দেশের একমাত্র মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বর্ষা মৌসুম চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাগুলোয় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলের প্রভাবে হালদার ভাঙ্গন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছিল। নদীর ভাঙ্গনে হাটহাজারী ও রাউজান অংশের হালদা পারের সহ¯্রাধিক পরিবারের বসতভিটা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। ভাঙ্গনের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে দুই উপজেলার লাখ লাখ বাসিন্দার বেশ শংঙ্কায় দিনাতিপাত করে আসছিল।

অবশেষে দুই উপজেলায় হালদার ভাঙ্গন ঠেকাতে উভয় তীরের ভাঙ্গন হতে বিভিন্ন এলাকা রক্ষাকল্পে ২১২ কোটি ৭৯২ লাখ টাকার তীর সংরক্ষণ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হালদা নদীর ভাঙ্গনের তীব্র ঝুঁকিতে থাকা ওই দুই উপজেলার হালদার তীরবর্তী বসবাসরতদের দীর্ঘ দিনের শংঙ্কার অবসান ঘটবে। পশাপাশি ওই এলাকা গুলোর প্রায় ১০ হাজার ৭১০ কোটি টাকার সম্পদ নদীর ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে এবং প্রকল্প এলাকার সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পের কাজটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে পরিচালিত হবে এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) এটি বাস্তবায়ন করবে। সূত্র জানায়, হালদা তীববর্তী এলাকা হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ, ধলই, গুমানমর্দ্দন, লাঙলমোড়া, ছিপতলী, গড়দুয়ারা, মাদার্শা, বুড়িশ্চর, ও রাউজান উপজেলার উরকিচর, পশ্চিম গুজরা, বিনাজুরী রাউজান পৌরসভা, গহরা, নোয়াজিজপুরসহ ৩৯টি পয়েন্টে হালদা নদী ভাঙনরোধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া তীর রক্ষা প্রকল্পটির আওতায় ১২ দশমিক ১২০ কি.মি. নদীর তীর সংরক্ষণ, ৬ কি.মি. মাটির বাঁধ নির্মাণ, ১৫ কি.মি. মাটির বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ, ৪ হাজার ৮ কি.মি. বিদ্যমান রাস্তা কাম বাঁধের উচ্চতা উন্নীতকরণ, ৫৫০ মিটার ফ্লাড ওয়াল (প্রতিরোধে দেয়াল) নির্মাণ এবং ১ দশমিক ৪০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা।
এ ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এম.পি সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় হালদা নদীর দুই তীরে ভাঙনসহ শত শত একর ফসলি জমি, ক্ষেত-খামার ও বাড়ি ঘর রক্ষা পাবে। এছাড়া উভয় তীরে প্রতিরক্ষা, বাঁধ নির্মাণ পুনরাকৃতি এবং রাস্তা উচুঁকরণ এর মাধ্যমে প্রকল্প এলাকা ভাঙন ও জোয়ারের পানি প্রবেশ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে আজ শনিবার (৯ ডিসেম্বর) হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট এলাকায় হালদা নদীল উভয় তীরের ভাঙ্গন হতে বিভিন্ন এলাকা রক্ষাকল্পে তীর সংরক্ষন কাজ শীর্ষক প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করবেন পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এম.পি। এতে আরো উপস্থিত থাকবেন রাউজান থেকে নির্বাচিত রেল মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব এবি এম ফজলে করিম চৌধুরী এম.পি, বোয়ালখালী থেকে নির্বাচিত সরকারী হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মইন উদ্দীন খাঁন বাদল এম.পি। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান সরকার ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
চলতি বছরের ৪ এপ্রিল ঢাকার শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ২৩ তম সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) এটি বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে।