%e0%a6%aa%e0%a6%a3%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%87-%e0%a6%98%e0%a7%81%e0%a6%b7-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%b9%e0%a7%9f-%e0%a6%9a%e0%a6%9f

চট্টগ্রাম বন্দরে এক কন্টেইনার পণ্য খালাস করতে ব্যয় হয় ৭ হাজার টাকা, আর সেই একই কন্টেইনার মংলা বন্দরে খালাসে ব্যয় হয় এক লাখ ১১ হাজার টাকা। কতিপয় অসাধু শুল্ক কর্মকর্তার অর্থ আদায়ের জবরদস্তিমূলক মনোভাবে মংলা বন্দরে এই চিত্র চলছে। ফলে মংলা বন্দর থেকে ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীদের এহেন অভিযোগ আমলে নিয়ে শুল্ক কর জটিলতা নিরসনসহ মংলা বন্দরকে গতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর হতে ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছে।ব্যবসায়ীদের নানাবিধ হয়রানীর পর এক সময় আমদানীকারকরা মংলা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার প্রধানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর আগ্রহর কারণে মংলা বন্দর দিয়ে গাড়ী আমদানী ২০০৯ সাল থেকে শুরু হলে এ বন্দরের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায়। প্রতি বছরই রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য মাত্রা বাড়তে থাকে। কিন্তু কিছু দিন যাবৎ ধরে শুল্ক কর্মকর্তাদের হয়রানীমূলক মনোভাবে আমদানীকারকরা মংলা বন্দর ছেড়ে আবারও চট্রাগ্রামে ফিরে যাচ্ছে। খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিস এবং মংলা কাষ্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কন্টেইনার খালাস করতে রাজস্ব ছাড়া ঘুষ দিতে হয় ৭ হাজার টাকা আর সেই একই পণ্য খালাসে মংলা শুল্ক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয় এক লাখ ১১ হাজার টাকা উপরে।

অথাৎ চট্টগ্রাম বন্দরে এক কন্টেইনার পণ্য খালাসে ঘুষ দিতে হয় সাত হাজার টাকা আর সেখানে মংলা শুল্ক কর্মকর্তারা ঘুষ নেন এক লাখ ১১ হাজার টাকা। এই ঘুষের রেট ওপেন সিক্রেট। বাজার দরের সাথে এই ঘুষের দরও উঠানামা করে। এ ব্যাপারে মংলা কাষ্টম হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, চট্ট্রগাম বন্দরে প্রতিদিন হাজার হাজার বিল অব এন্টি দাখিল হয় আর সেস্থলে মংলা বন্দরে বছর মিলে হাজার হয় না। তাহলে তো রেট বৃদ্ধি পাবেই।নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আমদানীকারক এবং মংলা কাষ্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং এজেন্ট বলেন, সহকারী কমিশনারের কাছ থেকে পণ্য ছাড় না হলে তার উপরে ফাইল গেলে ৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পযর্ন্ত ব্যয় হয়।

