বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী ভিসা কর্মসূচি (ডিভি লটারি) বাতিল করার চার বছর পর এবার সবার জন্য এ লটারি পদ্ধতি বাতিলের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন দুই মার্কিন সিনেটর। এ ব্যাপারে একটি আইন পাসের সুপারিশ করেছেন তারা। আর এ দুই সিনেটরকে সমর্থন যুগিয়েছে হোয়াইট হাউস। রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন এবং ডেভিড পারডিউ বিলটি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত আইনের নাম রিফর্ম আমেরিকান ইমিগ্রেশন ফর স্ট্রং এমপ্লয়মেন্ট তথা রেইজ অ্যাক্ট। প্রস্তাবিত আইনটি প্রণিত হলে প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি অর্থাৎ গ্রিন কার্ড প্রদানের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে যাবে।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রথম বছরে অভিবাসনের অনুমতির সংখ্যা কমিয়ে ৬,৩৭,৯৬০ জনে নিয়ে এসেছিল। এবং ‌১০ম বছরে সে সংখ্যা কমে ৫,৩৯,৯৫৮ জনে দাঁড়ায় যা আগের বছরের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম। কেননা, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অভিবাসীর সংখ্যা ১০,৫১,০৩১। প্রস্তাবিত ‘রেইজ অ্যাক্ট’-এর আওতায় অভিবাসনের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে দম্পতি ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের শিশু সন্তানদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি বাদ দেওয়ার কথা সপিারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের আওতায় ডাইভারসিটি ভিসা লটারি বা ডিভি লটারি পদ্ধতি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেন দুই সিনেটর। প্রস্তাবে বলা হয়, ‘ডাইভারসিটি লটারি পদ্ধতি জালিয়াতিতে ভরপুর, এটি কোনও অর্থনেতিক ও মানবিক স্বার্থ পূরণ করে না, এমনকি এর নামটি মধ্যে যে বৈচিত্র্যের কথা বলা হয়েছে তাও আদতে পূরণ হয় না।’ রেইজ অ্যাক্ট পাস হলে ডিভি লটারির আওতায় ইচ্ছামত ৫০ হাজার ভিসা প্রদানের পদ্ধতি বাতিল হয়ে যাবে।

২০১২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড তথা বৈধভাবে থাকার জন্য বৈচিত্র্যময় অভিবাসী লটারি ভিসা তথা ডিভি লটারির আওতায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী অভিবাসীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে এ ভিসা কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দেওয়া হয় এবং তখন থেকে তা এখনও বহাল আছে।

ব্রেইটবার্ট নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিনেটর কটন বলেন, ‘ডাইভারসিটি লটারি পদ্ধতি কোনও মানবিক অথবা অর্থনৈতিক স্বার্থ পূরণ করে বলে দৃষ্টিগোচর হয় না। এটি এমন এক নীতিমালা যার থেকে সুবিধা পাওয়া যায় না এমনকি বৈচিত্র্যকেও প্রতিফলিত করতে পারে না।’ তার মতে, অতীতে যদি ডিভি লটারির কোনও উপযোগিতা থেকেও থাকে তবে এখন আর তা নেই, আর তাই এটির বিলোপ প্রয়োজন।

কটন জানিয়েছেন, তিনি সুরক্ষা ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বৃহৎ পরিসরে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ‘আন্তরিকভাবে কাজ করতে চান’। তিনি বলেন, ‘এতে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়গুলো রয়েছে, তবে এই বিলের ক্ষেত্রে নির্বাহী ব্যবস্থার সমর্থনও আশা করছি।’ কটন আরও বলেন, “মার্কিন শ্রমিকদের জন্য অভিবাসন ব্যবস্থা শুরু করার এখনই সময়। এই ‘রেইজ – আরএআইএসই’ আইন প্রণয়ন করা হলে, আপনার পরিবার ‘মে ফ্লাওয়ার’ জাহাজে চড়ে এখানে আসুক, বা আপনি নাগরিকত্বের শপথই নিয়ে থাকুন না কেন, সকল কর্মজীবী মার্কিনির মজুরি বৃদ্ধি পাবে, যেন তারা একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে পারে।”

উল্লেখ্য, ১৬২০ সালে ‘মে ফ্লাওয়ার’ জাহাজে করে যুক্তরাজ্য থেকে বিদ্রোহীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পারডিউ বলেন, ‘অভিবাসন আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে স্বাভাবিক অভিবাসন ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়াটা মার্কিন জনগণের কর্মসংস্থান ও মজুরি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।’