ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সম্পাদক দিয়াজ ইরফানকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি এবং দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তকারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম জোনের সিনিয়র এএসপি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এসেছে। এটা শুধুমাত্র দেখেছি যে হত্যামূলক উল্লেখ আছে। বিস্তারিত এখন বলা যাবে না।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘২৪ জুলাই আমরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছি। শনিবার সিআইডির টিম এসে প্রতিবেদন নিয়ে গেছে। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আদালতের নির্দেশে তদন্তাধীন বিষয়। বিষয়টি আমাদের প্রকাশ করা উচিৎ হবে না।’

গত বছরের ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেইট সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ দিয়াজ আত্মহত্যা করেছে বলে বক্তব্য দিলেও শুরু থেকেই তার পরিবার অভিযোগ করে আসছিল, দিয়াজকে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ প্রথম দফা ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। তারা আত্মহত্যা বলে প্রতিবেদন দিলে সেটি দিয়াজের পরিবার প্রত্যাখ্যান করে। ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দের আদালতে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ঠিকাদার আবুল মনসুর জামশেদ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়।

আদালত সরাসরি মামলা গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তের আদেশ দিয়ে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে সিআইডি দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেয়। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর কবর থেকে দিয়াজের মরদেহ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে ঢামেকের ফরেনসিক টিম। সাত মাস পর এসেছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। দিয়াজ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক।

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে দিয়াজ সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু হলের সম্প্রসারণ ও নতুন কলা অনুষদ ভবনের সম্প্রসারণের ৯৫ কোটি টাকা টেন্ডার নিয়ে চবি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এক পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান সভাপতি আলমগীর টিপু এবং আরেক পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন দিয়াজ ইরফান। তারা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

গ্রুপিংয়ের জের ধরে গত ৩০ অক্টোবর দিয়াজের বাসায় ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। এ ঘটনার পর থানায় মামলা করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হন দিয়াজের মা। বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোন সহায় হয়নি তার।