এ ব্যাপারে মংলা কাষ্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মো: মোহন মিয়া বলেন, তাদের কাছে কোন আমদানীকারক বা মংলা কাষ্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং এজেন্ট এই ঘুষের ব্যাপারে অভিযোগ দেয়নি। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন এজেন্টরা ঘুষ দেয় কেন ? ঘুষ না দিয়ে তো অভিযোগ করতে পারে।জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’র চেয়ারম্যান নাজিবুর রহমান খুলনায় প্রাক বাজেট আলোচনায় আসলে খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিস’র সহ সভাপতি এ্যাড: সাইফুল ইসলাম সকলের উপস্থিতিতে এই ঘুষের হার বৃদ্ধি ও ব্যবসায়ীদের হয়রানীর বিষয় অভিযোগ তোলেন। তিনি কতিপয় শুল্ক কর্মকর্তাদের মংলা বন্দরে যাতে ব্যবসায়ীরা না আসে সেই চক্রান্তে জড়িত থাকার অভিযোগ করেন। তিনি কয়েকজন শুল্ক কর্মকর্তার দুর্নীর্তিও নানা অনিয়ম করার কথা উপস্থাপন করেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেইক্যালস ইম্পোটার্স এন্ড ডিলারস এসোসিয়েশন (বারবিডার) প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদ শরীফ খুলনায় এসে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যতে বলেন, মংলা কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের আচরন ব্যবসা বান্ধব নয় বরং তারা অসহযোগিতামুলক আচরন করছে। এই অসহযোগিতার কারনে তাদের মংলা বন্দর পরিত্যাগ করা ছাড়া বিকল্প থাকবে না। তিনি আরো জানান, গাড়ী আমদানীর কারনে মূলত মংলা বন্দরটি আবার লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। কিন্তু শুধু মাত্র কাষ্টমস কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার জন্য সরকারের মংলা বন্দরের গতিশীল করার স্বদিচ্ছা ভুলন্ঠিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি মংলা কাস্টম হাউসের কমিশনারদের আচারনকে লিখিতভাবে সা¤্রজ্যবাদি আচরন হিসাবে আখ্যা দিয়ে তার বর্ননা দেন। তিনি লিখিত ভাবে জানান, প্রথমত: আইনী মারপ্যাচে ফেলে আমদানীকারকদের অহেতুক হয়রানী করা হচ্ছে। ২য় দীর্ঘদিনের অনুসূত এইচএস কোড নিয়ে আপত্তি তুলে শুল্কায়ন জটিলতা সৃষ্টির মাধ্যমে নিগৃহ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিনত হয়েছে। ৩য়,ত শুল্কায়ন সংক্রান্ত কাজে গতি সঞ্চারের জন্য পদে পদে অর্থ আদায়ের ফাদঁ পাতা হয়েছে, ফলে দুর্ণীতি প্রাতিষ্টানিক রুপ নিয়েছে। বারবিডার এই সংবাদ সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মংলা-রামপাল আসনের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী তালুকদার আব্দুল খালেক ও খুলনা :২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মংলা কাষ্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং এজেন্ট এসোসিয়েশন পক্ষ হতে মংলা বন্দর এবং শুল্ক কর্তৃপক্ষ এই হয়রানীমূলক কর্মকান্ডের প্রতিবাদে খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিস সভাপতি কাজী আমিনুল হক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। খুলনা চেম্বার সভাপতি ব্যবসায়ীদের এই সমস্যা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে লিখিতভাবে জানিয়ে পত্র দিয়েছেন। এই পত্রের পরিপেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান নৌ-পরিবহন মন্ত্রীকে মংলা সমুদ্র বন্দরের বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকল্পে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পত্র দিয়েছেন।

অর্থ উপদেষ্টা তার পত্রে উল্লেখ করেছেন যে, শুল্ককর জটিলতা নিরসনসহ মংলা বন্দরকে গতিশীল করতে ৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রীর কাছে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এই পত্রে বলা হয়, চট্রগ্রাম ও মংলা বন্দরের সমতা আনতে হবে। এজন্য মংলা বন্দরের পণ্য খালাস পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে। বর্তমানে তা অনুসরন না হওয়াই পণ্য খালাসে বিলম্ব, হয়রানী ও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া চট্রগ্রাম বন্দরের তুলনায় আমদানীকৃত পণ্য চালানের কনটেইনার ভাড়া মংলা বন্দরে বেশী। তাই চট্রগ্রামের মত এ বন্দরের ভাড়া কম করা প্রায়াজন। আর এ বিষয়ে বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়। এই কমিটিতে বানিজ্য মন্ত্রনালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, [এনবিআর ] মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষর প্রতিনিধি, এফবিসিসিআই বা খুলনা চেম্বারের সভাপতি এবং খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এই কমিটিকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এ ব্যাপারে খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিস প্রেসিডেন্ট কাজী আমিনুল হক বলেন বার্ল্ক পণ্য আমদানীতে ১৯/২০ হতে পারে। আমদানীকৃত মোট পণ্য ৫% কম বেশী হওয়ার আর্ন্তজাতিক রীতি নীতি আছে। এই কম বেশী পণ্য আমদানী হলে চট্রগ্রাম বন্দরে অতিরিক্ত পণ্যর উপর ১০-২০ % জরিমানা দিয়ে পণ্য খালাসের বিধান রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মংলা শূল্ক কর্তৃপক্ষ ১০০-২০০% পুরা পণ্যের উপর জরিমানা আদায় করে। এমনকি আইনের সর্বোচ্চ যে পরিমাণ জরিমানা করার বিধান রয়েছে তার চেয়েও বেশী জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। ফলে মংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, ব্যবসায়ীদের এসব সমস্যা তুলে ধরে তিনি প্রধানমন্ত্রী দফতরে চিঠি দিয়েছেন। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর দফতর হতে চিঠি দিয়ে অর্থ মন্ত্রনালয় ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়কে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।