১৫ হাজার থেকে অ্যাথলেটের সংখ্যা ১২ হাজারে নেমে আসার খবরটা উদ্বেগজনকই। যে আসর নামিদামিদের সঙ্গে অখ্যাতদেরও একই সুতোয় গেঁথে ফেলে, যে আসর সুযোগ করে দেয় উসাইন বোল্টের সঙ্গে বাংলাদেশের মেসবাহ আহমেদকে একই ইভেন্টে দৌড়ানোর, সেখানে প্রতিযোগীর সংখ্যা ক্রমাগত কমতে থাকা উদ্বেগজনকই। অবশ্য এ উদ্বেগে অলিম্পিক থমকে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। শুধু আয়োজক হিসেবে ব্রাজিলের সম্মানটাই ঝুলছে সরু সুতোয়।

২০৬টি দেশ একই ব্যানারেÑজাতিসংঘের পর এত বেশি দেশের প্রতিনিধিত্ব বিশ্বের আর কোনো আচার-অনুষ্ঠানেও থাকে না। মাইকেল ফেলপসের মতো জলদানব হওয়ার দরকার নেই, বাংলাদেশের মাহফিজুর রহমানও তাই ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে রিও পুলে নামার সুযোগ পাচ্ছেন। এখানে মহাতারকা ফেলপসের জন্য যতটুকু খাতির বরাদ্দ, সেটি মিলেছে মাহফিজুরেরও। বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় কন্টিনজেন্ট রিওতে অবতরণের কিছুক্ষণ পরই সে পথে রিওতে ঢুকেছেন স্বর্ণ জয়ের নতুন রেকর্ড গড়ার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের এ সাঁতারু। অলিম্পিক অতিথিদের নিরাপত্তা দিতে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে নিরাপত্তাকর্মী বসিয়েছে ব্রাজিল সরকার। তো সেসব কর্মীদের পেশাদারির কাছে একজন ফেলপস কিংবা সাধারণ কোনো মানুষের বিশেষ পার্থক্য নেই।

অনেক গাঁইগুঁই করলেও অস্ট্রেলিয়া দল গেমস ভিলেজেই আছে। খেলোয়াড়দের আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তর আপত্তি আছে চীনাদেরও। তবে ঠিকানা বদলায়নি অলিম্পিকের হেভিওয়েটরা। টুইন শেয়ার রুম, একই ডাইনিংয়ে একই খাবার বরাদ্দ অলিম্পিকের সুপার পাওয়ার আমেরিকা এবং কখনোই পদক না জেতা বাংলাদেশের মতো অনেক দলের সদস্যদের। জ্যাঁ পিয়েরে কুবার্তিনের অলিম্পিক আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই তো ছিল পুরো বিশ্বকে এক পতাকাতলে নিয়ে আসা।ঢাকা থেকে রিও আসার পথে প্রথম ট্রানজিট ইস্তানবুলেই যেমন দেখা অখ্যাত অনেক দেশের অ্যাথলেটদের। সাও পাওলো আর সবশেষে রিও বিমানবন্দরে নামতে নামতে এমন কিছু দেশের দলকে চোখে পড়ল, পদক জয়ে সম্ভাবনায় যাদের বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকার কথা নয়। ইমিগ্রেশন পার হওয়ার ওইটুকু সময়ে কত দেশ, ভাষা আর সংস্কৃতির এক ঝলক দেখা হয়ে গেল! অলিম্পিক তো আর শ্রেষ্ঠত্বের একমুখী লড়াই নয়, দেশ-মহাদেশের দেয়াল তুলে দেওয়ার ব্রতও। রিও অলিম্পিকের মূল স্লোগানÑআ মুন্দো ভিভো! নতুন বিশ্ব উপহার দিতে চাচ্ছে ব্রাজিল।

স্বাগতিক ব্রাজিলেরও অলিম্পিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি নেই। আগের ২১টি আসরে মাত্রই ২৩টি স্বর্ণপদক জিতেছে ফুটবলের দেশ ব্রাজিল। অবশ্য অলিম্পিক ফুটবল মোটেও ব্রাজিলের ‘ব্যক্তিগত সম্পদ নয়।’ পাঁচটি বিশ্বকাপ জেতা হলেও এ ডিসিপ্লিনে চূড়ান্ত সাফল্যের স্বাদ এখনো অজানা ব্রাজিলিয়ানদের। তাই নেইমারের কাছে সর্বমহল থেকে প্রত্যাশার কথা জানিয়েও দেওয়া হচ্ছে। তবে সাফল্যই মানদন্ড হওয়ায় আজ কোপাকাবানা থেকে অলিম্পিক মশাল মারাকানায় পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে ব্রাজিলের ইয়ট দল। এ পর্যন্ত এ দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৭টি পদক যে এ দলটিরই।তবে উদ্বোধনী দিনে অলিম্পিক মশাল জ্বালবেন কে? এ কৌতূহল অবশ্য অনুষ্ঠানের আগে ঘটা করে জানানোর অতীত ঘটনা নেই। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে শুধু জানানো হয়েছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে কাল স্থানীয় সময় রাত ৮টায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা যথারীতি গোপন রাখা হয়েছে সাধারণের কাছে।