গাজীপুরে বকেয়া বেতন ও ভাতা পরিশোধের দাবীতে দ্বিতীয় দিনেও (শুক্রবার) এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এদিন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দিনব্যাপী প্রায় ৯ ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। জেলা শহরে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কটি দীর্ঘসময় অবরোধের কারনে জরুরী সেবার যানবাহনসহ হাসপাতালগামী রোগী ও স্থানীয়দের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এদিকে বৃহষ্পতিবার সড়ক অবরোধকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের হামলায় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও ম্যাজিষ্ট্রেট আহত হওয়ার ঘটনায় শুক্রবার থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত দেড়শ’জনকে আসামী করা হয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের লক্ষীপুরা এলাকাস্থ (ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে) স্টাইল ক্র্যাফ্টস লিমিটেড নামের গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা তাদের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের অবশিষ্ট ৩৫ভাগ করে ৭০ ভাগ বকেয়া বেতন ও নবেম্বর মাসের বেতন, ওভারটাইম ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ছুটির ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে বৃহষ্পতিবার দুপুরের পর হতে শুরু বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে তারা বিকেল সাড়ে ৩টা হতে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত প্রায় ৬ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারখানার মালিক শ্রমিকদের নবেম্বর মাসের বেতন আগামী ৭ জানুয়ারি এবং ডিসেম্বর মাসের বেতন ১৯ জানুয়ারি পরিশোধের ঘোষণা দেন। এছাড়াও শ্রমিকদের পাওনা ওভারটাইম ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ছুটির ভাতাসহ অন্যান্য পাওনাদি আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে পরিশোধের ঘোষণা দেন। কিন্তু আন্দোলনরত শ্রমিকরা ওই সিদ্ধান্ত না মেনে উত্তেজিত হয়ে উঠে। এসময় তারা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে জিএমপি’র অতিরিক্ত উপ কমিশনার রেজোয়ান আহমেদ, গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ওয়াসিউজ্জামান ও শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সমীর চন্দ্র সূত্রধরসহ ৫/৭জন আহত হয়। পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ও লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আন্দোলনরত শ্রমিকরা এলাকা ত্যাগ করলে প্রায় ৬ঘন্টা পর ওই সড়কে পুনঃরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

এদিকে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে বৃহষ্পতিবার রাতে কর্তৃপক্ষ শুক্রবার ও শনিবার কারখানা ছুটি ঘোষণা করেন। ওই দুই দিন ও রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি শেষে সোমবার কারখানা খোলার নোটিশ গেইটে টানিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকালে কাজে যোগদিতে কারখানায় এসে শ্রমিকরা ওই নোটিশ দেখতে পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এসময় শ্রমিকরা কারখানা গেইটে জড়ো হয়ে তাদের পাওনাদি পরিশোধ ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা সকাল সোয়া ৮টার দিকে কারখানার পার্শ্ববর্তী সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে গাছের গুঁড়ি ফেলে দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই সড়কের উভয়দিকে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। জেলা শহরে প্রবেশের প্রধান সড়কটি দীর্ঘসময় অবরোধ থাকায় হাসপাতালগামী অসুস্থ্য ব্যক্তিসহ স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সমীর চন্দ্র সূত্রধর জানান, শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে শ্রমিকদের সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করেনি। শ্রমিকরা বেতন পরিশোধের ব্যাপারে কারখানার মালিকের উপস্থিতি ও তার সঙ্গে আলোচনার দাবী জানায়। এসময় মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার উদ্যোগ নেয় পুলিশ। মালিক পক্ষের সঙ্গে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রমিক প্রতিনিধিদের কয়েক দফা আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে শ্রমিকদের নবেম্বর মাসের ৫০ভাগ বেতন আগামী সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) ও বাকী ৫০ভাগ ৭ জানুয়ারি, ডিসেম্বর মাসের বেতন ২৭ জানুয়ারি, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের ৩৫ভাগ করে ৭০ ভাগ বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য পাওনাদি জানুয়ারি হতে এপ্রিল মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে পরিশোধের ঘোষনা দেন কারখানার মালিক। এছাড়াও শনিবার হতে কারখানা খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়। মালিক পক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে প্রায় ৯ঘন্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে শ্রমিকরা সড়কের অবরোধ তুলে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং সড়কে পুনঃরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। দ্বিতীয় দিনে (শুক্রবার) দিনভর সড়ক অবরোধ অব্যাহত থাকায় যাত্রী ও পথচারীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

জিএমপি’র সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহষ্পতিবারের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১৪০ থেকে ১৫০জনকে আসামী করে শুক্রবার থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে বেআইনী জনতাবদ্ধে সরকারী রাস্তা অবরোধ করতঃ সরকারী কাজে বাঁধা এবং সরকারী কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালিয়ে আহত করার অপরাধে দায়ী করা হয়েছে।

আন্দোলনরতরা জানায়, শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতন ৬৫ভাগ করে পরিশোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। কারখানায় প্রায় সাড়ে ৫হাজার শ্রমিক রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা তাদের পাওনা সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের অবশিষ্ট ৩৫ভাগ করে ৭০ ভাগ বকেয়া বেতন ও চলতি নবেম্বর মাসের বেতনসহ অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধের দাবী জানিয়ে আসছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এতে নানা টালবাহানা করতে থাকে। একাধিকবার তারিখ নির্ধারণ করেও শ্রমিকদের পাওনাদি পরি শোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ নির্ধারিত বৃহষ্পতিবারেও বেতন ভাতা পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে।