ঝিনাইদহে কৃষি ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় ঘুষ ছাড়া কৃষকরা ঋন পাচ্ছেন না। ঘুষের টাকা না দিলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস। কৃষি ব্যাংকের ঝিনাইদহ সদর ও হলিধানী শাখার কয়েকজন আইওর বিরুদ্ধে এই ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষি ব্যাংকের ঝিনাইদহ মুখ্য আঞ্চলিক অফিসের ডিজিএমকে জানানো হলেও কোন প্রতিকার পাননি কৃষকরা।

কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে হলিধানী কৃষি ব্যাংকের আওতাধীন সাধুহাটী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে যান সাংবাদিকরা। ওই গ্রামে ২৪ জনের বেশি কৃষককে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ঋন দেওয়া হয়েছে। টাকা দেননি বলে গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম ও মোজাম ঋন পাননি।

গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক মসলেম মন্ডল অভিযোগ করেন, তিনি এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছেন হলিধানী কৃষি ব্যাংক থেকে। তাকে এই ঋন নিতে আইও বিশ্বেশর বিশ্বাসকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। মসলেম বলেন, আমি নামাজ রোজা করা মানুষ। বয়স হয়েছে। এই শেষ বয়সে ঘুষ দিতে চায় নি। কিন্তু আইও বিশ্বেশর জোর করে তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।

একই গ্রামের মৃত বাহাদুরের ছেলে কৃষক রবজেল জানান, তিনি এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছেন। তাকে ঘুষ দিতে হয়েছে ১২ হাজার টাকা। গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম, মিঠু মালিথা, জাকির মাস্টার, শাহার আলী মালিথা, মোয়াজ্জেদসহ প্রায় ২৪ জন কৃষক ঋন নিতে আইও বিশ্বেশর বিশ্বাসকে ঘুষ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

একই গ্রামের সুন্নত আলী জানান, তিনি ১০৮ শতক জমি দিয়ে ৯০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছেন। তার কাছ থেকে আইও সাড়ে ৯ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, গোবিন্দপুর গ্রামের শের আলী মোল্লার ছেলে হায়দার আলী আইও বিশ্বেশ্বর বিশ্বাসের নিয়োজিত দালাল। তার মাধ্যমেই ঘুষের টাকা লেনদেন হয় বলে এলাকার কৃষকরা দাবী করেন।

গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তিনি ঘুষের টাকা দিতে রাজি হননি বলে আইও বিশ্বেশর তাকে ঋন দেন নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময়কার হলিধানী ব্যাংকের ম্যানেজার প্রণব রঞ্জন বিশ্বাসকে কিষয়টি অবহিত করা হলেও তিনি কোন রকম ব্যবস্থা না নিয়েই ঝিনাইদহ মুখ্য আঞ্চলিক অফিসে বদলী হয়ে আসেন। ঝিনাইদহ মুখ্য আঞ্চলিক অফিসের সদ্য অবসরে যাওয়া ডিজিএম রহমত উল্লাহর কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি কৃষকরা।

এদিকে ঝিনাইদহ কৃষি ব্যাংকের প্রধান শাখার দুই আইও মতিয়ার রহমান ও মসলেম উদ্দীনের বিরুদ্ধেও ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ঝিনাইদহ অগ্রনী চত্বর এলাকার এক কম্পিউটার ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, তিনি ঋন নিতে সদরের প্রধান শাখার আইওকে ঘুষ দিয়েছেন। গান্না এলাকার কৃষক আলীম মুন্সি অভিযোগ করেন তাদের এলাকার অনেক কৃষককে ঋন নিতে ভোগান্তির স্বিকার হতে হয়। গান্নার দায়িত্বে থাকা ব্যাংকের আইও ঘুষ ছাড়া ঋন দেন না। সঠিক কাগজপত্র থাকার পরও টাকার জন্য ভুলত্রুটি ধরে ঘোরানো হয়। এদিকে সিসি লোনধারীরাও আইওদের বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা গ্রহনের অভিযোগ করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে হলিধানী ব্যাংকের আইও বিশ্বেশর বিশ্বাস জানান, বিষয়টি নিয়ে তো আগেই আমরা সাংবাদিকদের সাথে দফা করে ফেলেছি। তিনি ঘুষ গ্রহনে কথা স্বীকার বা অস্বীকারে করেন নি। ঝিনাইদহ মুখ্য আঞ্চলিক অফিসের বর্তমান ডিজিএম গোর দাস ঘোষ জানান, কৃষকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ঋন দেওয়ার কোন বিধান নেই। তিনি অভিযোগকারী কৃষকের নাম ঠিকানা নিয়ে তদন্ত করবেন বলে জানান।

হলিধানী কৃষি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক রেজাউদৌল্লা খান জানান, আমি নতুন এসেছি। আগে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, এখন ঋন কার্যক্রম তেমন একটা নেই। তবে আইও বিশ্বেশর বিশ্বাস কি করেছেন তার অজানা বলেও জানান।

ঝিনাইদহ মুখ্য আঞ্চলিক অফিস সুত্রে জানা গেছে, তাদের অধীনে ১৫টি শাখা আছে। তারা ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৬৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ঋন বিতরণ করেছে। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত তারা ৩৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার ঋন বিতরণ করেছে। অন্যদিকে আদায় হয়েছে ৪০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। বিতরণ ও আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ আদায় হয়েছে বলে ঝিনাইদহ মুখ্য আঞ্চলিক অফিস থেকে জানানো হয়েছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি