high-court

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ৬নভেম্বর প্রশাসনের যে উচ্ছেদ কার্যক্রম, তা কোন কর্তৃত্ববলে পরিচালনা করা হয়েছে এবং সেখানে বাড়িঘরে আগুন, লুটপাট ও গ্রামবাসীসহ নিরীহ লোকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।স্বরাষ্ট্রসচিব, শিল্পসচিবসহ নয়জনের বরাবরে আজ মঙ্গলবার এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, আইনি নোটিশ গ্রহণ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে ওই বিষয়ে জানাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।গাবিন্দগঞ্জে ওই দিনের সহিংস ঘটনায় আহত দ্বিজেন টুডুর স্ত্রী অলিভিয়া হেমব্রম ও ক্ষতিগ্রস্ত গণেশ মুর্মুর স্ত্রী রুমালিয়া কিছকুর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ওই আইনি নোটিশ পাঠান।আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প বলেন, রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নয়জনের বরাবরে ওই নোটিশ পাঠানো হয়।অন্য যাঁদের প্রতি নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তাঁরা হলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক, রংপুর রেঞ্জের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), গাইবান্ধার পুলিশ সুপার, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও মহিমাগঞ্জ চিনি কলের ব্যবস্থাপক।

একই সঙ্গে গত ৬ নভেম্বর ওই জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদের সময় তাদের উপর হামলা, তাদের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, নোটিসে তাও প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।সাঁওতাল দ্বিজেন টুডোর স্ত্রী অলিভিয়া হ্যামভ্রম এবং গণেশ মুরমোর স্ত্রী রুমিলা কিসকুর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া মঙ্গলবার ডাকযোগে এ নোটিস পাঠান।এই আইনজীবী বলেন, নোটিস পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্েয জবাব না পেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নোটিসটি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব, শিল্প সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি, গাইবান্ধার পুলিশ সুপার, গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও ও ওসি এবং রংপুর সুগার মিলের ব্যবস্থাপককে। নোটিসদাতাদের আইনজীবী জ্েযাতির্ময় বড়ুয়া সম্প্রতি উৎখাত হওয়া সাঁওতালদের দুর্দশা সরেজমিনে দেখে আসেন।

সংঘর্ষের পর গ্রেপ্তার সাঁওতালদের হাতকড়া পরা অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার খবর জেনে তিনি একটি রিট আবেদনও করেন হাই কোর্টে।তার আবেদনে হাই কোর্ট সোমবার আহত চরণ সরেন ও বিমল কিসকোর কোমরের রশি ও হাতকড়া খুলে দিতে নির্দেশ দেয়।গত ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জে অবস্থিত রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের জমিতে বসতি গড়া সাঁওতালদের চিনিকলের কর্মীরা তুলে দিতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। তখন পুলিশ গিয়ে গুলি চালালে তিন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে।সমতলের এই নৃগোষ্ঠীর উপর গুলিবর্ষণের এই ঘটনায় সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল।

ব্যারিস্টার বড়ুয়া বলেন, অধিগ্রহণ করা ওই জমি ব্যবহার করা না হলে আগের মালিকের ফেরত দেওয়ার শর্ত অধিগ্রহণ চুক্তিতে ছিল।আমরা এর আগে এসে দেখে গেছি, এসব জমিতে মিলের জন্য ইক্ষু চাষ না করে ধান ও তামাক চাষ চলছে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকও এ ধরনের একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেছে। মিল তার চুক্তি ভঙ্গ করেছে।ওই জমি ইজারা দিয়ে সেখানে ধান ও তামাক চাষ চলছে অভিযোগ করে তা ফেরত পেতে দুই বছর আগে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। এক পর্যায়ে তারা ওই জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস শুরু করেন।গত ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। তখন সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়। একচালা ঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়ার পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি সমান করে নিয়েছে।

এদিকে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন,চিনিকলের ওই জমি সাঁওতালদের না হলেও তাদের ব্যবহার করে ‘ভূমিদস্যুরা’ সেগুলো দখল করতে চেয়েছিল।আগের দিন শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, একটি ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ জমি উদ্ধার করে দেওয়ার কথা বলে সাঁওতালদের সংগঠিত করে চিনিকলের জমিতে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করেছে।তবে এই ভূমিদস্যু ও স্বার্থান্বেষী মহল কারা, মন্ত্রী-সচিব কেউই তা খোলাসা করেননি।শিল্প মন্ত্রী ও সচিব অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কথা বললেও গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও ও ওসি দুজনই দাবি করেছেন, তারা কোনো উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেননি। সংঘর্ষের খবর পেয়ে তা থামাতে গিয়েছিলেন।