ডোনাল্ড ট্রাম্প

যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করা নারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর দাবি, অভিযোগকারী সব নারীর ভাষ্য মিথ্যা। নির্বাচনের পর মিথ্যাবাদী এই নারীদের একহাত নেওয়ারও হুমকি দেন তিনি।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের গেটিসবার্গে বক্তব্য দেওয়ার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে এই গেটিসবার্গেই ঐতিহাসিক বক্তব্য দেন। সেখান থেকে কিছুটা দূরে এক নির্বাচনী প্রচারে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। নির্বাচিত হলে প্রথম ১০০ দিনে কী করবেন, সেটিই সেখানে জানানোর কথা।ট্রাম্প জানান, ১০০ দিনের মধ্যেই তিনি অবৈধ অভিবাসীদের ওপর খড়্গ নামাবেন। বিতাড়িত অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে যাদের অপরাধের রেকর্ড আছে, তাদের দুই থেকে পাঁচ বছরের বাধ্যতামূলক কারাবাসে পাঠাবেন। এ ছাড়া ‘অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে তাড়াবেন।

রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যৌন নিপীড়নের অভিযোগকারী নারীদের ‘মিথ্যাবাদী’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, সব অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। নিপীড়নের কোনো ঘটনা একদমই ঘটেনি।ট্রাম্পের অভিযোগ, এই নারীরা তাঁর নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়ার ফন্দি করছেন। অভিযোগকারী এসব নারীর বিরুদ্ধে তিনি নির্বাচনের পর মামলা করবেন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারশিবির থেকেও এসবে ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে বলে ট্রাম্পের অভিযোগ।

শুধু অভিযোগকারী নারীদের ওপর ঝাল ঝেড়েই ট্রাম্প ক্ষান্ত হননি, এই ফাঁকে মার্কিন গণমাধ্যমকেও একহাত নিয়েছেন। তিনি বলেন, মিডিয়া সব মিথ্যাবাদী। কোনো কিছু যাচাই না করেই মিডিয়া তাঁর বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।হুমকি দিলেও আদৌ মামলা করবেন কি না, তা নিয়ে মার্কিন মিডিয়াতে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে। এর আগে নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেন ট্রাম্প। পরে এ নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি।

ইয়েল ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক সানড্রা বেরন বলেন, মামলা করে ট্রাম্প অভিযোগকারীদের হেনস্তা করতে পারবেন না। টাইম সাময়িকীকে তিনি বলেন, আইনি পথে গেলে ট্রাম্পকে প্রমাণ করতে হবে, অভিযোগকারী নারীরা মিথ্যা বলছেন। এমন কাজ ট্রাম্পের পক্ষে সহজ হবে না। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ট্রাম্পের বক্তব্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন। ট্রাম্পের অভিযোগ নাকচ করেছেন তিনি। সংবাদকর্মীদের হিলারি বলেন, যৌন নিপীড়নের অভিযোগের পেছনে হিলারির শিবিরের ইন্ধন থাকার বিষয়টি সঠিক নয়। হিলারি বলেন, নির্বাচিত হলে ট্রাম্প অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত হলে জনগণের জন্য কী করব, তা ব্যাখ্যা করতেই পেনসিলভানিয়ায় এসেছি। হিলারিও গতকাল সেখানে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন।সাম্প্রতিক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন নারী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন। মার্কিন মিডিয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়।

এদিকে,মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আবারও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। এবার এ অভিযোগ তুললেন পর্নো অভিনেত্রী জেসিকা ড্রেক। তিনি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প তাঁকে একা তাঁর হোটেল কক্ষে যাওয়ার জন্য ১০ হাজার ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রোববার এএফপির প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়।এ নিয়ে অন্তত ১১ জন নারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলেন।শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের গেটিসবার্গে বক্তব্য দেওয়ার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করা নারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন। তাঁর দাবি, অভিযোগকারী সব নারীর ভাষ্য ‘মিথ্যা’। নির্বাচনের পর মিথ্যাবাদী এই নারীদের একহাত নেওয়ারও হুমকি দেন তিনি।

ট্রাম্পের আমন্ত্রণে ড্রেক আরও দুজন নারীর সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁরা যখন ট্রাম্পের কক্ষে পৌঁছান, ট্রাম্প তখন ঘুমানোর পোশাকে ছিলেন। ট্রাম্প তাঁদের দেখেই প্রত্যেককে চেপে জড়িয়ে ধরেন ও চুমু খান। অথচ এ জন্য তিনি কোনো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। এমনকি তাঁদের কাছে জানতে চান, পর্নো মুভিতে অভিনয় করতে কেমন লাগে।এরপর সেখান থেকে চলে আসার পর ট্রাম্প তাঁকে ফোন করেন এবং তাঁকে নিজের সুইটে যেতে ও একটি পার্টিতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। এ সময় বলেন, ‘তুমি কী চাও? কত চাও?’ ড্রেক এতে রাজি না হওয়ায় আবারও তাঁর কাছে আরেকটি ফোন আসে। ফোনটি হয় ট্রাম্প, নাহয় তাঁরই কোনো লোক করেছিলেন। এ সময় তাঁকে ১০ হাজার ডলার প্রস্তাব করা হয় এবং রাজি থাকলে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বিমানে করে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।ড্রেকের এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তাঁরআইনজীবী গ্লোরিয়া অ্যালরেড। সেখানে গলফ মাঠে ট্রাম্প ও ড্রেকের একটি ছবি দেখানো হয়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলা আরও দুই নারীর প্রতিনিধিত্ব করেন গ্লোরিয়া।