নির্বাচন কমিশন (ইসি)গঠনের জন্য গঠিত অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা অ সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ওই দিনই সুপারিশ করা লোকজনের নাম ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সারসংক্ষেপ রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে দেবে অনুসন্ধান কমিটি।এদিকে আগামী মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনাররা।রোববার বিকেলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদ জানান, ইসি গঠনে অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছায়টায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।নির্বাচন কমিশন গঠনে গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন।কমিটিকে ৮ ফেব্র“য়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে ইসি গঠনের জন্য সুপারিশ করা লোকজনের নাম দিতে হবে।

অনুসন্ধান কমিটির একজন সদস্য বলেন, কমিটির সোমবারের বৈঠকে সুপারিশ করা লোকজনের নাম চূড়ান্ত হতে পারে। এরপরই সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তাঁরা। ওই সময় রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ করা লোকজনের নাম ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সারসংক্ষেপ তুলে দেবেন।নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ৮ ফেব্র“য়ারি বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ ও অন্য কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। শুধু পরে যোগদান করায় নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজের মেয়াদ শেষ হবে ১৫ ফেব্র“য়ারি। এ কারণে নিয়মানুযায়ী, বিদায়ের আগের দিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন সিইসি ও অন্য কমিশনাররা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদে যে দুই ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা হবে তাঁদের রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা থেকে, নাকি বাইরে থেকে খুঁজে নেওয়া হবে সে বিষয়ে সার্চ কমিটি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কমিটির একজন সদস্যের মতে, নির্বাচন কমিশনে সিইসির পদটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।এ পদে যাঁকে নিয়োগ দেওয়া হবে তাঁর যোগ্যতা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা সম্পর্কে রাজনৈতিক দল, সুধীসমাজসহ দেশের সর্বস্তরের নাগরিকের জানার আগ্রহ থাকবে। সার্চ কমিটি কতটা নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করল তা-ও সিইসি পদের নাম প্রস্তাব থেকেই মূল্যায়ন করা হতে পারে। এ জন্য স্বাভাবিকভাবেই এ পদের জন্য নাম অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কাবস্থায় রয়েছে সার্চ কমিটি।আগামী মঙ্গলবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনাররাও বিকেল চারটার দিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে ৮ ফেব্র“য়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে ইসি গঠনের জন্য সুপারিশ করা লোকজনের নাম দিতে হবে।

অনুসন্ধান কমিটির একজন সদস্য বলেন, কমিটির সোমবারের বৈঠকে সুপারিশ করা লোকজনের নাম চূড়ান্ত হতে পারে। ওই সময় রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ করা লোকজনের নাম ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সারসংক্ষেপ তুলে দেবেন। ।২০১২ সালের সার্চ কমিটি সিইসি পদে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত নাম গ্রহণ করেনি। সে সময় দলটি তৎকালীন সিইসি ড. এ টি এম শামসুল হুদাকে আরেক মেয়াদে সিইসি রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সার্চ কমিটি প্রস্তাব করে সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার ও সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নাম। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে নিয়োগ দেন। এ বিষয়ে সে সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ গণমাধ্যমকে বলেন, সার্চ কমিটি আমাদের প্রস্তাবিত পাঁচটি নামের একটিও গ্রহণ করেনি। সার্চ কমিটির একজন সদস্য এ বিষয়ে বলেন, কমিটি এ ধরনের কোনো কৌশল অবলম্বনের কথা চিন্তা করছে না। সব দলের প্রস্তাবই কমিটির কাছে সমানভাবে বিবেচ্য। কমিটি প্রস্তাবিত নামগুলো যাচাইয়ের ক্ষেত্রে দলের পরিচয় বিবেচনায় না রাখারই চেষ্টা করছে।গতবারের সার্চ কমিটি দলের প্রস্তাবের বাইরেও অবসরপ্রাপ্ত সব মন্ত্রিপরিষদসচিব ও মুখ্য সচিবের নামের তালিকা ও তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মন্ত্রিপরিষদসচিবের কাছে চেয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে চাওয়া হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিচারকদের নামের তালিকা ও তথ্য। এবারও সে ধরনের কোনো তালিকা ও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে কি নাÑএ প্রশ্নে সার্চ কমিটির ওই সদস্য বলেন, কমিটির কাছে ওই ধরনের তালিকা ও তথ্য রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছে তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত জানার জন্যও এর প্রয়োজন হচ্ছে।প্রসঙ্গত, গত বুধবার সার্চ কমিটির বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, আরো তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কমিটি আশা করছে, ৮ তারিখের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবে। কমিটি যে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে, তাতে আরো নাম সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে। পরদিন বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ১২৫ জনের নাম থেকে ২০ জনের যে সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছিল, সেগুলো আরো পর্যালোচনা করেছে সার্চ কমিটি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সততা, দক্ষতা, দলনিরপেক্ষ ও কার্যক্ষমতার বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। বিশিষ্টজনদের মতামতও পর্যালোচনা চলছে। সেখান থেকে সর্বোত্তম ব্যক্তিদের বাছাই করছে সার্চ কমিটি।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে পর্যায়ক্রমে মোট ৩১টি রাজনৈতিক দলের সংলাপ হয়। প্রথম দিন সংলাপে অংশ নেয় বিএনপি। আর গত ১১ জানুয়ারি বৈঠক করে আওয়ামী লীগ। এক মাসে পাঁচ দফায় এ সংলাপ হয়। রাষ্ট্রপতি গত ২৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি করে দেন। আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ কমিটির আহ্বায়ক। অপর পাঁচ সদস্য হচ্ছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।সার্চ কমিটিকে ১০ কার্যদিবস বা আগামী ৮ ফেব্র“য়ারির মধ্যে তাদের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে। তিন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির কোরাম গঠিত হবে। কমিটি নূন্যপক্ষে একজন নারীসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতিটি পদের বিপরীতে দুটি করে নাম দেবে। সোমবার বিকেল ৫টায় সার্চ কমিটি বৈঠকে বসে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশের জন্য ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করবে।।