নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা গেলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দেশবাসী, রাজনৈতিক দল এবং বিশ্ববাসীর মধ্যে অন্য রকম একটি অনুভূতি কাজ করবে। পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ট্রায়াল হিসেবে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

শনিবার (২০ মে) দুপুরে গাজীপুরের মহানগরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে গাসিক নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসারদের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রিজাইডিং অফিসারদের উদ্দেশ্য সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা আসনেও প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দেওয়া হয়েছে। আমরা যা বলছি সেটি পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে। সুনির্দিষ্ট কোনো ফর্মুলা নেই। আপনারা প্রটোকল ব্যাগে অবশ্যই মোবাইল ও চার্জার রাখবেন। কোনো অবস্থায় ফোন যেন বন্ধ না থাকে। নারী কর্মকর্তারা কিভাবে রাতযাপন করবেন সেটি আপনারা পরিকল্পনা করবেন। আপনারা এই নির্বাচনকে জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করবেন।

নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, বিভিন্ন কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত হতে পারে, বাতিলও হতে পারে। যেমন বৈদ্যুতিক বিভ্রাটের কারণে কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনগুলো একটাও চলছে না, হঠাৎ করে ঝড় শুরু হয়ে গেছে, তখন নির্বাচনটা বন্ধ হয়ে যাবে। সেখানে প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই। আবার এমনও হতে পারে আপনার কেন্দ্রে একজন দূর্বৃত্ত প্রবেশ করে আপনাদের মারধর করে ওখান থেকে বের করে দিয়ে তারা সিল মারে। যদিও এখানে যেহেতু ইভিএম-এ ভোট হচ্ছে তাই এখানে জোর করে ব্যালটে সিল মারার সুযোগ নেই। আবার এমন হতে পারে কেউ কেন্দ্রটি দখল করে বলে আপনারা এখানে থাকুন কিন্তু আমার লোকজন গোপন বুথে অবস্থান করবে এবং যেই ভোট দিতে যাক তাকে জোর করে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করবে। কোন সমস্যা কোথায় উদ্ভব হবে, তা অপনার আমার কারো জানা নাই। সমস্যা হতে পারে। তার সমাধানও আছে। যখন যে ঘটনাই ঘটুক আপনারা সঙ্গে সঙ্গে সে সমস্যার কথা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাবেন। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন ভোট কেন্দ্র’র সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ/ছবি দেখেও কেন্দ্রের সবকিছু দেখভাল করবে। আপনার দায়টা কখন? আপনি যদি কারো প্রতি অনুরক্ত হয়ে কারো অপকর্ম করতে সহায়তা করেন, তা হলে আপনার ভয়ের বিষয়টি আছে। এছাড়া কারো কোন ভয় নাই। কারো কারণ দর্শানোর নোটিশ হতেই পারে। কারণ দর্শানো মানেই কারো শাস্তি হয়েছে তা কিন্তু নয়। কোন কারণে কারো কারণ দর্শানোর নোটিশ হতেই পারে। তারজন্য ভয়ের কিছু নেই। কেন্দ্রে কোন ঘটনার তদন্তে আপনার বক্তব্য নেয়া হবে, সিসিটিভির ফুটেজ দেখা হবে এবং সাক্ষীদের বক্তব্য নেয়া হবে। এতে যদি আপনার সম্পৃক্তা না থাকে তা হলে আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই।

তিনি আরো বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের সবকিছুর কেন্দ্র ব্যক্তি হচ্ছেন কেন্দ্র পরিচালনার প্রিজাইডিং অফিসারবৃন্দ। কোন পদ্ধতিতে আপনার কেন্দ্রের ফলাফল সুষ্ঠভাবে ঘোষণা করতে পারবেন তারজন্য সুনির্দিষ্ট কোন ফর্মূলা দেয়া যাবে না। কারণ কেন্দ্রের অবস্থান, কোন এলাকায় তা অবস্থিত এরকম অনেক কিছুর উপর নির্ভর করবে ওই কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে আপনার কারণেই। নির্বাচন কমিশনের আইন মেনে কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট গ্রহনের জন্য সকল কর্মপরিকল্পনা আপনাদেরই করতে হবে। যেহেতু ইভিএমএ ভোট গ্রহণ করা হবে। তাই ভোট গণনার জন্য অতিরিক্ত ঝামেলা নেই। কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোন অন্যায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িত না থাকেন, তাহলে আপনাদের নির্বাচনে কাজ করতে কোন ধরণের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই।

সভায় গাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ফরিদুল ইসলাম প্রিজাইডিং অফিসারদের উদ্দেশ্যে বলেন, নির্বাচন চলাকালে কেন্দ্রের সব ক্ষমতা আপনাদের হাতে থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কিংবা অন্য কেউ আপনাদের ফোর্স করার ক্ষমতা রাখবে না। ভৌগোলিক কারণে পাঁচটি জোন করা হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসারদের এসব জোন থেকে নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহ করতে হবে। ভোট গননা শেষে সেখানেই বুঝিয়ে দিতে হবে। পরে ফলাফল শিট রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছে দিতে হবে। এছাড়া এক কপি নিকটস্থ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সাবমিট করতে হবে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর, আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান প্রমুখ।