মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ‘ব্যর্থ’ ২০ কোম্পানির সব ওষুধ এবং ১৪টি কোম্পানির এন্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের এক আবেদনে এর আগে দেওয়া রুলের শুনানি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই রায় দেয়।এসব কোম্পানি গোপনে ওষুধ তৈরি বা বিক্রি করছে কি না এবং কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রতি তিন মাস পর পর আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে রায়ে।আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, ওই ৩৪ কোম্পানির মধ্যে ১১ কোম্পানির লাইনেন্স সরকার ইতোমধ্যে বাতিল করেছে।

তিনটি কোম্পানি বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র‌্যাকটিস (জিএমপি) নীতিমালা মেনে ওষুধ উৎপাদন করার লাইসেন্স আছে তাদের। তাদের এ দাবি খতিয়ে দেখার জন্য পাঁচ সদস্েযর একটি গঠন করে দিয়েছে আদালত।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকারের ঔষধ প্রশাসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগ, বিশেষজ্ঞ কমিটি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে এই কমিটি হবে।২০ কোম্পানির সব ওষুধ উৎপাদন নিষেধাজ্ঞা: এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা লিমিটেড, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ড্রাগল্যান্ড লিমিটেড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ (প্রাইভেট) লিমিটেড, জলপা ল্যাবরেটরিজস লিমিটেড, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ন্যাশনাল ড্রাগ ফার্মা লিমিটেড, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, রিমো কেমিক্যালস লিমিটেড (ফার্মা ডিভিশন), রিড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্টার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, টুডে ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

১৪ কোম্পানির এন্টিবায়োটিক উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা: আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেঙ্গল ড্রাগস অ্যান্ড কেমিক্যালস (ফার্মা) লিমিটেড, ব্রিস্টল ফার্মা লিমিটেড, ক্রিস্টাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, এমএসটি ফার্মা অ্যান্ড হেলথকেয়ার লিমিটেড, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, ফিনিক্স কেমিকেল ল্যাবরেটরি লিমিটেড, রাসা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও সেভ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।ইতোমধ্যে লাইসেন্স বাতিল হয়েছে যাদের: ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ড্রাগল্যান্ড লিমিটেড, জলপা ল্যাবরেটরিজস লিমিটেড, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যালস, ন্যাশনাল ড্রাগ ফার্মা লিমিটেড, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, রিমো কেমিক্যালস লিমিটেড (ফার্মা ডিভিশন), রিড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইউনিটুডে ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

জিএমপি লাইসেন্স আছে বলে যাদের দাবি: আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, এভার্ট ফার্মা লিমিটেড, এমএসটি ফার্মা অ্যান্ড হেলথকেয়ার লিমিটেড।ওষুধ কোম্পানিগুলোর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মওদুদ আহমেদ, আবিদুল ইসলাম ভূইয়া, তানজীব-উল আলম, সাঈদ আহমেদ এমএ হান্নান, একেএম তৌহিদুর রহমান, রিনি নাহরিন, আমিনুল ইসলাম ও পঞ্জজ কুমর কুন্ডু ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যালস ও সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যালসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল বাকী বলেছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবেন।হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের এক আবেদনে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতবছর ৭ জুন ওই ২০ কোম্পানিকে সাত দিনের মধ্যে ওষুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ১৪টি কোম্পানিকে একই সময়ের মধ্যে এন্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।৩৪টি কোম্পানির অনুমোদন বাতিলে ‘বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা’ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং এসব কোম্পানির লাইসেন্স ও এন্টিবায়োটিক উৎপাদনের অনুমোদন কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়।

চার কোম্পানি এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলেও হাই কোর্টের আদেশই বহাল থাকে। হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগের নির্দেশনার পরও ওই ৩৪ কোম্পানির ওষুধ বাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে গতবছর ২৮ জুন খবর দেয় একটি পত্রিকা।মানহীন ৩৪ কোম্পানির ওষুধ এখনও বাজারে’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে ৩১ জুলাই একটি সম্পূরক আবেদন নিয়ে আবারও হাই কোর্টে আসে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।তাদের আবেদনে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ‘ব্যর্থ’ ২০ কোম্পানির সব ওষুধ এবং ১৪টি কোম্পানির এন্টিবায়োটিক সরবরাহ, বিক্রি বন্ধ ও বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।সেই সঙ্গে ৩৪টি কোম্পানির অনুমোদন বাতিলে ‘বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা’ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং এসব কোম্পানির লাইসেন্স ও এন্টিবায়োটিক উৎপাদনের অনুমোদন কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত। সেই রুলের নিষ্পত্তি করেই সোমবার উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে রায় দিল হাই কোর্ট।