কাঁচা চামড়ার দাম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, এতে করে চামড়া পাচারের আশঙ্কা বাড়বে। এ অবস্থায় আগামী একমাস সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)।

শনিবার (২৫ আগস্ট) নগরীর ধানমন্ডিতে বিটিএ অফিসে চামড়ার চলমান সংকট নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলমে বিটিএ’র সভাপতি শাহিন আহমেদ এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন।শাহিন বলেন, চামড়া শিল্পে ক্রান্তিকাল চলছে। বেশিরভাগ ট্যানারি উৎপাদনে নেই। গত বছরের ৪০-৪৫ শতাংশ চামড়া এখনও অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। চামড়া শিল্পের এমন দশার নেপথ্যে রয়েছে সরকারি সহায়তা না থাকা আর পুঁজি সংকট। বিটিএ সভাপতি আরও বলেন, সাভারে পরিকল্পিত ট্যানারি শিল্প গড়ে না উঠার দায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক)। ভুল তথ্য দিয়ে ট্যানারি মালিকদের সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছিলো। এখানে যে বিনিয়োগ করেছিলো ট্যানারি মালিকরা তা মাঠে মারা গেছে। বার বার সময় বাড়িয়েও এ পরিকল্পিত শিল্প নগরীর কাজ শেষ না হওয়ার দায় বিসিকের।আগামী বছরের জুনেও কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের কাজ শেষ হবে না বলে শঙ্কা ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের। কাঁচা চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করে বিক্রি করতে আসায় দাম পাচ্ছেন না মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।

চামড়ার দাম নিয়ে ট্যানারি মালিকরা কোনো সিন্ডিকেট করেননি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির দাবি, পাড়া-মহল্লায় রাজনৈতিককর্মী বা ক্লাবগুলো সিন্ডিকেট করেছে।পরবর্তী সময়ে ট্যানারিগুলো বেঁধে দেওয়া দামেই চামড়া কিনবে বলেও জানিয়েছে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ ছাড়া এ বছর কাঁচা চামড়া পাচারের আশংকায় সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেয় সংগঠনটি।এ বছর কাঁচা চামড়ার দরপতনে, কোরবানির পশুর চামড়ার কম দাম পেয়েছে সাধারণ মানুষ। আবার অনেক ফড়িয়া এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীও বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া কিনে এনে লোকসানে তা বিক্রি করেছে আড়ৎগুলোতে। দামের অস্থিরতার জন্য ট্যানারি মালিকরা দুষছেন পাড়া-মহল্লার সিন্ডিকেটকে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, এখানে পাড়া-মহল্লাভিত্তিক সিন্ডিকেট হয়। এখানে দেখা যায়, রাজনৈতিক কর্মীবাহিনী, সামাজিক ক্লাবভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন- এলাকাভিত্তিক চামড়ার দাম তারা কন্ট্রোল করে। এখানে তারা যদি ২০০-৩০০ টাকা করে ক্রয় করে, ট্যানারি মালিকদের এখানে কী করার আছে?তবে পরবর্তী সময়ে যখন ট্যানারিগুলো কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করবে, তখন বেঁধে দেওয়া দাম মাথায় রেখেই চামড়া কেনা হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। চামড়া ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে চিন্তিত না হন। কারণ, দুই থেকে তিন মাস চামড়া সংগ্রহ করে রাখা যায়। আমরা মনে করি, যদি তাঁরা চামড়াটা সঠিকভাবে সংগ্রহ করে রাখেন তাঁরা উপযুক্ত দাম পাবেন এবং পাশাপাশি আমাদের বেঁধে দেওয়া দামের মধ্যে আমরা ক্রয় করব। আমরা এর কম কোনোভাবেই দেব না।

এক মাস অন্তত সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হোক, যাতে কঠোরভাবে চামড়া পাচার রোধ করা যায়’, যোগ করেন শাহিন আহমেদ। চামড়া শিল্পে বর্তমান অস্থিরতার জন্য বিসিককে দায়ী করে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে অব্যবস্থাপনা চলতে থাকলে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানায় সংগঠনটি।ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বলেন, সার্বিক অর্থে পরিবেশবান্ধব শিল্পনগরীর আশায় সেখানে গিয়েছি ওখানে, আসলে আমরা যে বিনিয়োগ করেছি, সেটা ভুল বিনিয়োগ হিসেবে আমরা মনে করি করা হয়েছে।সাভারে স্থানান্তর, নিজেদের পুঁজি সংকট এবং আন্তর্জাতিক বাজারের দামসহ নানা কারণে এ বছর চামড়ার দাম কম নির্ধারণ করা হয়েছিলো বলেও জানায় ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন।