দশম সংসদ নির্বাচনের তৃতৗয় বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপিকে কোনো কর্মসূচি পালনে রাজপথে নামতে দেওয়া হবে না বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারির জবাবে বিএনপি বলেছে, জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকলে ক্ষমতাসীন দল এমন কথা বলতো না।৫ জানুয়ারি ও তৎপরবর্তী বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।

গণতন্ত্রের প্রতি সরকারের নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে টালবাহানা করবে না বলে বিশ্বাস দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর।শনিবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে কর্মসূচি পালনে ব্যাপক প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের প্রতি ভোটারবিহীন সরকারের যদি নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ থেকে থাকে, তাহলে বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে কোনো টালবাহানা করবে না।অগতান্ত্রিকভাবে জোর করে ক্ষমতায় বসে থাকাটা আওয়ামী লীগ অতি আবশ্যক নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেজন্য তারা অবৈধ সত্ত্বা নিয়ে ক্ষমতার রঙ্গমঞ্চের দৌরাত্ম্য দেখাচ্ছে। পচাঁত্তরের গতায়ু বাকশালকে নবকলেবরে সুসজ্জিত করে রাষ্ট্র-সমাজে সর্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে আসন পেতে বসেছে।

তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের যদি জবাবদিহি থাকতো, তাহলে ‘দিবো না, করতে দেবো না, বাঁধা দেবো’ এগুলো বলতো না। কেন দেবেন না? দেশটা কী আপনাদের জমিদারি। দেশ তো জনগণের। এই যে দেবো না, করতে দেবো না’- এসব তো দুস্য মনোবৃত্তি, ডাকাত দলের মধ্যে এটা থাকে। এটা কী কোনো সভ্য রাজনৈতিক দল যে দলে নীতি-আদর্শ-দর্শন থাকে, কোনো সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দল হলে এসব কথা বলতো না।আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ শুক্রবার এক দলীয় সভায় বলেন, জনগণ বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দিবে না। বিএনপিকে এই দিবস নিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে রাজপথে নামতে দেওয়া হবে না।

৫ জানুয়ারি ঘিরে ওই দিন সারা দেশে মহানগর ও জেলায় কালো পতাকা মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ এবং ৭ জানুয়ারি ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে ২০১৪ সালের এই দিনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি ও তার শরিকরা। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ২০১৫ সালে বিএনপি গণতন্ত্র হত্যা দিবস এবং আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালনের ঘোষণা দিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিলে তৈরি হয় উত্তেজনা।পুলিশ ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশের পথ বন্ধ করে দিলে খালেদা টানা অবরোধের ঘোষণা দেন। এরপর তিন মাসে নজিরবিহীন সহিংসতা ও নাশকতায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, যার পেছনে বিএনপিকেই দায়ী করে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।দশম সংসদের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চলতি বছর ৫ জানুয়ারি নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করেছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয়কার্যালয়ের সামনে।নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি এগিয়ে আসায় গত ২৮ ডিসেম্বর কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুলকবির রিজভী।রিজভী বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে এই কর্মসূচি পালনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা কর্মসূচি করবোই নিঃসন্দেহে।আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের গণতন্ত্রের প্রতি যদি নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকে, তাহলে আশা করি তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে কোনো টালবাহানা করবে না।

৫ জানুয়ারি ঢাকায় কর্মসূচি না রাখার কারণ জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন, সেই দিন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হবেন। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী রাস্তায় তাকে শুভেচ্ছা জানান, উনি যখন যান। সেই কারণে ওই দিনটি আমরা খালি রেখেছি, সেদিন আমরা ঢাকায় কর্মসূচি করবো না। আমরা ঢাকায় করবো হচ্ছে ৭ তারিখে।আপনারা জানেন অধিকাংশ কর্মসূচি ঢাকায় আমরা আগে-পরে করে থাকি, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও করে থাকে।রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছিন্নভিন্ন করার নির্দয় প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। আমরা বলতে চাই, বিএনপি ঝড়ের মধ্যেও জীবনপদ্মের পাঁপড়ি মেলে ধরতে পারে। নেতা-কর্মীদের আত্মার বেদীমূলে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী দর্শনের যে আলোর প্রদীপ জ¦লে ওঠে, অনির্বাণ তার দ্বীপশিখা।জাতীয়তাবাদী শক্তির বুক থেকে যে রক্ত ঝরে পড়ে আত্মোৎসর্গের গৌরবে সে বুকই টান টান হয়ে ফুলে ওঠে। যে হাত অত্যাচারির শৃঙ্খল ছিন্ন করে গণতন্ত্রহীন, পরাধীন লাঞ্ছিত মানুষকে আত্মমর্যাদা দান করতে পারে, সে হাত ধন্য। ২০১৬ সালের শেষ দিনে ২০১৭ সালে চৌকাঠে দাঁড়িয়ে শুধু এতোটুকুই বলতে চাই, আগামী বছর যেন বর্তমানের বিরাজমান বর্বর দাসত্বের অনাদৃত কুৎসিত রূপ মুছে গিয়ে দেশবাসী যে গণতন্ত্রের বিজয় কেতন নিয়ে নাগরিক স্বাধীনতা ফিরে পায়।সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, এবিএম মোশাররফ হোসেন ও সেলিমুজ্জামান সেলিম উপস্থিত ছিলেন।