ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা ও পুলিশসহ তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেছেন মুফতি হান্নান। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড নাহিদ সুলতানা। তিনি বলেন, ১০০ পৃষ্ঠার ওপরে রিভিউ আবেদনটি আজ করা হয়েছে। এতে মৃত্যুদন্ড থেকে খালাসের আরজিও রয়েছে।

মৃত্যু পরোয়ানা কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে গেলে তা মুফতি হান্নান ও একই দন্ডপ্রাপ্ত শরিফ শাহেদুল আলমকে পড়ে শোনানো হয়। মুফতি হান্নান তখন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করার কথা জানিয়েছিলেন। এ মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি দেলোয়ার হোসেন সিলেট কারাগারে আটক রয়েছেন।কারাসূত্র বলেছে, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে যান ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। ফেরার পথে ফটকের কাছে গ্রেনেড হামলায় আনোয়ার চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন, নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান, জঙ্গি শরিফ শাহেদুল ও দেলোয়ারকে মৃত্যুদন্ড এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। গত বছরের ফেব্র“য়ারিতে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন।

গত ৭ ডিসেম্বর মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির আপিল শুনানি শেষে আপিল বিভাগ খারিজ করেন। গত ১৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগের ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। দন্ডিত দুই আসামিও কারাগারে রয়েছেন।নিয়ম অনুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে হয়। ওই আবেদন খারিজ হলে আসামিরা দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে দন্ডাদেশ কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না। তবে রাষ্ট্র চাইলে দন্ডাদেশ কার্যকরের প্রস্তুতি নিতে পারে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনের মূল হোতা হিসেবে মুফতি হান্নানের নাম উঠে আসে। মুফতি হান্নানের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়।২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় করা মামলারও আসামি মুফতি হান্নান।গত বছরের ০৭ ডিসেম্বর মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৪ সদস্যের আপিল বেঞ্চ। রায়ে এ বিষয়ে আসামিদের আবেদন খারিজ ও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত।

হান্নান ছাড়া মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অন্য দু’জন হলেন- শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপন। বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দাল আপিল না করায় তাদের দ-ও থাকে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা।গত ১৮ জানুয়ারি ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার রিভিউ আবেদন জানালেন হান্নান ও বিপুলের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী।২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়।হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন।

মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত ৫ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদন্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডদেন।নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদ- অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিলও করেন।প্রায় সাত বছর পর গত বছরের ০৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ০৩ ফেব্র“য়ারি শেষ হয়। বিচারিক আদালতের দন্ড বহাল রেখে ১১ ফেব্র“য়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।গত বছরের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ১৪ জুন রায় হাতে পাওয়ার পর ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি হান্নান ও বিপুল। অপর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করেন।গত বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ০৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।