নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সংলাপের সাফল্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সংশয় প্রকাশে ক্ষমতাসীন দল আসলেই কি চায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপির সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সংশয় থাকাটা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে রিজভী এই প্রতিক্রিয়া জানান। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি অভিযোগ করেছেন, সেখানে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখন তো আমাদের সংশয় দেখা দিয়েছে যে, উনারা আসলে কী চান? কারণ যে আলোচনাটি কালকে (রোববার) বঙ্গভবনে হয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির যে দলটি গেছেন, সেখানে স্বয়ং মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেছেন যে, এটা একটা ভালো উদ্যোগ, গঠনমূলক। এটাকে তিনি সাধুবাদ দিয়েছেন।

রোববার বিকালে বঙ্গভবনে ওই সংলাপ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এক আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, সালিশ মানি, তালগাছটা আমার এই যদি বিএনপির নীতি হয়, তাহলে আজকের সংলাপ সফল হবে না।রিজভী বলেন, আজকে যে বিপন্ন গণতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের শুভযাত্রার একটা ইংগিত, একটা আলোর রেখা আমরা দেখতে পেলাম; এটাকে যদি শাসক দলের সাধারণ সম্পাদকৃ উনার সংশয় আছে, তাল গাছটা আমার চাই। তাহলে কী তাল গাছটা আপনাদের হলেই ঠিক হবে? না, তাল গাছটা সবার হতে হবে, সবার সেখানে সমর্থন থাকতে হবে, আস্থা থাকতে হবে- এটাই বড় বিষয়।

আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপির দায়িত্ব পালন করা রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের যখন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, তখন তারা অনেক ‘জুনিয়র’। এ কারণে ওবায়দুল কাদেরের বিষয়ে তার উচ্চ ধারণা ছিল।আমাদের ধারণা ছিল তিনি বিবেক দিয়ে কথা বলবেন, যা ন্যায়ঙ্গত, যা গণতন্ত্র চলার পথে বিকাশের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে- সেভাবে তিনি কথা বলবেন। সেখানে তার মুখ থেকে এই বিচ্যুতি পাচ্ছি। এটা খুব দুঃখজনক।নির্বাচন কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার ১৩ প্রস্তাবের বিষয় তুলে ধরে রিজভী বলেন, ১৩ দফা প্রস্তাবের কোথাও কী বলা আছে যে বিএনপি সমর্থিত ব্যক্তি, যে বাছাই কমিটি হবে, তার আহ্বায়ক হবেন। বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবীরা ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা সেখানে নির্বাচন কমিশনার হবেন, একথা তো বলেননি।

দেশনেত্রী বলেছেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, দলনিরপেক্ষ, যোগ্য একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি হবেন বাছাই কমিটির আহ্বায়ক এবং অন্যান্য যারা সদস্য হবেন, তারাও হবেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, দলনিরপেক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি। এখানে নীতি-নৈতিকতা-নিরপেক্ষতার ব্যত্যয় কী ঘটল?। বিএনপি যে প্রস্তাবগুলো করেছে, তার মধ্যে কোথাও বিএনপির দলগত কোনো ইচ্ছার প্রতিফলন নেই। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব থাকলে সেটি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।যদি ক্ষমতাসীনদের সৎ ইচ্ছা থাকে, যদি অন্তর্গত তাগিদ তাদের মধ্যে থাকে, তাহলে অবশ্যই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা সার্চ কমিটি হবে এবং একটা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন হবে। এখানে কোনো সংশয়ের কথা বলে, বিতর্কিত কথা বলে তারা যদি যান, তাহলে তারা দিন দিন কলঙ্কিত হবেন, ধিকৃত হবেন, বলেন রিজভী।

রোববার বিএনপির সঙ্গে সংলাপের আগে ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে এই আলোচনার সফলতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, রাষ্ট্রপতি যেখানে বিএনপির প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সেখানে এ ধরনের সংশয় প্রকাশ করা দুঃখজনক। তিনি বলেন, বিএনপির দেওয়া প্রস্তাবে কোথাও কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। সার্চ কমিটি বা নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে দল-সমর্থিত কাউকে করার ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়নি। বরং বিএনপির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন হতে হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ। প্রয়োজনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে আরও যাতে নিরপেক্ষ করা যায়, সে ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বিএনপির এই নেতা বলেন, সংবিধানে নির্দেশনা আছে, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে আইন তৈরি করতে হবে। কিন্তু এখনো তা হয়নি। আওয়ামী লীগ ও সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে, তবে অবশ্যই একটি শক্তিশালী সার্চ কমিটি এবং নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এখানে সংশয়ের কথা বললে আওয়ামী লীগ মানুষের কাছে কলঙ্কিত হবে।রিজভী অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে গণজোয়ারে ভীত হয়েই সরকারি দলের ক্যাডারদের পদচারণা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই সরকারের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্বাচন পুরোনো চেহারায় ফিরে যায় কি না, সেই সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। কারণ, তাদের ঐতিহ্যই হলো ভোট ডাকাতি, ব্যালট ছিনতাই করে ধানখেতে-খালে-বিলে ফেলা, জালভোট প্রদান, ভোটের আগের রাতে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা। ভয়ভীতি দেখিয়ে ও সহিংসতার মাধ্যমে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া।

রিজভী বলেন, আজকেও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে মোট ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রের সব কটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ১৩৭টি অতি স্পর্শকাতর ও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তবে বিএনপির নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা আরও বেশি। সহিংস-সন্ত্রাসময় পরিস্থিতি এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো ধরনের তৎপরতা নেই এবং নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, মনির হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।