ওবায়দুল কাদের

ঢাকা সিটির চেহারা আমাদেরকে সত্যিই লজ্জা দেয়, তবে আমাদের উন্নয়ন অর্জনের সাথে ঢাকা সিটির যে চেহারা তা ম্যাচ করে না বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার সচিবালয়ে ঢাকা মহানগরী, পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবহন ব্যবস্থাপনায় গৃহীত সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বা আরএসটিপির নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। গত সোমবার (২৯ আগস্ট) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা, ২০১৫-২০৩৫ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের বৈশ্বিক বসবাসযোগ্যতা শীর্ষক জরিপের ভিত্তিতে শহরের তালিকায় এবার ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সিরিয়ার দামেস্ক, লিবিয়ার ত্রিপোলি ও নাইজেরিয়ার লাগোস-এই তিনটি সিটির পর আমরা (ঢাকা) মোস্ট আনলিভ্যাবল সিটি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (বিশ্বে বসবাসের অনুপযুক্ত শহর)।এটা (ঢাকা) আসলেই অপরিচ্ছন্ন, অপরিকল্পিত একটা শহর। আজকে আমাদের যে উন্নয়ন, অর্জন, যেটা অর্জিত হয়েছে সেই উন্নয়নের অর্জনকে লজ্জা দেয়। আমাদের উন্নয়ন অর্জনের সাথে ঢাকা সিটির যে চেহারা তা ম্যাচ করে না। ঢাকা সিটির চেহারা আমাদেরকে সত্যিই লজ্জা দেয় বলেন ওবায়দুল কাদের।

এ অবস্থার অবসানেই এই আরএসটিপি প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরীর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য এটি একটি সমন্বিত পরিকল্পনা। যে কোন দফতর বা উন্নয়ন সংস্থা শুধুমাত্র সংশোধিত এসটিপির আওতাভুক্ত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করতে পারবে।সংশোধিত এসটিপিতে সুপারিশকৃত প্রকল্পের বাইরে কোন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না।ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আইন-২০১২ অনুযায়ী ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ বা ডিটিসিএ আরএসটিপির অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প গ্রহণের সম্মতি ও বাস্তবায়ন সমন্বয় সাধন করবে। সময়ের প্রয়োজনে উন্নয়ন চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রতি ৫ বছর পরপর সংশোধিত এসটিপি অধিকতর সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়েছে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।

সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৫-২০৩৫ সাল ধরা হয়েছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আরএসটিপিতে ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার গণপরিবহন ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ এবং ব্যবস্থাপনায় যেসব সুপারিশ এসেছে এরমধ্যে প্রধান সুপারিশগুলো হল, ৫টি ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা মেট্রোরেল রুট নির্মাণ, দু’টি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি সড়ক নির্মাণ। ‘ইনার, মিডল এবং আউটার নামে ৩টি রিং রোড নির্মাণ। ইনার ও আউটার রিং রোডকে সংযোগকারী ৮টি রেডিয়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে-ঢাকা-জয়দেবপুর, ঢাকা-টঙ্গী-ঘোড়াশাল, ঢাকা-পূর্বাচল-ভূলতা, ঢাকা-কাঁচপুর-মেঘনা সেতু, ঢাকা-সাইনবোর্ড-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-ঝিলমিল-ইকুরিয়া, ঢাকা-আমিনবাজার-সাভার, ঢাকা-আশুলিয়া-ডিইপিজেড বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাদের।

আরএসপি অনুযায়ী ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা- চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-সিলেট এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-ময়মনসিংহ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করব।তিনি আরও বলেন, ২১টি ট্রান্সপোর্টেশন হাব বা টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। প্রধান ট্রান্সপোর্টেশন হাবগুলোর মধ্যে থাকবে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, মহাখালী বাস টার্মিনাল, যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনাল, গাবতলী বাস টার্মিনাল, গাবতলী সার্কুলার ওয়াটারওয়ে স্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল।ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার জলপথ উন্নয়ন, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ও ট্রাফিক সেফটি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাসরুট সমন্বয়করণ, বাস কোম্পানি গঠন, রিলোকেশন অব বাস টার্মিনালগুলোর স্থানান্তরসহ বাস পরিবহন ব্যবস্থা পুনর্গঠনের কথাও পরিকল্পনায় কথা হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন,ইতোমধ্যে এসব সুপারিশমালার মধ্যে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত বিআরটি, মেট্রোরেল রুট-৬, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং পিপিপি ভিত্তিক ঢাকা বাইপাস মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণকাজ চলমান রয়েছে। মেট্রোরেল রুট-১ ও রুট-৫, এয়াপোর্ট হতে ঝিলমিল পর্যন্ত বিআরটি রুট, তেরমুখ-বিরুলিয়া-গাবতলী-সদরঘাট-চাষাঢ়া-শিমরাইল-ডেমরা পর্যন্ত ঢাকা সার্কুলার রুটের দ্বিতীয় অংশ ও ডেমরা-তেরমুখ ইস্টার্ণ বাইপাস এবং বাস সেক্টর পুনর্গঠনের কাজ আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। এছাড়া সংশোধিত এসটিপিতে দু’টি প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পূর্বেই মিডল অথবা আউটার রিং রোডের দক্ষিণ অংশের তথা মুন্সীগঞ্জ জেলার বাউরভিটা হতে নারায়ণগঞ্জ জেলার কাইকারটেক পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণ করতে হবে। মেট্রোরেল রুট-১ এর নির্মাণ কাজ শুরুর আগে বালু নদীর পূর্ব পাড় থেকে ঢাকা বাইপাসের পশ্চিম পাড়ের মধ্যবর্তী অংশের মধ্যে সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণ ও উন্নয়ন করতে হবে বলেও জানান সড়ক পরিবহন মন্ত্রী।