গাজীপুরে অপহরণের পাঁচ দিন পর তিন মাস বয়সের এক শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। অপহরণের এ ঘটনায় জড়িত দু’বোন সহ একই পরিবারের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, নেত্রকোনা জেলার বারহাট্রা থানার বাউশি গ্রামের মজনু মিয়ার স্ত্রী আল্পনা ওরফে রুবিনা (২৫)। রুবিনার বড় বোন ও একই জেলার দূর্গাপুর থানার হাবিআলী গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী ফাতেমা (৩৫) এবং ফাতেমার ছেলে রফিকুল ইসলাম (১৯)। উদ্ধার হওয়া শিশুর নাম ফাতেমা খাতুন (৩ মাস)। সে ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর থানার বিশ্বনাথপুর গ্রামের নুর ইসলামের কন্যা।
পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানাধীন শিরিরচালা এলাকায় জনৈক মাজহারুল ইসলামের বাড়িতে স্ত্রী, তিন মাসের সন্তান ফাতেমা ও শাশুড়িকে নিয়ে দুই মাস যাবত ভাড়া থেকে এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন নুর ইসলাম। তার স্ত্রী স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকুরী করেন। গত দেড় মাস পূর্বে (২০ মার্চ) আসামী আল্পনা ওরফে রুবিনা ওই দম্পতির পাশের ঘর ভাড়া নেন। তিনি শিশুটির পরিবারের সঙ্গে নানা কৌশলে মিশে সখ্যতা তৈরি ও তাহাদের বিশ্বস্ততা অর্জন করেন।
তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো গত ২ এপ্রিল শিশুটিকে তার নানীর কাছে রেখে নুর ইসলাম ও তার স্ত্রী কাজে চলে যান। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শিশুটি কান্নাকাটি শুরু করে। এসময় প্রতিবেশী আল্পনা ওরফে রুবিনা শিশুকে কোলে নিয়ে শিশুটির জন্য দুধ গরম করে আনতে তার নানীকে রান্না ঘরে পাঠায়। এ সুযোগে আসামী রুবিনা কৌশলে শিশুকে তার নিজের রুমে নিয়ে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে গ্রীল ছাড়া পেছনের জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে শিশুটিকে অপহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় অপহৃত শিশুটির বাবা জয়দেবপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, পুলিশ সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নিজেদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের পূর্বের শিশু চক্রের সদস্যদের সঙ্গে সিসি টিভি ফুটেজে পাওয়া অপহরণকারীর ছবি (মুখ শনাক্তকরণ সফটওয়ারের মাধ্যমে) চিহ্নিত করে। পরে পুলিশ শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দিবাগত গভীর রাতে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন মুলাইদ পশ্চিম পাড়া এলাকার জনৈক সুবেদ আলীর ভাড়াকৃত বাসায় অভিযান চালিয়ে অপহৃত শিশু ফাতেমাকে উদ্ধার করে। এসময় এ ঘটনায় জড়িত আল্পনা ওরফে রুবিনা (২৫), তার বড়বোন ফাতেমা (৩৫) এবং ফাতেমার ছেলে রফিকুল ইসলামকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়। বিকেলে উদ্ধারকৃত শিশুকে আদালতের মাধ্যমে তার বাবা-মা’র কাছে ফিরিয়ে দেয়।
তিনি আরো জানান, প্রায় ৭ বছর আগে বিয়ে করলেও গ্রেফতারকৃত রুবিনা নিঃসন্তান। সে নিজে লালন পালন করার জন্য শিশুটিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে শিশুকে লালন পালন করতে না পারলে অন্যত্র বিক্রি করে দিতো বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ড চেয়ে বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, ডা. নন্দিতা মালাকার ও মোঃ রবিউল ইসলাম, সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি দেলোয়ার হোসেন, জয়দেবপুর থানার ওসি মাহাতাব উদ্দিন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল মমিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
