লন্ডনের একটি হাসপাতালে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডান চোখে সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ম্যাডামের সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে, এখন তিনি সুস্থ আছেন।রিজভী জানান, গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে লন্ডনের মুরফিল্ড হসপিটাল বিএনপি চেয়ারপারসনের চোখের অস্ত্রোপচার হয়।এ সময় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছিলেন।

দেশবাসীসহ দলের নেতা-কর্মীদের কাছে চেয়ারপারসনের সুস্থতার জন্য দোয়া চান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগ দুটি মামলার বিচার কার্যক্রম চলাকালীন গত ১৫ জুলাই চোখ ও পায়ের চিকিৎসা করতে যুক্তরাজ্যে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করা বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় উঠেছেন তিনি।লন্ডনে তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান, তারেকের মেয়ে জাইমা রহমান, প্রয়াত আরাফাত রহমানের স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান একই বাসায় আছেন।এর আগে ২০১৫ সালে চিকিৎসার জন্য দুই মাস যুক্তরাজ্যে ছিলেন খালেদা জিয়া।

দলের অভ্যন্তরে আর কূটনৈতিক মহলে বিএনপি সম্পর্কে থাকা ‘ভুল’ ধারণা ঠিক করতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খালেদা জিয়ার এবারের লন্ডন সফরের শুরু থেকেই সেই চেষ্টার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।লন্ডন বিএনপির একটি সূত্র জানায়,দীর্ঘদিন ধরে দলের ভেতরে নীতি-নির্ধারণের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যেসব ভুল বার্তা বা গুঞ্জন চালু রয়েছে সেসবেরও কূল-কিনারা করতে চান খালেদা জিয়া ও তারেক রাহমান। নির্বাচনি রূপরেখার সঙ্গে সঙ্গে সহযোগী সংগঠনসহ জেলায় জেলায় কমিটি ও নেতৃত্ব নিয়ে যে স্থবিরতা বিরাজ করছে, তারও সুরাহা চান তারা। খালেদা জিয়া ও তারেকের নেতৃত্বেই বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের অভ্যন্তরে থাকা ভুল ধারণা এবং বিএনপি সম্পর্কে কূটনৈতিক মহলে থাকা ভুল ধারণা ভাঙতে চাইছেন তারা। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মহিদুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, এটি মূলত খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সফর। দেশে ছেলে, ছেলের বৌ বা নাতনিদের কেউই তার সঙ্গে থাকেন না। পরিবারের সব সদস্য যেহেতু লন্ডনে, সে কারণেই কিছুটা সময় এখানে কাটাতে এসেছেন তিনি। আর মা-ছেলে যেহেতু দুজনেই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাই রাজনৈতিক আলোচনা হবেই।জানা গেছে,খালেদা জিয়ার এবারের লন্ডন সফরকে ঘিরে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছেন তারেক রহমান নিজেই। তিনি চাইছেন না, এ সফরের সবকিছু পাবলিক হোক। এ কারণে লন্ডনে তার একান্ত কয়েকজন ঘনিষ্টজন ছাড়া অনেক প্রভাবশালী বিএনপি নেতাও এ সফরের অনেক বিষয়ে অবগত নন। অনেক দায়িত্বশীল নেতারাও খবর পাচ্ছেন ঘটনা ঘটার পর। তারাও সংবাদ মাধ্যমে মুখ খুলতে চাইছেন না দলীয় শীর্ষ নেতার বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে।সূত্রগুলো জানায়, লন্ডনে তারেক রহমানের কিংসস্টোনের বাড়িতে এখন সম্পূর্ণ পারিবারিক আবহে সময় কাটছে খালেদা জিয়ার।খালেদা জিয়ার একজন সফরসঙ্গী প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গতবারের সফরে ম্যাডামের এক চোখে অপারেশন হয়েছিল। এবার অন্য চোখের অপারেশন করবেন চিকিৎসকরা। তবে এখনও অপারেশনের তারিখ পাওয়া যায়নি। যুক্তরাজ্য বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়,তারেক রহমান ব্যক্তিগতভাবে সফরের সবকিছু দেখভাল করছেন। ১৬ জুলাই হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে তারেক রহমানের ব্যক্তিগত লেক্সাস গাড়িতে করে লন্ডনে যাত্রা শুরু করেন খালেদা জিয়া। ওই গাড়িটিতে ঠ ৪ ইঘচ লেখা প্রাইভেট নম্বর প্লেটটি নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করাতেই কিনেছেন তারেক রহমান।খালেদা জিয়ার গতবারের ৬২ দিনের যুক্তরাজ্য সফরে কূটনৈতিক পর্যায়ে, প্রটোকল বা ব্যক্তিগত পর্যায়েও কোনও বৈঠকের কথা জানা যায়নি। এবারও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়েও কোনও বৈঠকের আয়োজন তারা করতে পারেননি বলে একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কায়সর এম আহমেদ বলেন, আসলে ম্যাডাম ব্যক্তিগত ও চিকিৎসার জন্যই লন্ডনে এসেছেন। এবারের সফরে কূটনৈতিক পর্যায়ে কোনও বৈঠকের আয়োজন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,আগে চিকিৎসা শেষ হোক। ম্যাডাম অসুস্থ। সুস্থ হওয়ার পর বৈঠকের কোনও খবর হলে আপনারা জানতে পারবেন।